সঙ্গীতশিল্পী হৈমন্তী শুক্লার সঙ্গে নতুন করে পরিচয় করানোর কিছু নেই। তবে অনেকেই হয়ত জানেন না প্রয়াত কিংবদন্তি রাশিদ খানের 'দিদি' ছিলেন তিনি। হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন। রক্তের সম্পর্কের ভাই-বোন নন। তবে ভাই রাশিদকে নিয়মিত ভাইফোঁটা দিতেন হৈমন্তী শুক্লা। অনেকেই হয়ত সেকথা জানেন না। দিদিকে আদর করে ‘বুড়ি’ বলে ডাকতেন ভাই রাশিদ খান। ভাইয়ের আচমকা মৃত্যুতে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত তাঁর দিদি হৈমন্তী শুক্লা। Hindustan Times Bangla-💜র সঙ্গে ফ🌃োনে কথা বলার সময় সঙ্গীত শিল্পীর গলায় ধরা পড়ল সেই আক্ষেপ।
প্রথম কীভাবে, কবে রাশিদ খানকে ভাইফোঁটা দিয়েছিলেন?
হৈমন্তী শুক্লা বলেন, ‘ঘটনাচক্রে আমি একদিন স্বপ্ন দেখেছিলাম, রাশিদকে আমি ভাইফোঁটা দিচ্ছি। তবে বিষয়টা বাড়িতে বলতেও লজ্জা পাচ্ছিলাম। কারণ আমার ৪ জন ভাই আছে। তবে ভাইরা শুনে বলল, বলো না ওঁকে। তোমার সঙ্গে তো ওঁর (রাশিদ খান) ভাল সম্পর্ক। তোমার ইচ্ছে যখন হয়েছে। আমি রাশিদকে বলতেই, ও তো হেসে উড়িয়ে দিল। বলল, এই বুড়ি তুমি চুপ করো। এর ঠিক পরের বছর সেই সুযোগ এল। বিশেষ একটা উপলক্ষ্যে এক সংবাদ সংস্থার তরফে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে আম👍ি যেতে পারিনি, ভাইফোঁটার দিন রাশিদই আমার বাড়ি এসেছিল। সেবছর থেকেই রাশিদকে ভাইফোঁটা দেওয়া শুরু হয়েছিল।’
আবেগতাড়িত হৈমন্তী শুক্লা বলেন, ‘বলতে খারাপ লাগছে, কাকতালীয়ভাবে কিছুদিন আগে রাশিদকে নিয়ে একটা খারাপ স্বপ্ন দেখেছিলাম। ঘুম ভেঙে মনে হয়েছিল একী দেখছি! তার কয়েকদিন পর ও চলে গেল। আমি এখনও মানতে পারছি না। কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না। (ধরা গলায় বলল🉐েন)ওর সঙ্গে আর দেখা হল না।’
আবেগতাড়িত সঙ্গীতশিল্পীর কথায়, ‘রাশিদ তো ছোট থেকেই কলকাতাতে থাকত। ও কত বড় শিল্পী, সেসব তো পরের কথা। মানুষ হিসাবে ও যে কী ভালো, বলে বোঝাতে পারব না। 🅘বাচ্চাদের মতো স্বভাব ছিল। শিশুদের মতো সরল মন ওঁর।’
স্মৃতির পাতা থেকে হৈমন্ত শুক্লা বলেন, ‘একবার আগরতলাতে অনুষ্ঠান করতে গিয়েছি, অনুষ্ঠান শেষে তখন অনেক রাত হয়ে গিয়েছে। সব দোকান একপ্রকার বন্ধ। তারই মধ্যে দু'একটা খোলা। একটা শার্ট-প্যান্টের দোকান খোলা পেয়ে আমাকে নিয়ে গেল। আমি বলেছিলাম, ওই দোকানে গিয়ে কী করব? রাশিদ বলল, আরে চলোই না। তারপর দোকানে গিয়ে ৪টে প্যান্ট কিনল। আমি তো ওকে বকা দিচ্ছি। ও কিনে বলল, তুমি এগুলো বাড়িত🍌ে নিয়ে যাও। আমি বললাম, আমি কি প্যান্ট পরি? রাশিদ বলল, তোমার ভাইদের দিও। ও লোকজনকে উপহার দিতে ভালোবাসত। ও চলে যাওয়ার পর আমার ভাইরাও বলছিল, এই তো রাশিদ ভাইয়ের দেওয়া প্য়ান্ট।’
রাশিদের সঙ্গে প্রথম দেখার কথা মনে করে হৈমন্তী শুক্লা বলেন, আমি তেজেন (তেজেন্দ্র মজুমদার, বিক্রমদের (বিক্রম ঘোষ) মুখে রাশিদের কথা খুব শুনতাম। তখন ওদের বলতাম, আমাকেও একদিন রাশিদের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দে না। তখনও রাশিদের সঙ্গে আমার দেখা হয়ে ওঠেনি। তবে ঐকান্তিক ইচ্ছে থাকলে হয়ত সেটাই ঘটে। একদিন 'হুইল চেয়ার' (১৯৯৪) ছবির জন্য তপন সিনহার ফোন এল। উনি বললেন হৈমন্তী তোমায় একটা গান গেয়ে দিতে হবে। তুমি আর রাশিদ গাইবে। আমার তখন আনন্দ আর ধরে না। তারপর স্টুডিওতে রেকর্ডিংয়ে গিয়ে আলাপ। আমি ওকে দেখে জড়িয়ে ধরে বললাম, ভাইরে তোর সঙ্গে আলাপের বড় ইচ্ছে ছিল আমার। সে এ♛ক💧 সুন্দর মুহূর্ত…। ও তো তখন রাশিদ খান, তবে কোনও অহঙ্কার ছিল না। দিদি দিদি বলে আপন করে নিয়েছিল আমায়।
এইরকম ওর 📖সঙ্গে অনেক স্মৃতি রয়ে গিয়েছে। কত স্মৃত♌ি… ভাই রাশিদের কথা বলতে বলতে গলা ধরে এল তাঁর 'বুড়ি' দিদি হৈমন্তী শুক্লার।