ভোটের মুখে ফের নাগরিকত্ব ইস্যু নিয়ে সরগরম হয়ে উঠল রাজ্য রাজনীতি। ঠাকুরবাড়িতে গিয়ে নাগরিকত্ত্বের ‘ট্রাম্প কার্ড’ ফেললেন বিজেপি প্রার্থী রাহুল সিনহা। মতুয়াদের নাগরিকত্ব কার্ড দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। রাহুলের দাবি নিয়ে ক্ষুব্ধ মতুয়ারা। তাঁদের দাবি, অসমে বিজেপি সরকার রয়েছে। তাহলে সেখানে কেন নাগরিকত্ব দেওয়া হচ্ছে না? মতুয়াদের ভোট কব্জা করতে বিজেপি মিথ্যাচারের রাজনীতি করছে।শুক্রবার ঠাকুরনগরে গিয়ে রাহুল দাবি করেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘ব্যাগড়া’ না—দিলে, এত দিনে এ রাজ্যে নাগরিকত্ব আইন প্রয়োগ হয়েই যেত। যদি ওরা চাইত, নাগরিকত্ব কার্ড বিলি-বণ্টন এত দিনে হয়ে যেত। বিজেপি ক্ষমতায় এলে এক মাসের মধ্যে নাগরিকত্বের কার্ড দেওয়া হবে। তাঁর আরও দাবি, উদ্বাস্তুরা নাগরিকত্ব পেয়েই গিয়েছেন। শুধু নাগরিকত্ব কার্ডটুকু হাতে পাওয়া বাকি। বিজেপি এ রাজ্যে ক্ষমতায় এলে তা-ও এক মাসের মধ্যে হয়ে যাবে।’ রাহুল বিজেপির জাতীয় কর্ম সমিতির সদস্য। কিন্তু এ হেন মন্তব্য খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্যের উল্টো সুরে বলেই ব্যাখ্যা করছে তৃণমূল। তাদের মতে, ক্রমশ মতুয়া অধ্যুষিত কেন্দ্রগুলির ভোট সামনে আসছে বলে এ সব আজগুবি কথা বলতে হচ্ছে বিজেপিকে। এপ্রসঙ্গে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘রাহুলবাবু ভাল করে লেখাপড়া করুন। কারণ, নাগরিকত্ব আইন করতে হলে আগে এনপিআর করতে হয়। তারপর এনআরসি। সবশেষে সিএএ।’ এ বিষয়ে তৃণমূলের ঘোষিত অবস্থান অনুয়ায়ী তিনি বলেন, ‘যাঁদের ভোটার কার্ড আছে, যাঁরা ভোট দেন তাঁরা সকলেই ইতিমধ্যে এ দেশের নাগরিক।’স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত লোকসভা ভোটের প্রচারে নাগরিকত্ব ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে বনগাঁ ও রানাঘাট কেন্দ্র দু’টি জিতেছিল বিজেপি। সেবার ওই দু’টি কেন্দ্রের পাশাপাশি রাজ্যের অন্যান্য জায়গাতেও মতুয়ারা দু’হাত তুলে বিজেপিকে সমর্থন করেছিল। কিন্তু দু’বছর কাটতে চললেও নাগরিকত্ব আইন কার্যকর হয়নি। এ নিয়ে একাধিকবার ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর। বিধানসভা ভোটের আগে এই আইন কার্যকর না—হলে, বিজেপিকে সমস্যায় পড়তে হবে বলেও সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন তিনি।অন্য দিকে, ঠাকুরনগরে এসে কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ স্পষ্ট জানিয়েছেন, করোনা ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ শেষ হলে তবেই নাগরিকত্ব দেওয়ার কাজে হাত দেওয়া হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই ঘোষণায় ক্ষুব্ধ মতুয়া সমাজ। তার উপর প্রার্থী নিয়ে বনগাঁ মহকুমায় বিজেপি’র আদি ও নব্যের লড়াই চরমে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে এদিন ঠাকুরবাড়িতে আসেন হাবড়ার বিজেপি প্রার্থী রাহুল সিনহা। তিনি মতুয়া মন্দিরে পুজো দেওয়ার পাশাপাশি শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গেও বৈঠক করেন। এই প্রসঙ্গে রাহুলবাবুকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ তথা মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি মমতাবালা ঠাকুর। তিনি বলেন, ‘নাগরিকত্ব দেওয়ার সঙ্গে রাজ্যের সম্পর্ক কী? এই আইন তো করেছে কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় সরকার চাইলে নিঃশর্ত নাগরিকত্ব দিতে পারত। কয়েকদিন আগেও সংসদ বসেছিল। তখনই তো তারা নাগরিকত্ব দিতে পারত। আসলে তারা জানে, নাগরিকত্ব দেওয়া সম্ভব নয়। তাই ফের ভোটের মুখে মতুয়াদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে। তাঁর প্রশ্ন, অসমে কেন নিঃশর্ত নাগরিকত্ব দিচ্ছে না—কেন্দ্র? মতুয়ারা বিজেপির রাজনীতি ধরে ফেলায় এখন ওরা ফের নাগরিকত্বের মিথ্যা আশ্বাস দিচ্ছে।এদিন ঠাকুরনগরে মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে আসেন রাহুল। সঙ্গে ছিলেন বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি বিপ্লব হালদার। বনগাঁর বিজেপি সাংসদ তথা অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গে ৪০ মিনিট রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন তিনি।