রণবীর ভট্টাচার্য
বয়স টেনেটুনে পাঁচ হবে। ছটফটানিতে গ্র্যাজুয়েট। তার কলকাতার গঙ্গাপারের মামার বাড়ি এখন তালা চাবি দিয়ে ঘুমোচ্ছে। আর নিজে বসত বেঁধেছে রোনাল্ডোর শহরে। লিসবনের নাম কে না শুনেছে ! পর্তুগালের লিসবনে সৌরা ভট্টাচার্য থাকে তার মা আর দিদুনের সঙ্গে। মন খারাপ, বিচ্ছেদ, উতলা আকাশ সবই তাকে ছুঁয়ে যায় সাগরের ঢেউয়ের মতো। তবে আপাতত নতুন লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে সে। এস্কলা ডে ফুটবল ক্লাবে ভর্তি হয়েছে সে। তার উপর রোনাল্ডোর দেশে থাকছে, ফুটবল না খেললে চলে! এই ক্লাবের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে ক্লাব সার্কিটে। বর্তমানে এই ক্লাবে খেলেই বেনফিকা মহিলা ফুটবল দলের গোলকিপার উঠে এসেছেন।তার উপর বাঙালি জিন টগবগ করছে রন্ধ্রে রন্ধ্রে। কোচ টিয়েগো লোবেস যারপরনাই খুশি ছোট্ট সৌরাকে নিয়ে। ফুটবলের মানচꦍিত্রে ভারতের অবস্থা ক্রিকেটের চিনের মতো, যেখানে সাফল্য অজানা কারণে পিছলে যায়। তবে সৌরা উদ্দীপনায় ভরপুর। ক্লাবে একমাত্র মেয়ে যে ফুটবল শিখছে। হিল জুতো নয়, বরং স্টাডের জুতোয় বেশি সাবলীল সৌরা। প্রথমে মা আর দিদুনও অবাক। গড়পড়তা বাঙালি পরিবারে বছর পাঁচের মেয়ে যদি রবীন্দ্রনাথের জায়গায় রোনাল্ডোকে বেছে নেয়, তবে ভাবতে হয় বই কি!
তবে জীবনটা হয়তো এই খাতে বইয়ে যাওয়ার কথা ছিল না তার! বাবা মায়ের সঙ্গে জার্মানিতে তিন বছর বয়সে চলে আসে সৌরা। কিন্তু বাবা কোন এক অজানা কারণে দূরে চলে যায় পরিবার থেকে। তখন থেকে শুরু হয় মা সুদেষ্ণা ভট্টাচার্যের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই। ওঁর নিজের কথাতেই, ‘সময় বদলেছে। মেয়েরা সব পারে। তবে সাগরপাড𓆉়ে, এই বিদেশ বিভুঁইয়ে, যেখানে ভাষা সংস্কৃতি সব কিছুই আলাদা, সেখানে মেনে নেওয়া বা মানিয়ে নেওয়া, দুটোই সহজ নয়। বাবা চলে যাওয়ার পর আমার মা একলা থাকতেন। তাই মাকে বলি তুমি চলে আসো এখানে। পঁচাত্তরের কাছে এসে মা নতুন করে লড়াই শুরু করেছে আমার সঙ্গে। পাশে আছে শুধু আমার ভাই। আর সৌরা হচ্ছে ওর মামার প্রাণভোমরা। সৌরা যদি পেশাদার ফুটবল প্লেয়ার হয়, সেটা আমাদের ভট্টাচার্য পরিবারে সবচেয়ে বড় পাওনা হবে।’
মেয়েদের ফুটবল নিয়ে সারা বিশ্বেই এখন অনেক আলাপ আলোচনা। কয়েক দিন আগেই বিশ্বকাপজয়ী স্পেন মহিলা ফুটবল নিয়🐎ে অনেক বিতর্ক চোখে এসেছে। সেখানে একদিকে নারীর ক্ষমতায়ন শিরোনামে এসেছে, আবার সেক্সিজম 𓃲নিয়ে গঠনমূলক সমালোচনা হয়েছে। ভারত, চিরচারিত ভাবেই অনেক দেরিতে ট্রেনে উঠেছে। তাই হয়তো সাফল্য আসতেও সময় লাগবে।
একটা দুর্গ♛া পুজো যায়, আর একটা দুর্গা পুজো আসে। বয়স বাড়তে থাকে। ছোট্ট সৌরা এখনও বোঝে না সম্পর্কের টানাপোড়েন। হয়তো আর একটু বড় হলে বুঝতে শিখবে। তবে এই ছেলেদের টিমে একমাত্র মেয়ে বলে কোনও পিছিয়ে পড়া নেই তার। ইউটিউবে গান খুঁজে নেওয়া থেকে পেনাল্টি বক্সের দুরুহ কোণ থেকে শট, অনেক কিছুতেই সিদ্ধহস্ত সে। রোনাল্ডোর বাবা তার ছেলের সাফল্য দেখে যেতে পারেননি। তবে সৌরার মা সুদেষ্ণা ভট্টাচার্য দুর্গা মায়ের কাছে প্রার্থনা করেন যে ওর দিদুন যেন ওর সাফল্য দেখে যেতে পারে। সেটা জীবনের এক সেরা পোয়েটিক জাস্টিস হবে।