আজ ৩১ অক্টোবর (২০২৪) দীপাবলি, প্রথা মেনে হচ্ছে মা কালীর আরধনা। অনেকেই হয়তবা জানেন না অভিনেতা খরাজ মুখোপাধ্যায়ের রিচি রোডের বাড়ির কালীপুজোর কথা। সেই পুজোর ইতিহাস বহু পুরনো, তাও প্রায় ৭৫ বছরের। প্রতিবছরই দীপাবলিতে নিময় মেনে হয় এই পুজো, সঙ্গে থাকে আড্ডা-গান আর খাওয়াদাওয়া। আর অভিনেতার বীরভূমের গ্রামের বাড়ির রটন্𒀰তি কালীপুজোর ইতিহাস অবশ্য আরও প্রাচীন। সেই পুজোর ইতিহাস নিয়ে Hindustan Times বাংলার জন্য লিখলেন খরাজ মুখোপাধ্যায়।
আমার কলকাতার বাড়𝕴ির কালীপুজোও বহু পুরনো। আমার বড়দাও সেই জন্মের সময় থেকে 🥃দেখছেন। বাবা, কৃষ্ণনগর থেকে একটা কালীমূর্তি নিয়ে এসেছিলেন। কৃষ্ণনগরের যেমন কাচে ঢাকা মূর্তি হয়, তেমনই একটা কালীমূর্তি উপহার পেয়েছিলেন। তারপর থেকে বাবা সেই কালীমূর্তিতেই নিত্যপুজো করতেন। আর দীপাবলির দিন একটু বড় করেই সেই পুজো হত। ফুল-মালা দিয়ে, হোমও হত, ভোগ দেওয়া হত। এমনকি বেশকিছু লোকজন, আত্মীস্বজনের নিমন্ত্রণও থাকত। বাবার হাত ধরে শুরু হওয়া সেই প্রথটাই বছরের পর বছর চলে আসছে।
আমরাও বড় হওয়ার সঙ্গে ধীরে ধীরে এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছি। একটা সময় আমিই দায়িত্ব নিয়ে পুজোর রান্নাবান্না করা শুরু করি। এছাড়া পুজোর সময় প্রত্যেক ঘরের দরজায় আমি মঙ্গলঘট বসাই। পরে আমি যখন একটু 'লায়েক' হলাম। বাবাকে বললাম, তুমি যে ফুল কিনে আনো, সেগুলো হওড়া মার্কেটে গেলে আরও ভালো পাবে𒁃। প্রথমে বাবা বিশেষ উৎসাহ দেখাননি। বাবার আসলে সেটা জানা ছি💙ল না। এরপর একবছর আমিই দায়িত্ব নিয়ে হাওড়া ফুল মার্কেটে পৌঁছে যাই। আমাদের ৫-৭ রকমের মালা পরানো হয়, যেমন বেলপাতা, অপরাজিতা, হলুদ গাঁদা, লাল গাঁদা, জবা, রঙ্গন ফুলের মালা। সেবার আমিই সব কিনে আনলাম, হোমের বেলপাতাও আনলাম। বাবা দেখে খুব খুশি। তারপর থেকেই এটা প্রথা হয়ে গেল। তখন থেকে এই দায়িত্বগুলো আমিই নিয়ে আসছি।
বাড়ির সকলেই এই পুজোটা বেশ উপভোগ করি। আগಌে একসঙ্গে বাজি পোড়াতাম, আগে তো শব্দবাজিতে এত বাধানিষেধ ছিল না। তখন আমি এক বন্ধুর সঙ্গে মিলে তুবড়ি বানাতাম। খুবই আনন্দ হত। পরে আমরা পদ্মপুকুরের বাড়ি থেকে রিচি রোডে চলে এলাম। আমরা তিনভাই এখন এই বাড়িতেই থাকি। তারপর বাবা একদিন চলে গেলেন, তবে তার আগে বাড়ির ছাদে একটা ছোট্ট মন্দির করে গিয়েছিলেন। সেই মন্দিরে মা কালীকে প্রতিষ্ঠা করা হল। এদিকে ধীরে ধীরে বাবার আনা সেই মা কালীর সেই মূর্তির অবস্থা খুব করুণ হয়ে যায়, মাটি খসে পড়ছিল। তখন বড়দা কৃষ্ণনগরের এক পারদর্শী শিল্পীকে ডেকে বললেন, আমাদের কাছে এটা খুবই আবেগের এটা বিষয়। এই কালীটাকে আমরা কোনওভাবে নষ্ট করতে চাই না। শুনে সেই শিল্পী নানান ট্রিটমেন্ট করে ওই কালীটিকে ঠিক করলেন, রং করানোও হল। তবে উনি বলে দিয়েছিলেন এটা আপনাদের আবেগের বিষয় বলে ঠিক করে দিলাম, তবে এটাতে আর হাত দেওয়াও যাবে না। সেই তখন থেকে ওই বক্সটা আমরা আর খুলি না। এরপর থেকে পটুয়াপাড়ায় গিয়ে আমি আলাদা করে একটা কালী কিনে আনি। সেই ঠাকুরেই পুজো হয়। এখনও একইভাবে পুজো হয়, ভোগ হয়।
পুজোর দিন আমাদের বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়রা আসেন, গানের জগতের কিছু বন্ধুরা আসেন। ছেলের বন্ধুরা আসে। গায়ক রথিজি♈ৎ (ভট্টাচার্য) আমাদের খুব কাছের, ও আসে সস্ত্রীক। সবাই মিলে দেদার আড্ডা, গান হয়। সারারাত পুজো হয়। আমার বড়দা নিজেই পুজো করেন। ভোরের দিকে পুজো শেষ হয়। খাওয়া দাওয়া হয়। আমরা যখন প্রায় ঘুমিয়ে পড়ি, তখন বড়দা এসে প্রত্যেকের মাথায় হোমের ফোঁটা দিয়ে যান। পরদিন সকালে হয় দধিকর্মা। বিকেলে ছোট্ট ট্যাম্পু ট্রাক ভাড়া করে গঙ্গায় গিয়ে বিসর্জন করে আসি। ফেরার পথে বাঁশি লাগানো বেলুন নিয়ে পি পি বাজাতে বাজাতে বাড়ি আসি। আবার কাগজের ভেপুও বাজাই। এই পুজোটা প্রায় ৭০-৭৫ বছরের পুজো।
আরও পড়ুন-‘মানুষ ইতিহাসকেও আজ অপপ্রচার বলছে’, দুঃখ পেয়েছেন রাইমা, দিদা সুচিত্রা🔥র কথা উঠতেই𒉰 বললেন…
আর যেটা রটন্তি কালীপুজো, সেটা হয় আমাদের দেশের বাড়িতে, বীরভূমের পাথাই গ্রামে। সেখানে ওই পুজো হয় মাঘমাসে। ওটাই আমাদের পৈত্রিক বাড়ি। বাবারা ৫ ভাই🥀 ও বোন। সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ওখানকার সমস্ত জমি জায়গা দেবোত্তর সম্পত্তি করে ✨দেওয়া হয়েছে। এই সম্পত্তি, ধানজমি থেকে যা আয় হয়, পুরোটাই পুজোতেই কাজে লাগে। ওটা শরিকি পুজো। প্রতি ৩ বছর অন্তর পালা আসে। দুর্গাপুজো দিয়ে শুরু হয়, কালীপুজোতে এটা শেষ হয়। ওখানে এখনও বলীপ্রথাও চালু আছে।
মাঘমাসে যখন দেশের বাড়িতে পুজো হয়, মোটামুটি সব আত্মীয়রা সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ওটা খুবই জাগ্রত কালী, আমরা সারারাত জেগে, খুবই নিষ্ঠার সঙ্গে সেই পুজো করাই। ভোরের দিকে পুজো শেষ হয়। দুপুরে গোটা গ্রাম ডেকে খাওয়ানো হয়। জাঁকজমক করেই সবটা হয়। সকলেই সেটা নিয়ে খুব উৎসাহী। আমার অভিনেতা এবং অন্যান্য বন্ধুরাও সেখানে যান। ওই বিষয়টা বাঁচিয়ে রাখার জন্য এখন আমার স্ত্রীও ওখানে একটা সম্পত্তি বানিয়েছেন, বাগানবা🐽ড়ি মতো। সেখানে নানান ফুল-ফলের গাছ আছে, রাধা-কৃষ্ণের মন্দিরও আছে একটা। সেই মন্দিরেরও একটা ইতিহাস আছে, সেটা নাহয় আরেকদিন বলা যাবে। আপাতত আমাদের কালীপুজোর ইতিহাস ও প্রথার কথাই বললাম।