দিনকয়েক আগেই রবীন্দ্রজয়ন্তীর দিনে শ্রীজাতর লেখা গানে কবিগুরুর নাম বলিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া ছেয়ে গিয়েছিল। সপ্তাহ গড়ানোর আগেই নতুন বিপত্তি। এবার রামপ্রসাদের লেখা গানের জন্য ‘সেরা গীতিকার’ হিসেবে মনোনয়ন পেয়ে গেলেনღ তিনি। গোটা ঘটনায় বেশ অবাক আর বিরক্ত তিনি। মানবজমিন সিনেমার একটি গান নিয়ে তাঁকে সম্প্রতি একটি বিশেষ অ্যাওয়ার্ড শো থেকে জানানো হয় মনোনয়ন পাওয়ার কথা। যা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন তিনি ও ছবির প্রযোজক রাণা সরকার।
রাণা প্ꦗরথমে ফেসবুকে লেখেন, ‘রবীন্দ্রনাথের পর রামপ্রসাদ… সৃজাত বন্দ্যোপাধ্যায়কে আটকানো যাচ্ছে না। তুমি এখনো সত্যজিৎ সামলে উঠতে পারলে না সৃজিত মুখোপাধ্যায়।’
এই নিয়ে ফেসবুকে বেশ লম্বা একটি নোট শেয়ার করে নেন শ্রীজাত। সেখানে তিনি লেখেন, ‘‘মন রে, কৃষিকাজ জানো না’ – টেলি সিনে অ্যাওয়ার্ডস-এর তরফে এই গানটির জন্য সেরা গীতিকারের মনোনয়নপত্রটি যখন আমার ফোনে আসে, তখন আমি একটি বিজ্ঞাপনের কাজে বিষম ব্যস্ত। তাই কিছুক্ষণ খুলে দেখা হয়নি। পরে চিঠির প্রতিলিপি খুলে তুমুল অঘটনটি দেখামাত্র আমি চেষ্টা করি কোনওভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তা জানাতে। আমাদের ছবির প্রযোজক রাণা সরকার মারফত আমার সঙ্গে কথা হয় সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মৃন্ময় কাঞ্জিলালের। তাঁকে আমি স্পষ্টতই জানাই, বিরাট আকারের এক ভ্রান্তি হয়ে গেছে তাঁদের তরফে এবং পুরস্কার তো অনেক পরের কথা, এই মনোনয়ন মেনে নেওয়াই আমার পক্ষে সম্ভব নয়। সব শুনে তিনি ভুল স্বীকার করেন এবং জানান যে যত দ্রুত সম্ভব এই ত্রুটি সংশোধন করে নেওয়া হবে। ব্যক্তিগত স্তরে এই ঘটনার জন্য তিনি আমার কাছে দুঃখপ্রকাশ করেন। কিন্তু ততক্ষণে সোশ্যাল মিডিয়ায় এই মনোনয়নপত্রের প্রতিলিপি ছড়িয়ে পড়েছে হু হু ক’রে। জানি না কীভাবে তা সম্ভব 💧হলো, কিন্তু ইদানীং সবই সম্ভব। যাই হোক, ফলত বিষয়টি আলোচ্য হয়ে ওঠে।’
‘আমাদের এখানে কোনও বিষয়ই বেশিক্ষণ আলোচনার আওতায় থাকে না। ঠাট্টা, মশকরা ও ব্যক্তি-আক্রমণের স্তরে নেমে আসে। বিশেষত তার কেন্দ্রে যদি আমি থাকি। সারাদিন কাজের ব্যস্ততায় সংবাদমাধ্যমের বন্ধুদের ফোন ধরতে পারিনি, কিন্তু টের পাচ্ছিলাম, এ নিয়ে জল ঘোলা হচ্ছে। বহু রাতে বাড়ি ফিরে কিছু কিছু দেখলাম। ফ🔯েসবুকে নানান লেখা, হোয়াটসঅ্যাপের গ্রুপে গ্রুপেও ঘুরছে সেই চিঠির ছবি। আজকের দিনে সেটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু একটা কথা আছে এখানে। রামপ্রসাদ সেনের গানের জন্য আমাকে মনোনীত করা যেমন বিস্ময়কর অজ্ঞানতা বা অসাবধানতার পরিচায়ক, তেমনই এই মনোনয়নের জন্য আমাকে আক্রমণ করাও অশিক্ষা ও অভব্যতার সামিল। প্রথমত, অনেকেই দেখলাম ধরে নিয়েছেন যে, এই পুরস্কার আমি পাচ্ছি ও গ্রহণ করছি।☂ তাঁরা সম্ভবত মনোনয়ন এবং পুরস্কারের তফাতটুকুও জানেন না। এই দুয়ের মধ্যে কতগুলো পর্যায় আছে বা থাকতে পারে, তাও তাঁদের জানা নেই। এও জানেন না যে, মনোনয়ন ব্যক্তি-মানুষের গ্রহণ বর্জনের বাইরে। গ্রহণ বা বর্জনের বিষয় তখনই আসে, যখন কেউ পুরস্কৃত হন।’
এরপরই শ্রীজাত তাঁর পোস্টে জানিয়ে দেন এই মনোনয়ন পত্রের বিরোধ তিনি করেছেন। সঙ্গে জানান ওই অ্যাওয়ার্ড শো-র পক্ষ থেকে সিনেমার অন্য একটি গানের জন্য ইতিমধ্যে ফের একবার তাঁকে মনোনয়নপত্র পাঠানো হয়েছে। যদিও তিনি জানেন, তাতে ত্রুটি ঢাকা পড়ে না। শ্রীজাত লিখলেন, ‘তাঁরা ওই একই ছবির অন্য একটি গানের জন্য আমাকে একটি মনোনয়নপত্র পাঠিয়েছেন (সে-ছবি এখানে রাখলাম)। তাতে যদিও এই মারাত্মক ভুল মুছে যায় না, 𝓀সেটা নিশ্চিত তাঁরাও বোঝেন। পুরস্কার প্রদানকারী সংস্থার তরফে বড় রকমের ত্রুটি হয়েছে এবং বিষয়টি প্রকাশে চলে আসায় তাঁদের উপর ঘটনার দায় বর্তেছে, যা স্বাভাবিক। তাঁরা এই দায় সরকারিভাবে ইতিমধ্যেই কোথাও স্বীকার করেছেন কিনা, আমার জানা নেই। জেনে খুব একটা লাভও নেই। আমি নিজে এই মনোনয়নের বিরোধিতা করেছি এবং তাতে কাজও হয়েছে, এটুকুই জানানোর ছিল।’
এদিকে রাণাও বিরোধিতা করেছেন এই ‘ভুল’-এর। এবং তাঁর সিনেমা মানবজমিনের নাম যাতে আর এই অ্যাওয়ার্ড শো-র কোনও ক্যাটাগরিতে না রাখা হয় সেই কথাও বলেছেন। ফেসবুকে তিনি লেখেন, ‘ভুল করলে ভুল স্বীকার করুন, ෴প্রকাশ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা চান, ডায়লগবাজি করলে প্যান্ডোরা বক্স খুলে দেবো, ফুটেজ খাওয়ার দরকার আমার নেই অর্গানাইজারদের আছে, কারণ ওদের টাকা তুলতে হয় অ্যাওয়ার্ড দেবো অঙ্গীকার করে। টেলিসিনে অ্যাওয়ার্ড সংগঠকদের সাধক কবি রামপ্রসাদের প্রতি এই অবহেলা ও অপমানের প্রতিবাদে আমাদের সিনেমা 'মানবজমিন'-এর কোনো নমিনেশন আমরা গ্রহণ করছি না। সংগঠকদের অনুরোধ টেলিসিনে অ্যাওয়ার্ড-এর কোথাও যেন মানবজমিন সিনেমার নাম উল্লেখও না থাকে। আপনাদের কোনো নমিনেশন বা পুরস্কার আমাদের চাই না।’
(এই খবরটি আপনি পড়তে পারেন HT App থেকেও। এবার HT App বাংলায়। HT App ডাউনলোড করার লিঙ্ক )