রাজ্য়ের অন্তত তিনটি ক্ষেত্রকে ভরসা করতেন বিজেপি নেতৃত্ব। একদিকে রাজবংশী অধ্যুষিত এলাকা,মতুয়াগড় ও জঙ্গলমহল। এই তিন এলাকা থেকেই গত লোকসভা ভোটে ভালো ফল করেছিল বিজেপি। ২১এর বিধানসভা ভোটেও বিজেপি মোটের উপর ভালো ফল করেছিল এই তিন এলাকায়। কিন্তু ২০২৩ পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফল বের হতেই দেখা যাচ্ছে এই তিন এলাকাতেই বড় ধাক্কা খেল গেরুয়া শিবির। কেন? একদিকে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে গত পঞ্চায়েত ভোট থেকেই বিজেপির শক্তিশালী সংগঠন। গত লোকসভা, বিধানসভা ভোটেও রাজবংশী ভোটব্যাঙ্ক ছিল বিজেপির পাশেই। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটে সব ওলটপালট হয়ে গেল। উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতেও বড় ধাক্কা বিজেপির। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকের মতে, গত কয়েকবছর ধরে এলাকায় বিজেপি নেতাদের জনসংযোগ তলানিতে যায়। অন্যদিকে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মতো প্রকল্প মহিলাদের মধ্য়ে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। আলাদা রাজ্যের ধুয়ো তুলে বাজার গরম করার চেষ্টা করলেও বাস্তবে রাজবংশী ভোট ব্যাঙ্ককে অটুট রাখতে কাজের কাজ কিছু করতে পারেননি অধিকাংশ বিজেপি নেতা। তারই মাসুল গুনল বিজেপি। সেই সঙ্গে উত্তরবঙ্গে কিছুক্ষেত্রে সার্বিকভাবে উন্নয়নের প্রতিফলন হয়েছে ভোটবাক্সে। বিজেপির ফলাফল ভালো হয়নি ঝাড়গ্রামেও। তবে কি এবার আদিবাসীরাও মুখ ফেরাচ্ছে বিজেপির দিক থেকে? কার্যত কুড়মি আন্দোলনও দাগ কাটতে পারল না ভোটে। একের পর এক পঞ্চায়েতে ভালো ফল করল তৃণমূল। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এক্ষেত্রেও সেই জনসংযোগ আর সরকারি সুবিধা বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার ফসল ঘরে তুলল তৃণমূল। স্থানীয় সূত্রে খবর, বিজেপির নেতারা রক্ষী নিয়ে এলাকায় ঘুরে বেরিয়েছেন। কিন্তু জনতা সরে গিয়েছে তাঁদের পাশ থেকে। তার জেরেও বড় ধাক্কা। অন্যদিকে মতুয়াগড়েও জোর ধাক্কা খেয়েছে বিজেপি। তবে গত বিধানসভাতে পরিস্থিতি এমন ছিল না। ২০২১ এর বিধানসভা ভোটে নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জ, রানাঘাট দক্ষিণ, রানাঘাট উত্তর-পূর্ব এবং উত্তর-পশ্চিম, চাকদা, হরিণঘাটা এবং কল্যাণী বিধানসভা তৃণমূলের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিল বিজেপি। এ বারের পঞ্চায়েত ভোটে উলটো ফল হল।তবে কি মুখ ঘোরালো মতুয়াগড়? এনিয়ে বিজেপিকে কটাক্ষ করেছেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, ‘নবজোয়ার যাত্রার সময় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে হেনস্থা করা হয়েছিল। তার জবাব দিয়েছে মতুয়ারা। এটাই হওয়ার ছিল।’নবজোয়ার যাত্রায় ঠাকুরবাড়ি চত্বরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায় ও বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের ক্ষমতার লড়াই দেখেছিল গোটা বাংলা। তখন থেকেই প্রশ্ন উঠেছিল পঞ্চায়েতের লড়াইতে কে শেষ হাসি হাসবে? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, সিএএ, এনআরসি নিয়ে এর আগে বিজেপি যে হাওয়া তুলেছিল তা নিয়ে বিশ্বাস হারিয়েছেন মতুয়াদের অনেকেই। তারও প্রতিফলন হয়েছে পঞ্চায়েত ভোটে।