করোনা ছাড়া এই বছরের শেষ ছয় মাস যে খবর গোটা দেশজুড়ে থেকেছে চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে তা হল সুশান্ত সিং রাজপুতের রহস্যমৃত্যু। মা⛄ত্র ৩৪ বছর বয়সে এক প্রতিভাবান,ঝকঝকে তারার খসে পড়বার যন্ত্রণার আজও তাড়া করে বেড়াচ্ছে দেশবাসীকে। এই রহস্যমৃত্যু ঘিরে রাজনৈতিক টানাপোড়েন কম হয়নি। গ্ল্যামারদুনিয়ার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা অন্ধকারময় দিক, বলিউডের মাদকযোগের মতো বিষয়গুলিকেও প্রকাশ্যে এনে দিয়েছে সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর ঘটꦑনা।
গꦛত ১৪ জুন দুপুরে গোটা দেশের ব্রেকিং নিউজ ছিল-‘বান্দ্রার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার সুশান্ত সিং রাজপুতের দেহ, আত্মহত্যা করলেন বলিউড তারকা꧋’। মুম্বই পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে দাবি করেছিল ডিপ্রেশনের শিকার সুশান্ত আত্মঘাতী হয়েছেন। যদিও সেই তত্ত্ব সহজে মেনে নিতে পারেনি সুশান্ত অনুরাগীরা। এরপর ইন্টারনেটে ফাঁস হয়ে যায় সুশান্তের মরদেহের বেশ কিছু ছবি। যেগুলি ঘিরে হইচই পড়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়।
কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয় করণ,আদিত্য,মহেশ ভাটকে :
সুশান্তের মৃত্যুকে ঘিরে বলিউডে মাথাচাড়া দিয়ে উঠে নেপোটিজম বিতর্ক। বি-টাউনের আউটসাইডার সুশান্ত সাত বছরের ফিল্মি কেরিয়ারে কাই পো ছে, এমএস ধোনি দ্য আনটোল্ড স্টোরি, ছিছোড়ের মতো ছবি উপহার দিতেও যোগ্য সম্মান পাননি, কোথাউ যেন ব্রাত্যই থেকে গিয়েছিলেন! তাঁর মৃত্যুর পর করণ জোহর, আদিত্য 𝓰চোপড়ার মতো প্রযোজক থেকে সঞ্জয় লীলা বনশালি, সলমন খানেরা জনরোষের মুখে পড়েন। পাবলিক প্ল্যাটফর্মে সুশান্তকে নিয়ে বিরূপ বা কুরুচিকর মন্তব্যের জন্য নেটিজেনরা একহাত নেন আলিয়া, সোনম, করিনাদের।
‘আউটসাইডার’ বলেই সুশান্তকে ‘টার্গেট’ করে ডিপ্রেশনের দিকে ঠেলে দিয়েছে বলিউড এমন অভিযোগ করেন কঙ্গনা রানাওয়াতও।ক্রমেই সুশান্ত মৃত্যুর বিতর্কের আঁচে দগ্ধ হতে থাকে মায়ানগরী। একের পর এক স্টারকিডকে নিশানা করা হয়। টুইটার ছেড়ে ‘পালান’ সোনাক্ষী সিনহা,আয়ুশ শর্মারা। সোশ্যাল মিডিয়ায় কমেন্ট বক্সে বিধিনিষেধ🌺 আরোপ করতে বাধ্য হন সোনম, আলিয়া সহ একাধিক বলিউড সেলেব।
সুশান্তের মৃত্যুর পরের দিনই মহারাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল দেশমুখ ঘোষণা করেন, এই মৃত্যুর কারণ হিসাবে ‘পেশাদার রেষারেষি’র দিকটি জোর দিয়ে খতিয়ে দেখবে মুম্বই পুলিশ। এরপর বান্দ্রা পুলিশ থানায় আগামী এক মাস ধরে একের পর এক তাবড় তাবড় বলিউড ব্যক্তিত্ব হাজিরা দিয়েছে। প্রায় ৫৬ জনকে এই মামলায় জেরা করেন মুম্ব꧂ই পুলিশ।
রিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ সুশান্তের পরিবারের :
তবে এটা ছিল শুধু হিমশৈলের চূড়া। সুশান্ত মামলা সবচেয়ে প্রথম বড় টার্নিং পয়েন্ট নেয় ২৭ জুলাই। এদিন সন্ধ্যায় জানা যায়,দু-দিন আ𓃲গে (২৫ জুলাই) বিহারের রাজীব নগর পুলিশ থানায় সুশান্তের বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তী ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে অভিনেতাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার মামলা দায়ের করেছেন প্রয়াত অভিনেতার বাবা কেকে সিং।
মুম্বই পুলিশের তদন্তে সন্তুষ্ট ছিল না পরিবার, তাই জিরো এফআইআর নয়, মুখ্যমন্ত্রী নীতিশে𒀰র নির্দেশে পাটনা পুলিশ এই মামলার তদন্ত শুরু করে। এরপরই শুরু হয় সুশান্তের মৃত্যু নিয়ে বিহার ও মহারাষ্ট্র সরকারের টানাপোড়েন, যা হয়ে দাঁড়ায় শিবসেনা বনাম বিজেপির ‘ইগো’র লড়াই।
মামলা গেল সিবিআইয়ের হাতে:
বিহার পুলিশের একটি টিম মুম্বইয়ে সুশান্ত মামলার তদন্তে গেলে তাঁদের বাধা দেওয়ার অভ🔯িযোগ উঠে, এরপর অগস্টের শুরুতেই বিহারের টিমকে নেতৃত্ব দিতে আইপিএস বিনয় তিওয়ারি মুম্বই পৌঁছালেই তাঁকে কোয়ারেন্টাইন করা হয় বিএমসির তরফে। পাটনা পুলিশের এফআইআর অবৈধ এই দাবি তুলে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন রিয়া। পালটা বিহার সরকার কেন্দ্রের কাছে এই মামলা সিবিআইয়ের হাতে সঁপে দেওয়ার আর্জি জানায়। সুপ্রিম নির্দেশে শেষমেশ অগস্টের প্রথম সপ্তাহে এই মামলা তুলে দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে।
প্রকাশ্যে বলিউডের মাদকযোগ :
সিবিআই এই মামলার তদন্তভার নেওয়ার পাশাপাশি বিহার 🌌পুলিশের এফআইআরের ভিত্তিতে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে এই মামলার তদন্তে যোগ দেয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি। কারণ সুশান্তের বাবা এফআইআরে ১৫ কোটি টাকা তছরূপের অভিযোগ এনেছিলেন। ইডির তদন্তের সূত্র ধরেই উঠে আসে রিয়া চক্রবর্তীর মাদকযোগের হদিশ। এরপর অগস🧸্টের শেষেই এই মামলার তদন্তে নামে নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো। যা সুশান্তের মৃত্যু মামলার দ্বিতীয় টার্নিং পয়েন্ট হিসাবে ধরা যেতে পারে।
এনসিবির তদন্ত যত এগিয়েছে ততই চাঞ্চল্য বেড়েছে। মাদক কারবারীদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগ রয়েছে, এবং সুশান্তকে মাদক কিনতে আর্থিক মদত ও স্লাপাই দিতেন শৌভিক-রিয়া এই অভিযোগে চক্র💝বর্তী পরিবারের দুই সন্তানকেই গত ৫ সেপ্টেম্বর ও ৭ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার করে এনসিবি। রিয়া-শৌভিকের হোয়াটসঅ্যাপে চ্যাটের সূত্র ধরে একের পর এক নামী বলিউড ব্যক্তিত্বের নাম জড়ায় মাদক মামলায়।
জাস্টিস ফর রিয়া ক্যাম্পেন :
আদালতে দোষী প্রমাণিত হওয়ার আগেই অহেতুক রিয়াকে দোষী সাব্যস্ত করেছে মিডিয়া। এর বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে ‘জাস্টিস ফর রিয়া’র ডাক তোলেন শিবানি দাণ্ডেকর,সোনম, তাপসী পা্ন্নুরা। এনসিবি দফতরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পৌঁছানোর সময় ‘পিতৃতন্ত্র নিপাত যাক’ বার্তাও দিয়েছিলেন রিয়া🤡। সেই জোয়ারে গা ভাসান করিনা কাপুর, বিদ্যা বালানের মতো তারকারাও। সেই নিয়ে সুশান্ত ভক্তদের তীব্র কটাক্ষের মুখে পড়ে বি-টাউন।
দীপিকা থেকে সারা- এনসিবির নজরদারিতে প্রথম সারির তারকারা :
রিয়ার গ্রেফতারির পরেও মাদককাণ্ডের আঁচ কমেনি। দীপিকা পাড়ুকোন, সারা আলি খান, রাকুল প্রীত সিং, শ্রদ্ধা কাপুরের মতো প্রথম সারির নায়িকাদের নাম জড়ায় এই মামলায়। এনসিবির হাতে গ্রেফাতর হন করণ জোহরের সংস্থায় এক এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর𝄹। অক্টোবর মাসে এনসিবির হাতে অর্জুন রামপালের প্রেমিকা তথা সন্তানের মা গ্যাব্রিয়েলার ভাই। যার জেরে ড্রাগ বিতর্কে ঢুকে পড়ে অর্জুন রামপালের নামও।
বলিউডের এই মাদকযোগের জট খুলতে থাকলে একটা শ্রেণির মিডিয়া বলিউডের ঘায়ে ‘নেশাখোর’ তকমা সেঁটে দেয়। কঙ্গনা রানাওয়াতও বলিউডের মাদকাসক্তি নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন। বলেন প্রথমসারির ৯৫% তারকাই মাদকাসক্ত। বলিউড𒀰ের উপর ধেয়ে আসা আক্রমণকে সংসদের মঞ্চে স্ট্রেট ব্যাটে খেলেন জয়া বচ্চন। নাম না করেই কঙ্গনাকে তিনি বার্তা দেন- ‘যে থালায় খাচ্ছো, সেই থালা ফুটো করছো’।
দোষী মিডিয়া?
বলিউডকে কালিমালিপ্ত করবার চেষ্টা চালাচ্ছে মিডিয়ার একটা অংশ, এই অভিযোগ এনে বিবৃতি জারি করে প🦄্রোডিউসার গিল্ড। এখানেই থেমে না থেকে আইনি পথে হেঁটে বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে। অক্টোবরের ১২ তারিখ মুম্বইয়ের ৩৪ টি ফিল্ম প্রযোজনা সংস্থা ও চারটি চলচ্চিত্র সংগঠন দুটি সংবাদ চ্যানেল ও চার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকলেন আদালতে। হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির মানহানি করা হয়েছে সংবাদ পরিবেশনের নামে, এই অভিযোগ এনে আদালতের দ্বারস্থ শাহরুখ খান, সলমন খান, আমির খানরা।
চর্চায় কঙ্গনা :
সুশান্ত মামলা নিয়ে একের পর বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন ಞকঙ্গনা। মুম্বইকে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের সঙ্গে তুলনা করে মহারাষ্ট্র🌃 সরকারের সঙ্গে প্রকাশ্য সংঘাতে জড়িয়েছেন। বিএমসির তরফে তাঁর অফিস বাড়ি ভাঙা পড়েছে। এরপর কেন্দ্রের তরফে ওয়াই প্লাস সিকিউরিটি পেয়েছেন কঙ্গনা! সব মিলিয়ে চর্চায় থেকেছেন পর্দার কুইন।
খুন নাকি আত্মহত্যা?
বছর শেষ। সুশান্তের মৃত্যুর ৬ মাস অতিক্রান্ত। ‘জাস্টিস ফর সুশান্ত’ আন্দোলনের আঁচ সোশ্যাল মিডিয়ায় এতটুকুও ঠান্ডা হয়নি। বছরের অন্তিম লগ্নে, ৩০ ডিসেম্বর- অভিনেতার মৃত্যুর তদন্তভার তুলে নেওয়ার ১৪৫ দিনের মাথায় এই তদন্ত নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করল সিবিআই। আত্মহত্যা নাকি খুন? সেই প্রশ্ন এখন🦩ও জিইয়ে রাখছেন তদন্তকারীরা। তাঁদের বিবৃতি- ‘সিবিআই অত্যন্ত পেশাদারভাবে মামলার তদন্ত চালাচ্ছে সবরকম বৈজ্ঞানিক পদ্ধত🐠ির কথা মাথায় রেখে। তদন্তের সময় সব সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখেই এগোনো হচ্ছে, এখনও পর্যন্ত কোনও সম্ভাবনাকেই খারিজ করা হয়নি’।