সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে জট কাটল ত্রিশঙ্কু জোটের। বাম-কংগ্রেস ও ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফের) জোট প্রক্রিয়া সম্পন্ন হল। কয়েকদিন ধরে দফায় দফায় বৈঠকের পর বৃহস্পতিবার আসনরফা হল তিন দলের মধ্যে। শুক্রবারের মধ্যে তা ঘোষণা করার সম্ভাবনা রয়েছে।আসন সংখ্যার নিরিখে ঐকমত্যে পৌঁছল তিন জোট শরিক শিবির। তবে সামান্য সংশয় এখনও রয়ে গিয়েছে যে, কে কোন আসনে লড়বে। জোট শিবিরের নেতৃত্ব সূত্রে জানা গিয়েছে, মোট ২৯৪ আসনের মধ্যে ১৬৫, ৯২, ৩৭, এই বিভাজনে জোটের তিন শরিকের রফা হয়েছে। অর্থাৎ ত্রিশঙ্কু জোটের সবচেয়ে বড় শরিক বামফ্রন্ট লড়বে ১৬৫ আসনে। নিজেদের দাবি মতো কংগ্রেস পাচ্ছে ৯২টি আসনই। অন্য দিকে, আব্বাস সিদ্দিকির আইএসএফ লড়বে ৩৭ আসনে। বাম শরিকদের মধ্যে বৃহত্তম দল সিপিএম একাই লড়বে ১৩০ আসনে। দ্বিতীয় বৃহত্তম বাম দল ফরওয়ার্ড ব্লক লড়বে ১৮ আসনে। আরএসপির ভাগে পড়েছে ১১টি আসনে। সিপিআই প্রার্থী দেবে ন'টি আসনে।ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সভাপতি নরেন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘আমরা আশ্বাস দিচ্ছি যে, ১৮টি আসনে লড়ব।’ আরএসপির রাজ্য সভাপতি মনোজ ভট্টাচার্য বলেন, ‘ আমাদের দলকে ১১টি আসন বরাদ্দ করা হয়েছে। যেখানে গত নির্বাচনে ১৯টি আসন ছিল।’ তবে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম আসনটি দাবি করেছে আইএসএফ। উল্লেখ্য, এই আসনে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দোপাধ্যায়ও লড়ছেন।আসন সংখ্যা নিয়ে রফা হলেও কে কোন আসনে লড়বে, এটা নিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে বাম ও আইএসএফের দ্বন্দ্ব এখনও অব্যাহত। জানা গিয়েছে, মালদহ, মুর্শিদাবাদে জোট শরিকদের আসন না ছাড়ার ব্যাপারে একপ্রকার গোঁ ধরে বসে আছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী। শুধু তাই নয়, উত্তরবঙ্গেও আইএসএফকে বেশি আসন না ছাড়ার ব্যাপারে অনড় অধীরবাবু। কিন্তু আইএসএফ চাইছে তাদের ভাগে থাকা ৩৭টি আসনের মধ্যে যে কোনও তিনটির পরিবর্তে মালদহে অন্তত একটি এবং উত্তরবঙ্গের অন্য দুই জেলায় একটি করে আসন তাঁদের ছাড়া হোক। এ নিয়ে ফের কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন আইএসএফ নেতারা।অন্য দিকে, বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লকের সঙ্গে কংগ্রেসের বিবাদ পুরুলিয়া নিয়ে। পুরুলিয়া জেলা কংগ্রেসের সভাপতি নেপাল মাহাতোর ওই জেলায় অন্তত চারটি আসনে প্রার্থী দিতে চান। তাতে আপত্তি নেই বামেদের। কিন্তু কোন আসনে কারা প্রার্থী দেবে, সেটা নিয়েই চলছে দ্বন্দ্ব। বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক বাঘমুণ্ডি আসনটিতে প্রার্থী দিতে চায়। অথচ ওই কেন্দ্রে নেপাল মাহাতো নিজেই বিধায়ক। ওই আসনটি নিয়ে এখনও দুই শিবিরের মতভেদ চলছে। তবে সবটাই আজকের মধ্যেই মিটে যাবে বলে আশা জোট শিবিরের।ওদিকে বিজেপির তরফে শুভেন্দু অধিকারীরও নন্দীগ্রাম আসনে লড়তে চলেছেন বলে কার্যত নিশ্চিত। নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাের উপস্থিতিতে বিজেপির কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটি শুক্রবার রাত ৯টা ২০ মিনিট নাগাদ প্রথম দু'দফার ৬০টি আসনের জন্য প্রার্থী বাছাইয়ের বিষয়ে আলোচনা করেছে। তার মধ্যে নন্দীগ্রামের আসনটিও রযেছে।ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন শুভেন্দু অধিকারীও।২০১৬ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস ও সিপিএম জোট করেছিল ।৯২টি আসনে কংগ্রেস দাঁড়িয়েছিল। তার মধ্যে ৪৪টি আসন জেতে তারা। যদিও সিপিআইএম ১৪৮টি কেন্দ্রে লড়ে মাত্র ২৬টি আসনে জেতে। তবে ২১১টি আসন জিতে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল।