আরুশি খৈতানের (নাম পরিবর্তিত) যখন সাত বছর বয়েস সেই সময় অদ্ভুত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয় তাঁকে। বাড়ির সামনে লুকোচুরি খেলার সময় সে একটি ভাজাভুজির দোকানে লুকিয়ে পড়ে। মালিক তাকে দেখতে পেয়ে দেখে গোপনাঙ্গে হাত দিতে থাকে। কোনও মতে সেখান থেকে পালিয়ে আসে সে।আরুশির কথায়, 'সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনাটি ঘটে এর পর। আমি আমার বাবা-মাকে ঘটনাটি জানাই। তাঁরা আমার কথা শুনতেই চায়নি। উল্টে আমাকে বকা-ঝকা করে চুপ করিয়ে দেন।'প্রায় রকম অভিজ্ঞতা কলেজ ছাত্রী গার্গীর (নাম পরিবর্তিত)। একদিন টিউশন থেকে বাড়ি ফিরছিল সে। হঠাৎ এক ব্যক্তি এসে অদ্ভুত ভাবে স্পর্শ করল। গার্গী বলে, 'সেই সময় আশেপাশে অনেক ছিলেন, কিন্তু কেউ কোনও কথা বলল না।' এই রকম অভিজ্ঞতা শিকার কলকাতা অনেক মেয়েরাই।বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং কলেজ পড়ুয়াদের নিয়ে সম্প্রতি ইউনিসেফ আয়োজন করেছিল একটি 'সেফ সিটি' নামক কর্মশালার। সেই কর্মশালা উঠে পড়ুয়াদের নানা ধরনের যৌন হেনস্থার অভিজ্ঞতা। এই কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী পড়ুয়ারা জানালেন, 'নিরাপদ স্পর্শ' ও 'খারাপ স্পর্শ' বলতে কী বোঝায় সে সস্পর্কে তাঁদের বাবা-মা সচেতন নয়। এমন কী অভিভাবকরা সত্য গোপন করেন। তাঁরা শিশুর কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন না। এমন কী অপরাধকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াও এড়িয়ে যান। উল্টে তারা শিশুকে ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দেন। সেই ঘটনার প্রভাব শিশুদের মনের গভীরে পড়ে। তারা চুপ করে যায়।কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের মতে, এই ধরনের ঘটনা এড়াতে বাবা-মার উচিত শিশুদের কথা শোনা। তাদের বোঝার চেষ্টা করা। এর সঙ্গে প্রয়োজন স্কুল যৌনশিক্ষার।অংশগ্রহণকারী মতে স্কুলে যৌনশিক্ষা চালু হলে পড়ুয়ারা একে অপরের শরীর নিয়ে কৌতূহল থেকে জন্ম নেওয়া অনেক প্রশ্নের উত্তর পাবে।পশ্চিমবঙ্গে ইউনিসেফের প্রধান মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, 'এই কর্মসূচিতে কলেজ পড়ুয়ারা তাঁদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। শহরকে নিরাপদ করতে, এই ধরনের উদ্বেগের সমাধান করতে কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া নেওয়া যায় তা নিয়ে নিজেদের পরিকল্পনা দিয়েছেন। স্কুলে যৌনশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন।'