বিধানসভা নির্বাচন দোরগোড়ায়। ফের বঙ্গ সফরে আসছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। চলতি মাসের শেষে মতুয়া–গড় ঠাকুরনগরে শাহি সভা হওয়ার কথা। আর তার আগেই মতুয়াদের সঙ্গে কথা বলতে, মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক দখলে রাখতে দলের বরিষ্ঠ নেতা ও মন্ত্রীদের তাঁদের কাছে পাঠাচ্ছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল।জানা গিয়েছে, ৩০ জানুয়ারি হিন্দু সংখ্যালঘু মতুয়াদের গড় ঠাকুরনগরে জনসভা করবেন অমিত শাহ। আর তার আগেই ২২ জানুয়ারি, শুক্রবার নেতাদের একটি বিশেষ দল ঠাকুরনগরে পাঠাচ্ছে তৃণমূল। সেই দলে থাকবেন সাংসদ সৌগত রায়, মন্ত্রী ব্রাত্য বসু ও উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। দলীয় সূত্রে খবর, উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত চারটি বিধানসভা কেন্দ্রে যেখানে মতুয়াদের আধিপত্য রয়েছে, সে সব এলাকায় যাবেন তাঁরা।এ ব্যাপারে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘একটি দল গঠন করা হয়েছে। চারটি বিধানসভা কেন্দ্রের মতুয়াদের সঙ্গে আমরা বৈঠক করব। তাঁদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বহু পুরনো। সেখানে মতুয়া সম্প্রদায়ের নেতা ও সদস্যদের সঙ্গে আমরা কথা বলব।’ রাজ্যের অন্তত ৭টি লোকসভা কেন্দ্রের ৭০টি বিধানসভা এলাকায় ছড়িয়ে রয়েছে মতুয়ারা। তার মধ্যে ৫টি বিধানসভা আসনে এই মতুয়া সম্প্রদায়ই শেষ কথা। তাঁদের ভোটই চূড়ান্ত।২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি–কে সর্বতভাবে সমর্থন করেন মতুয়ারা। সেবার বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রে মতুয়াদের যুব নেতা শান্তনু ঠাকুর বিজেপি টিকিট পেয়ে তাঁরই আত্মীয় তৃণমূল প্রার্থী মমতাবালা ঠাকুরকে পরাজিত করেন। লোকসভা ভোটের আগে মতুয়া সম্প্রদায়ের মাঝেই পশ্চিমবঙ্গে প্রথম সভা করে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাঁদের দীর্ঘদিনের দাবি স্থায়ী নাগরিকত্বের, সেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মোদি। কিন্তু সম্প্রতি এই ইস্যুতে বিজেপি তথা কেন্দ্রের তরফে কোনও পদক্ষেপ করতে না দেখে সম্প্রতি হতাশা প্রকাশ করেছিলেন মতুয়াদের সাংসদ শান্তনু ঠাকুর।আর এই সুযোগের সদব্যবহার করে মতুয়াদের সঙ্গে তৈরি হওয়া দূরত্ব সরিয়ে আরও কাছে চলে আসে তৃণমূল। এমনকী, শান্তনু ঠাকুরকে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য ডাকও দেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। আর তার পরই শান্তনু ঠাকুরের মান ভাঙানোর জন্য এবং তাঁর অভিযোগ শুনতে এগিয়ে আসেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়র মতো বিজেপি–র শীর্ষ নেতৃত্ব।খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলছিলেন, ‘মতুয়াদের কিছু দাবি রয়েছে। ইতিমধ্যে সেই দাবিগুলির কিছু পূরণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আমাদেরও এই সম্প্রদায়ের কাছে কিছু আবেদন রয়েছে। তবে কেবল অমিত শাহ আসছেন বলে এটিকে পাল্টা বৈঠক হিসেবে দেখা উচিত নয়। মতুয়াদের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক রয়েছে এবং আমরা শুধু সেই সম্পর্ককে ফের সক্রিয় করতেই সেখানে যাচ্ছি।অবশ্য মতুয়াদের গড়ে অমিত শাহয়ের এই সফর এই প্রথম নয়। গত বছর ৬ নভেম্বর উত্তর ২৪ পরগনায় এক মতুয়া পরিবারে মধ্যাহ্নভোজ সেরেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এদিকে, বিজেপি–র সর্বভারতীয় সহ সভাপতি মুকুল রায় বলেন, ‘যে কেউ মতুয়াদের কাছে যেতে পারে। এবং যা কিছু করতে পারে। কিন্তু মতুয়াদের জন্য যা অতি প্রয়োজনীয় ছিল তা ইতিমধ্যে করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।’