‘বেশি কাটাছেঁড়ায় যাব না’, ‘বেশি ভাবতে চাই না আমরা’ - নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারত হেরে যাওয়ার পরে রোহিত শর্মা সেই মন্তব্যটা করলেও টিম ইন্ডিয়ার সত্যিই কাটাছেঁড়ার প্রয়োজন আছে। কারণ ১২ বছর এবং ১৮ সিরিজ পরে ঘরের মাঠে প্রথমবার টেস্ট সিরিজ হারলেও শেষ কয়েক বছরে মোটেও ‘অপরাজেয়’ ছিল না ভারত। বরং ‘ফাটল’-টা অনেকদিন আ♎গে থেকেই দেখা যাচ্ছিল। এমন একাধিক ম্যাচে ভারত জিতছিল, যেগুলির ফলাফল টিম ইন্ডিয়ার বিপক্ষেও যেতে পারত। বারবার এক ভুল হচ্ছিল। লোয়ার-মিডল ও লোয়ার অর্ডারের ব্যাটিং (ঋষভ পন্ত, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রবীন্দ্র জাদেজা, অক্ষর প্যাটেল), বোলারদের ভালো পারফরম্যান্সের সুবাদে সেটা চাপা পড়ে যাচ্ছিল। কিন্তু বেঙ্গালুরু এবং পুণেতে সেটা না হওয়ায় আর সেই ‘ফাটল’-টা ঢেকে রাখা গেল না। ১৮ পার হতেই ভেঙে চুরমার হয়ে গেল অহমিকা।
স্পিন খেলতে না পারা
আর সবথেকে চওড়া যে ‘ফাটল’ তৈরি হয়েছে, সেটা হল স্পিন সামলাতে না পারা। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৬ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ঘরের মাঠে স্পিনের বিরুদ্ধে ভারতীয় ব্যাটারদের গড় ছিল ৬৩.৩৬। যা ২০২১ সাল থেকে কমে দাঁড়ায় ৩৭.৫৬ (বাংলাদেশ সিরিজের আগে পর্যন্ত)। অর্থাৎ অতীতে যেমন বিদেশি দল ভারতে এসে স্পিনের জালে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে যেত এবং ভারত বড় রান তুলত, সেই ধারাটা পালটে গিয়েছে শেষ তিন বছরে। উলটে স্পিনে😼র বিরুদ্ধেই নাকানি-চোবানি খেয়েছে ভারত।
পুণে♐ টেস্টের মধ্যেই সেই বিষয়টি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন নিউজিল্যান্ডের প্রাক্তন ক্রিকেটার তথা ধারাভাষ্যকার সাইমন ডুল। নিউজ১৮-তে তিনি বলেন, ‘ভারত স্পিনের বিরুদ্ধে ভালো খেলতে পারে বলে মনে করা হলেও সেটা পুরোপুরি ভ্রান্ত ধারণা। ওরা বাকিদের মতোই হয়ে গিয়েছে। সচিন (তেন্ডুলকর), (সৌরভ) গঙ্গোপাধ্যায় বা (রাহুল) দ্রাবিড়দের দিন চলে গিয়েছে। যেই একজন ভালো স্পিনার আসবে, ওমনি ওরা বিপদে পড়ে যাবে। আমরা আইপিএলেও সেটা দেখেছি। বল ঘুরতে শুরু করলেই ওরা চাপে পড়ে যায়। আর অভিযোগ করতে শুরু করে দেয়।’
ডুল য✨ে কথাটা বলেছেন, সেটা যে একেবারেই ভুল নয়, তা পরিসংখ্যান চোখ বোলালেই বোঝা যাবে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৬-২০ সালের মধ্যে ভারতে স্পিনের বিরুদ্ধে প্রথম সাত বিদেশি ব্যাটারের গড় ছিল ৩০.১। আর ভারতীয়দের ক্ষেত্রে সেটা ৬৩.৩৬ ছিল। ২০২১ সাল থেকে বিদেশি ব্যাটারদের ক্ষেত্রে সেটা কমে দাঁড়িয়েছে ২৪.০৫। আর ভারতীয়দের অবস্থা তো ভয়াবহ হয়েছে। ভারতের প্রথম সাত ব্যাটারের গড় কমে ৩৭-তে নেমে গিয়েছে।
নিজেদের অক্ষমতা জেনেও র্যাঙ্ক টার্নার তৈরি
স্পিন যে তাঁরা খেলতে পারেন না ঠিকমতো, সেটা ভারতীয় টিম ম্যানেজেন্ট বুঝতে পারত না নাকি বুঝেও ব🐭ুঝত না, সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। কারণ ইন্দোর হোওক বা পুণে- র্যাঙ্ক টার্নার তৈরি করে নিজেদের বিপদ ডেকে এনেছে ভারত। ২০২৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ইন্দোরে নয় উইকেটে হেরে গিয়েছিল টিম ইন্ডিয়া। প্রথম ইনিংসে ১০৯ রান করেছিল। আর দ্বিতীয় ইনিংসে কেঁদে-ককিয়ে ১৬৩ রান তুলতে পেরেছিল।
একই ছবি ধরা পড়েছে পুণেতে। বেঙ্গালুরুতে হারের𒆙 পরে বিশেষভাবে ‘অর্ডারি’ স্পিনিং পিচের পথে হেঁটেছিল টিম ইন্ডিয়া। আর সেই ‘অর্ডারি’ পিচে প্রথম ইনিংসে ১৫৬ রান এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ২৪৫ রানে অল-আউট হয়ে গিয়েছে ভারত। নিউজিল্যান্ডও কো💧নও ইনিংসে ৩০০ রানের গণ্ডি পার করেনি। কিন্তু সেটার দরকারও ছিল না। তাতেই ভারতকে ১১৩ রানে হারিয়ে দিয়েছেন কিউয়িরা।
রোহিত ও বিরাটের ভয়াবহ ফর্ম
দেশের মাটিতে টেস্টে একেবারেই ফর্মে নেই রোহিত এবং বিরাট কোহলি। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ভারতের মাটিতে বিরাটের গড় ছিল ৭২.৪৫। যা ২০২০ সাল থেকে কমে ৩২-র কাছে এসে ঠেকেছে। আর রোহিতের গড় ৮৮.৩৩ থেকে কমে ৩৭-র কাছে দাঁড়িয়েছে♈।
আর স্পিনের ൲বিরুদ্ধে গড় দেখলে তো কার্যত আঁতকে উঠতে হবে। ২০১৬-২০ সাল পর্যন্ত স্পিনের বিরুদ্ধে বিরাটের গড় ছিল ১০৩.২৩। যা ২০২০ সাল থেকে কমে ৩০-র কাছাকাছি চলে এসেছে। আর ২০২১ সাল থেকে ভারতের মাটিতে ২৩টি টেস্ট ইনিংসে ২০ বার স্পিনারের বলে আউট হয়েছেন। অন্যদিকে, ওই সময়ের মধ্যে রোহিতের গড় ৯২.৮৩ থেকে কমে ৪৪.১৩-তে ঠেকেছে।
বাঁ-হাতি স্পিনারের সামনেই থরহরিকম্প
২০২২ সাল থেকে ঘরের মাঠে বাঁ-হাতি স্পিনারদের সামলাতে রীতিমতো নাকানিচোবানি খেয়েছে ভারত। তাই পুণেতে মিচেল স্যান্টনার যে ১৩টি উইকেট পেয়েছেন, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাঁ-হাতি স্পিনারদের বিরুদ্ধে র🥃োহিত আউট হয়েছেন আটবার। বিরাট সাতবার আউট হয়েছেন। শুভমন গিল আউট হয়েছেন ছয়বার। পুণেতেও বিরাট দু'বারই আউট হয়েছেন স্যান্টনারের বলে। গিলেরও স্পিন খেলার টেকনিকে প্রচুর ফাঁক ধরা পড়েছে।