বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে সবুজ রং বদলে গেরুয়া শিবিরে নাম লিখিয়েছিলেন অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ। প্রত্যাশা মতো ভোটে লড়বার ছাড়পত্রও মিলেছিল। তাও আবার মমতার খাসতালুক ভবানীপুর থেকে। তবে ভোটের রিপোর্ট কার্ড বলছে, বিজেপি ম্যাজিকের মতো রুদ্রনীলের ‘জলবা'ও ফিকে মমতার ক্যারিশ্মার সামনে। ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে দিদির সৈনিক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের কাছে বিরাট ব্যাবধানে হারলেন রুদ্রনীল ঘোষ। ২৮৭১৯ ভোটে রুদ্রনীলকে হারিয়েছেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, মমতার গত বিধানসভা ভোটের জয়ের ব্যবধানকেও (২৫,৩০১) ছাপিয়ে গিয়েছে।দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে রুদ্রনীলের হয়ে প্রচার করেছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ, তবুও ব্যর্থ হল রুদ্রনীল। রুদ্রনীলের এই মুখ থুবড়ে পড়বার কারণ? একসময়ের বাম মনোভাবাপন্ন এই অভিনেতা দীর্ঘসময় তৃণমূল সরকার ঘনিষ্ঠ ছিল। ভোটের ঠিক আগে আচমকা ৩৬০ ডিগ্রী ঘুরে রুদ্রনীলের বিজেপিতে যোগদান অনেকেই ভালোভাবে মেনে নেয়নি, সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক ট্রোলড হয়েছিলেন তিনি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকমহল মনে করছেন এর মাশুলই দিতে হল রুদ্রনীলকে। রুদ্রনীল হারলেও তাঁর একসময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, যিনি দিদির হাত শক্ত করে ধরে রেখেছেন সেই রাজ চক্রবর্তী অবশ্য, ব্যারাকপুরের মতো অর্জুন সিং-এর গড় থেকে জয় এনে দিয়েছেন দলকে। অন্যদিকে জিতেছেন রুদ্রনীলের ভালো বন্ধু, তথা তৃণমূলের উত্তরপাড়ার প্রার্থী কাঞ্চন মল্লিকও। দুই বন্ধুকে জয়ের শুভেচ্ছা জানিয়ে এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে একগুচ্ছ আবেদন রেখে রবিবার রাতে একটি ফেসবুক পোস্ট করেন ভাবনীপুরের পরাজিত বিজেপি প্রার্থী। লেখেন- '২১শের ভোট যুদ্ধ শেষ। মানুষের রায়ে আশাতীত সাফল্যে প্রথম স্থানে তৃণমূল এবং দ্বিতীয় স্থানে বিজেপি। সিপিএম ও কংগ্রেস শূন্য। জয়ী প্রার্থীদের অভিনন্দন। যারা জয়ী হলেন না, তাঁদের পরিশ্রমকে কুর্নিশ। সব রাজনৈতিক দলের ভোটার, সমর্থক ও কর্মীদের ভালবাসা জানাই।নির্বাচনে হার জিত থাকেই। ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে আমায় হারিয়ে জয়ী হয়েছেন শ্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। ওঁনাকে অভিনন্দন।সদ্য রাজনীতিতে পা দিয়েই জয়ী হয়েছেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাজ চক্রবর্তী ও কাঞ্চন মল্লিক। দুজনকেই শুভেচ্ছা। আশা করব প্রথা পালটে তৃণমূল এদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেবে এবার।এই নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হেরে গেছেন শুভেন্দু অধিকারীর কাছে। যে কোন কেউ হারুন বা জিতুন, নতুন সরকারে যেন ফের দূর্নীতি না জেতে সেটাই কাম্য। জিতুক বাংলার সাধারণ মানুষের সত্যিকারের উন্নয়ণ, জিতুক বাংলার বেকারদের চাকরি পাওয়ার স্বপ্ন, জিতুক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পরিকাঠামো ও পুলিশের শিরদাঁড়া। হারুক ক্ষমতার আস্ফালন আর গুন্ডামি। জিতুক বাংলার শরীর ও মন'। রুদ্রনীলের এই পোস্টের কমেন্ট বক্সেই টলিউড পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায় লিখে দেন মায়াবতীর বিএসপি (বহুজন সমাজবাদী পার্টি) অফিসের ঠিকানা ও ফোন নম্বর। সেই নিয়ে হইচই ফেসবুকে। নেটিজেনরা ট্রোল করতে ছাড়েননি রুদ্রনীলকে। একজন জনৈক লেখেন-'এদের রং কিন্তু নীল. নামেও সার্থক হবে'।