ভোটের আগে মতুয়া মন পেতে পুরোদমে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলি। তবে শেষমেষ কার ভাগ্যে শিঁকে ছিড়বে, তা অবশ্য জানা যাবে ২ মে। কিন্তু এ বার নিস্তব্ধতা গ্রাস করল সেই মতুয়াদের ঠাকুরবাড়িতেই। ভোটের গোটা দিন শুনশানই থাকল মতুয়াদের এই পীঠস্থান।বৃহস্পতিবার, ভোটের সকালে সেই ঠাকুরবাড়িতে দেখা গেল না অতি পরিচিত ভিড়ের ছবি। শুধু দেখা মিলল কয়েক জন মতুয়া ভক্তের।‘মা’— কার পক্ষে? তা নিয়ে এতবছর দড়ি টানাটানি কম হয়নি। এমনকী, বড়মার সঙ্গে ভোট দিতে কে যাবেন? ছোট ছেলে মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর, না কি মঞ্জুলের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বি-বৌদি মমতা ঠাকুর? এই নিয়েও জলঘোলা কম হয়নি।গাইঘাটার ঠাকুরনগরে মতুয়াদের পীঠস্থান ঠাকুরবাড়িতে রাজনৈতিক কারণে বহু দিন ধরে আড়াআড়ি বিভক্ত। ‘সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘ’-এর প্রধান উপদেষ্টা বড়মা(বীণাপাণি ঠাকুর)কে নিয়ে তাঁদের মধ্যেই টানাপড়েন দীর্ঘদিনের। বরাররই এই ঘটনার সাক্ষী থেকেছে মতুয়া সমাজ। বহুবার এই দ্বন্দ্বে সরগরম হয়ে উঠেছে মতুয়াদের ঠাকুরবাড়ি।২০১৯ সালে বড়মা মারা গিয়েছেন। তিনি জীবিত থাকাকালীন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতার কথা কারোর অজানা ছিল না। ভোটবাক্সেও তার সুফল পেয়ে এসেছে ঘাসফুল শিবির। কিন্তু বিজেপি-ও বড়মাকে নিয়ে টানাটানি কম করেনি। গত লোকসভা ভোটে মতুয়াদের বড় অংশই ঝাঁপিয়ে পড়েন পদ্ম শিবিরে। বিজেপির টিকিটে ভোটে জেতেন মতুয়া ঠাকুরবাড়ির ছেলে শান্তনু ঠাকুর।এতকিছুর মধ্যেও মতুয়া সমর্থন পাওয়ার দাবি তুলছে দুই যুযুধান শিবিরই। তাঁরাই মতুয়াদের সমর্থন পেয়েছেন, এই দাবি করে দিনের শেষে বনগাঁর বিজেপি সাংসদ তথা ‘অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘ’-এর সঙ্ঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুর বলেন, ‘মতুয়ারা বিশ্বাস করেন, ভোটের পরে কেন্দ্রীয় সরকার তাঁদের নাগরিকত্ব দেবে।’ অন্য দিকে, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের দাবি, ‘নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি যে ভাঁওতা, তা মতুয়া উদ্বাস্তু মানুষেরা বুঝে ফেলেছেন।’জেলা সিপিএম সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তী অবশ্য মতুয়াদের ভোট প্রাপ্তি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তাঁর কথায়, ‘সংখ্যালঘু-সহ সমস্ত ধর্মের খেটে খাওয়া মানুষের সমর্থন আমাদের দিকেই আছে।’বনগাঁ উত্তর, বনগাঁ দক্ষিণ, গাইঘাটা, হাবড়া, বাগদা, স্বরূপনগর ও অশোকনগরের মতো কেন্দ্রগুলিতে মতুয়া ভোটারদের যথেষ্ট প্রভাব আছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।