সন্দীপ দে এবং প্রিয়দর্শী মজুমদার
প্রতিদিন সকালে ঘুম ভেঙে ওঠা থেকে শুরু করে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় পর্যন্ত সারাদিনই আমরা কিন্তু অজ্ঞাতসারেই বি🧔জ্ঞানকে ব্যবহার করে চলি। এটা কি কখনও ভেবে দেখেছেন? তাই আপনি কিন্তু নিজের অজান্তেই একজন বিজ্ঞানী। কী ভাবছেন? আমরা ঠাট্টা করছি? আসুন তাহলে একটু বিশদে দেখি।
আচ্ছা, বলুন দেখি ঘুম ভেঙে উঠে আপনি ঠিক কী করেন? নিশ্চয়ই দাঁত মাজেন? ব্রাশের ধাক্কা মেরে দাঁত থেকে ময়লা আর জমে থাকা খাবারের টুকরোগুলꦰোকে ছিটকে ফেলতে থাকেন আর সঙ্গে সঙ্গে নিউটনের গতিসূত্রের প্রয়োগ ঘটাতে থাকেন। তারপর চা খান ফুঁ দিয়ে ঠান্ডা করে (তাপীয় সূত্র মেনে)। তাই তো?
যদি শীতকাল হয়, তবে তো আপনি এরপর ঠান্ডা জলে গরম জল মিশিয়ে (ক্যালরিমিতির সূত্রানুসারে) চান করে বসে পড়লেন খেতে (প্রয়োজনমতো কার্বোহাইড্ৰেট, প্রোটিন আর ফ্যাট)। চিবিয়ে চিবিয়ে খাবারগুলো নরম করে (স্থিতিস্থাপকতার সূত্র মেনে) তারপর গেলেন। এবার ধোপদুরস্তღ পোশাকে বেরিয়ে পড়লেন চাকরি বা ব্যবসার কাজে। গল্পটা কি জমে গিয়েছে মনে হচ্ছে?
নিউটনের তৃতীয় গতিসূত্র মেনে প্রতি🧸ক্রিয়া বলের সাহায্য নিয়ে হেঁটে হেঁটে এসে পৌঁছলেন বাসস্ট্যান্ডে। এখানে কিন্তু আপনি কাজে লাগিয়ে ফেলেছেন একদম সময়-দূরত্বের অঙ্ক। কত দূরে বাস স্টপ আর আপনি কি গতিবেগে হাঁটেন, তারপর রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম মাথায় রেখে সেই হিসাবেই রোজ বাড়ি থেকে বের হন। ধরা যাক, এরপর এসে গেল আপনার রুটের বাসটি। বাসে ভিড়, সিট নেই, অগত্যা দাঁড়িয়ে থাকা। দুই পায়ের অল্প জায়গা দিয়ে পুরো শরীরের ওজনটা কাজ করতে থাকায় পায়ে কষ্ট হতে থাকে, তাই খুঁজতে থাকেন সিট, যাতে শরীর ওজনটা সিটের বেশি জায়গার উপর ছড়িয়ে দিয়ে একটু আরাম পান। কিন্তু চট করে মিলছে না সিট, অফিস টাইম। এরইমধ্যে বাস ক্রমাগত বিভিন্ন স্টপেজে দাঁড়াচ্ছে আবার চালু হচ্ছে, তাই আপনিও সঙ্গে সঙ্গে গতি জাড্য আর স্থিতি জাড্যের নিয়ম মেনে সামনে আর পিছনে দুলেই চলেছেন।
এই করতে করতেই এসে গেল আপনার অফিস| আবার প্রতিক্রিয়া বলের সাহায্যে হেঁটে হেঁটে এসে অফিসের গেটে বায়োমেট্রিক মেশিন (ইলেকট্রনিক বায়ো-সেন্সর কারিগরিতে তৈরি) পাস করে ঢুকলেন। এখানে তো সব কিছুই বিজ্ঞান। এসি (তাপগতিবিদ্যার সূত্র মেনে চলে), ওয়াটার পিউরিফায়ার (রসায়নবিদ্যার রিভ🎉ার্স অসমোসিস বা বিপরীত আস্রাবন পদ্ধতিতে কাজ করে), ফটোকপি মেশিন (তড়িৎ ও আলোকপরিবাহিতা মেনে কাজ করে), কম্পিউটার, প্রিন্টার, স্ক্যানার (ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্স এর প্রয়োগ) আরো কত কিছু| সারাদিন এগুলোর সাথে ধস্তাধস্তি (মাঝে কিছু খেয়ে শরীরে ক্যালোরি ইনটেকটা সেরে নিলেন) করে ক্লান্ত হয়ে আবার ক্রিয়া, প্রতিক্রিয়া, গতি জাড্য, স্থিতি জাড্য সামলাতে সামলাতে বাড়ি ফেরা। পথে একটু মুদিখানা আর বাজার সেরে নিলেন| সেখানেও নিখুঁত টাকা পয়সার হিসাব কষা।
বাড়ি ফিরে একটু বসে শরীরের ঘামটা বাষ্পায়ন হতে দিলেন কিছুক্ষণ। তারপর শরীরের তাপীয় সাম্য ধরে রাখার জন্য চানটা সেরে ফেললেন। ফের কিছু ক্যালোরি ইনটেক করলেন|।এবার কি গান শুনবেন? বেশ বেশ। কানে লাগিয়ে ফেলুন হেডফꦜোন আর হেডফোন এর তারটা গুঁজে দিন আপনার মিউজিক সিস্টেমে| ব্যস! তড়িৎশক্তি সরাসরি শব্দশক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে আপনার কানের পর্দায় ধাক্কা মারতে থাকবে। সেই সিগন্যাল গিয়ে সরাসরি পৌঁছাবে আপনার মস্তিষ্কে| সঙ্গে সঙ্গে ডোপামিন নাম এক রাসায়নিকের ক্ষরণ শুরু হয়ে যাবে আর আপনি হারিয়ে যাবেন অনাবিল আনন্দের জগতে।
কিছুক্ষণ গান শুনে যদি ভাবেন, একটু টিভি দেখবেন তবে এখানেও সেই বিজ্ঞান। তড়িৎশক্তি একইসঙ্গে আলোকশক্তি আর শব্দশক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে চলেছে। যদি একা থাকেন তবে তো আপনাকে এবার হাত পুড়িয়ে রান্নাটাও সেরে নিতে হবে। নিখুঁত একজন রসায়নবিদের মতো তেল, নুন, বܫিভিন্ন মসলা সঠিক অনুপাতে মিশিয়ে এইবেলা সেরে নিন রাতের রান্নাটাও। নিন আর কী? ডিজিটাল ইলেক্ট্রনিক্স প্রযুক্তি বা মোটর এবং গিয়ার প্রযুক্তিতে চলা দু'রকমের ঘড়িই আপনাকে জানান দিচ্ছে যে অনেকটা রাত হয়েছে। সামান্য কিছু সুষম খাবার খেয়ে নিন। এবার একটু পছন্দের পড়াশোনা করতে পারেন (আলোর প্রতিফলনকে কাজে লাগিয়ে)| এরপর শোয়ার পালা| শরীরটাকে ঢেলে দিন বিছানায়| আপনার ওজন এখন সবথেকে বেশি ক্ষেত্রফল দিয়ে কাজ করছে, তাই শরীরের প্রতি একক ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়া বল সব থেকে কম। তܫাই শান্তি। ঠিক এই কারণেই পাশ ফিরে না শুয়ে চিৎ হয়ে শুলে বেশি আরাম লাগে।
ভোর থেকে রাত 🐻একদিকে যেমন আপনি আধুনিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন গ্যাজেট ব্যবহার করলেন, তেমনই কিন্তু নিজেও হাতে কলমে নিজের অজাౠন্তেই বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক সূত্রের প্রয়োগ ঘটালেন| তাই নিজেকে একজন বিজ্ঞানী ভেবে নিয়ে আস্তে আস্তে ঘুমের সাগরে তলিয়ে যেতে থাকুন।
** লেখকদ্বয় ব্যারাকপুর রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কলেজের ইলেকট্রনিক বিজ্ঞান 𒉰বিভাগের অধ্যাপক। লেখকদের মতামত ব্যক্তিগত। তা হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার নয়।