HT Bangla Special: 👍প্রথার বিপরীতে হেঁটে বিশ্বভারতীতে সরস্বতী পুজো। রবিবার বিশ্বভারতীর শান্তিশ্রী বয়েজ হোস্টেলে এই পুজোর আয়োজন করা হয়। ছাত্রদের দাবি, ঘরোয়া উপায়েই এই পুজো আয়োজন হয়েছিল। কিন্তু বিশ্বভারতী ক্যাম্পাসের মধ্যেই হয় সে আয়োজন। যুক্ত ছিলেন আবাসিকদের অনেকেই। ঘটনাটি নিয়ে যথারীতি নিন্দার ঝড় উঠেছে শান্তিনিকেতনে। আশ্রমিকদের অনেকেই বিষয়টির নিন্দা করেন।
দায় এড়াচ্ছেন কর্তৃপক্ষ
ꦡমহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ প্রথম বীরভূমের এই স্থানে এসে ১৮৬৩ সালে শান্তিনিকেতন আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন ব্রহ্মধর্মে দীক্ষিত। আশ্রম উপাসনার নিয়মও ছিল ব্রহ্মধর্মের ভাবসঞ্জাত। দীর্ঘকাল ধরে এই নিয়মের অন্যথা হয়নি। হলেও সেই ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। এক্ষেত্রেও ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন আশ্রমিকরা। সংবাদমাধ্যমের তরফে ইতিমধ্যে এই ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয় হোস্টেল কর্তৃপক্ষকে। তিনি ছুটিতে রয়েছেন জানিয়ে ঘটনার দায় এড়িয়ে গিয়েছেন। অন্যদিকে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্রও ঘটনাটি নিয়ে কথা বলতে চাননি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে।
আরও পড়ুন - 🧸Kolkata Book Fair: মেলা বই, মেলা পাঠক! বইমেলার হিসেব কি শেষমেশ মেলে বই পড়ার সঙ্গে
সব ধর্মের পড়ুয়া আসেন এখানে
🎐গোটা ঘটনার নিন্দা করেছেন শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের বর্তমান সম্পাদক অনিল কোনার। Hindustan Times বাংলাকে তিনি জানিয়েছেন, ‘বিশ্বভারতী ক্যাম্পাসে মূর্তিপুজো নিষিদ্ধ। নিজেদের বাড়িতে কেউ পুজো করলে সেটা ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এরকম নিয়ম নেই। আশ্রম এলাকায় মহর্ষির প্রতিষ্ঠিত ব্রহ্মমন্দির রয়েছে। সেখানে সব ধর্মের মানুষ উপাসনা করে। কিন্তু কোনও মূর্তির পুজো এখানে হয় না। সেটা নিষিদ্ধ। ৭৮ বছর বয়সের জীবনে আমি এমনটা কখনও হতে দেখিনি। কর্তৃপক্ষের এই বিষয়ে খোঁজ নেওয়া দেখা কর্তব্য।’
মূর্তিপুজো নিয়ে দেবেন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রনাথ
𝔉মূর্তিপুজো নিষেধ নিয়ে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ বা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কোনও নির্দেশিকা কি ছিল? ‘ওঁরা মূর্তিপুজো বিশ্বাস করতেন না বলেই ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষিত ছিলেন। আর সে কারণেই ব্রহ্মমন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। যেখানে সব ধর্মের মানুষরা ব্রহ্মের উপাসনা করতে পারবে। যেহেতু এখানে নানা ধর্মের ছেলেমেয়েরা পড়তে আসেন, তাই কিছু ছাত্রের মূর্তিপুজো অন্যরকম বার্তা দিতে পারে। কর্তৃপক্ষের এই ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
আরও পড়ুন - ꦫPublic Toilet: অথ সুলভ শৌচালয় কথা! বাঙালির নিম্নচাপ নিয়ে এক বিশেষ প্রতিবেদন
বরখাস্ত হয়েছিলেন এক ইঞ্জিনিয়ার
ꦦঅন্যদিকে শান্তিনিকেতনের প্রবীণ আশ্রমিক শুভলক্ষ্মী গোস্বামী জানাচ্ছেন,‘আমি ১৯৫০ সাল থেকে এখানে থাকি। কখনও বিশ্বভারতীতে মূর্তিপুজো দেখিনি। ভারতের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সুধীরঞ্জন দাস উপাচার্য থাকাকালীন বিশ্বভারতীর ইঞ্জিনিয়ার মনোজ মজুমদার ৪৫ কোয়ার্টার্সে দু’বার মূর্তিপুজো করেন। বিশ্বভারতীর ক্যাম্পাসের মধ্যে পুজো করার জন্য তাঁর চাকরি চলে গিয়েছিল। এখানে খ্রিষ্টোৎসব তো হয়, কিন্তু যীশুর কোনও মূর্তি থাকে না। তাই কেউ পুজো করতে চাইলে ছবি রেখে বা অন্য উপায়ে পুজো করতে পারত। মূর্তিপুজো করাটা বিশ্বভারতীর নিয়মভঙ্গই একপ্রকার।’
‘ভুলের দায় শুধু পড়ুয়াদের নয়’
🌟তবে মূর্তিপুজোর এই ভুলের দায় একা ছেলেদের ঘাড়ে চাপাতে নারাজ শুভলক্ষ্মী। তাঁর কথায়, ‘একা ছেলেমেয়েদের দোষ দিয়েও লাভ নেই। ওয়ার্ডেন কী করছিলেন? তিনি কী করছিলেন? এই ধরনের গাফিলতির পিছনে অধ্যাপক, হোস্টেল ওয়ার্ডেন ও কর্তৃপক্ষের যথেষ্ট দায় রয়েছে। আজকাল বিশ্বভারতীতে পড়তে আসা অধিকাংশ ছেলেমেয়েরা জানেন না মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ কে ছিলেন। কেনই বা এখানে মূর্তিপুজো করা যায় না। কারণ অধ্যাপক বা কর্তৃপক্ষ সেসব বিষয়ে অবগত করেন না। হালে মদ্যপান, নানা ধরনের উচ্ছৃঙ্খলতা ক্যাম্পাস সংস্কৃতির অঙ্গ দাঁড়িয়েছে। শুধু একটা মূর্তিপুজো নিয়ে প্রতিবাদ করে কি সব শুধরে ফেলা সম্ভব? উচ্ছৃঙ্খলতা শুধরাতে হলে প্রথম থেকেই বিশ্বভারতী ও শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্য, সংস্কৃতির সঙ্গে ছোটদের পরিচয় করানো উচিত। বিশ্বভারতীর বড়রা যথার্থভাবে সেই দায় কি পালন করেন আদৌ?’