১৯’এর লোকসভায় পিছিয়ে পড়া ওয়ার্ডগুলো ধরে রাখতে এবার নয়া রণকৌশল তৃণমূলের।ওই ওয়ার্ডগুলো থেকে দলকে লিড এনে দিতে পারলেই, তৃণমূল কাউন্সিলরদের ১ কোটি টাকা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা করলেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।বৃহস্পতিবার তৃণমূল ভবনে হওয়া এক বৈঠক থেকে এই ঘোষণা করলেন ফিরহাদ হাকিম। তাঁর ঘোষণা, যে যে ওয়ার্ডগুলোয় তৃণমূল কংগ্রেস পিছিয়ে রয়েছে, সেখান থেকে যদি কোনও কাউন্সিলর লিড এনে দিতে পারেন, তাহলে তাঁকে এই প্রাইজমানি উপহার হিসাবে দেওয়া হবে। উল্লেখ্য, ২০২১—এর বিধানসভা নির্বাচনে জয় নিশ্চিত করতে চাইছে তৃণমূল। তাই এদিন পিছিয়ে পড়া ওয়ার্ডগুলোকে ধরে রাখতে এই রণকৌশল নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। আর তৃণমূলের এই ঘোষণাকে পাল্টা আক্রমণ করতে ছাড়েনি বিরোধীরা।ফিরহাদ হাকিমের এই প্রাইজমানি ঘোষণাকে ‘খুনের সুপারি’ দেওয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন বিজেপি নেতা শমিক ভট্টাচার্য। এমনকী, সমালোচনা করেছেন সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তীও। তিনি বলেন, ‘ববির ওইভাবে টাকা দেওয়ার টোপ বেআইনি। কার টাকা দেবেন? কমিশনের উচিত ব্যবস্থা নেওয়া।’শুক্রবার প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। সেকারণে ভোটের রণকৌশল ঠিক করতেই এদিন এই বৈঠকে বসে তৃণমূল নের্তৃত্ব। বৈঠকে যোগ দেন তৃণমূলের রণনীতি গুরু প্রশান্ত কিশোরও। তৃণমূল ভবনে হওয়া এদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অভিষেক বন্দোপাধ্যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সী, ফিরহাদ হাকিম, অরুপ বিশ্বাস—সহ অন্যান্য নের্তৃত্ব। সেখানেই পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ঘোষণা করেন, ২০১৯—এর লোকসভা ভোটে যেসব ওয়ার্ডে দল পিছিয়ে ছিল, সেখানে যদি এবার তৃণমূল কংগ্রেস লিড এনে দেয়, তাহলে এলাকা উন্নয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলরকে ১ কোটি টাকা দেওয়া হবে।উল্লেখ্য, এদিনের বৈঠকে কাউন্সিলরদের নির্দেশ দেওয়া হয়, ৭ মার্চ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আসার আগেই পুরো শহর 'বাংলা নিজের মেয়েকে চায়' এই ব্যানার ও তৃণমূলের পতাকায় মুড়ে ফেলতে হবে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ফ্ল্যাগ—ফেস্টুন লাগাতে হবে। নিজেদের শক্তির পরিচয় দিতে হবে। দল সকলের ওপর নজর রাখছে। কাউন্সিলররা যেন পুরো শক্তি দিয়ে প্রচার করতে নামেন। প্রত্যেক কাউন্সিলরকে ৫ হাজার করে রিপোর্ট কার্ড দেওয়া হবে। সেগুলি বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিলি করে দিতে হবে।অবশ্য তৃণমূলের এই প্রাইজ মানি’র ঘোষণা নতুন কিছু নয়।এর আগেও লোকসভা ভোটের সময় ওয়ার্ড পিছু ৫ হাজারের বেশি লিড এনে দিতে পারলে ১ কোটি টাকা পুরস্কার' ঘোষণা করেছিলেন তৎকালীন আসানসোল মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি। সেইসময় যার তুমুল সমালোচনা করেছিলেন সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়। যদিও পরিবর্তনের রাজনীতির রঙমঞ্চে সেই জিতেন্দ্র তিওয়ারি এখন তৃণমূল ছেড়ে পদ্ম শিবিরে যোগ দিয়েছেন। এখন একই ছাতার তলায় রয়েছেন তৎকালীন যুযুধান দুই প্রতিপক্ষ।তবে ১৯’র লোকসভার পর ২১—এর বিধানসভাতেও তৃণমূলের এই প্রাইজমানির ঘোষণা অব্যাহত থাকল। যদিও তৃণমূলের এই ঘোষণাকে কটাক্ষের সুরে বিঁধেছে বিরোধিরা।বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য চাঁচাছোলা ভাষায় কটাক্ষ করে বলেন, ‘তৃণমূল কোনও রাজনৈতিক দল নয়। এটা তো ভোটে জেতানোর কন্ট্রাক্ট দেওয়া হচ্ছে।দেউলিয়াপনা কোন পর্যায়ে পৌঁছলে, তবে একটা দল এভাবে কন্ট্রাক্ট দিতে পারে! সাধারণত খুন করার জন্য যেমন সুপারি দেওয়া হয়, এটাও তেমন।’ অন্য দিকে, এই ঘটনার সমালোচনা করেছেন সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তীও।