কথায় আছে যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে। আর এক্ষেত্রে প্রবাদটা একটু উলটে গিয়েছে। যে অর্থনীতি নি🐓য়ে গবেষণা করে সে রাঁধেও। কথা হচ্ছে নোবলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এবার রান্নার বই লিখে ফেলেছেন তিনি। নাম ‘কুকিং টু সেভ ইয়োর লাইফ’ (Cooking To Save Your Life)। খেতে পছন্দ করে এমন বাঙালির অভাব নেই, অভিজিতবাবুও নিতান্তই ভোজনরসিক মানুষ, আর এই বইতে নিজেদের পছন্দের খাবার নিয়েই আলোচনা করেছেন তিনি। তিনভাগে বিভক্ত- স্যুপ, ভেজিটেবিলস এবং মিটস অ্যান্ড মোর… একদম ঘরোয়া রান্নার সঙ্গে নিজের উদ্ভাবনী শক্তি মিলিয়ে এই বইয়ের রেসেপিগুলো তৈরি করেছেন তিনি। সেখানে রয়েছে পারসিয়ানಌ বাঘালি পোলাও (ইরানিয় পদ) থেকে লেডি বাল্টিমোর (মিশিগানের কেক) তৈরির প্রণালী।
মিন্ট-কে দেওয়া এক জুম ইন্টারভিউতে নিজের এই বই, আর খাদ্যরসিক মেজাজ নিয়ে আড্ডা দিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ। তিনি জানান, প্রায় পাঁচ বছর আগে এই বই লেখার শুরু। এবং শুরুটা হয়েছিল নিতান্তই তাগিদে পরে। শ্যালক চেয়ে পাঠিয়েছিল বেশকিছু খাবারের রেসিপি, তাই লিখতে বসা। কিন্তু নেহাত ভালোবাসার জেরেই প্রতিটি রেসিপির সঙ্গে একটা লম্বা বর্ণনাও জুড়ে দিতেন তিনি। যেমন খুর্দি (এক ধরণের 🌞মটনের স্যুপ)-র রেসিপি লিখতে গিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘এটা ভারতের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত গুজরাতের একটা পদ বিশেষ। এটি মূলত শীতকালীন স্যুপ। তবে গুজরাতে যদিও শীত পড়ে না খুব একটা। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল এটা এমন এক জায়গায় মাংসের স্যুপ, যেখানে খুব বেশি আমিষ খাবারের চল নেই’।
অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তাঁর রান্নার ধরণ হল মূলত ‘ফ্রি অ্যান্ড ইজ꧟ি’ অর্থাত্ খুব সহজ-সরল। এই বইয়ের লেখনিতেও সেই বিষয়টাই ফুটিয়ে তোলবার চেষ্টা করেছেন তিনি, কোনও জটিলতা সেখানে জায়গা পায়নি। রান্না করতে গিয়ে তখনই ফ্যাঁসাদে পড়তে হয় যখন তুমি খুব বেশি আত্মবিশ্বাসী হও, আর নয় তো এক্কেবারেই নিজের উ𒆙পর আস্থা থাকে না, মনে করেন অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। এটা কী ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা?
মুচকি হেসে জবাব, ‘রান্না করতে গিয়ে আমার সমস্যা মূলত ওভার কনফিডেন্স থেকে আসে। আমি জীবনে অনেকক্ষেত্রেই একটু বেশি আত্মবিশ্বাসী। একবার আমি বাড়িতে এক বন্ধুকে আমন্ত্রণ করেছিলাম। ঠিক করেছিলাম ওকে বাঙালি মাছের ঝোল রান্না করে খাওয়াব। আমি একটা কড ফিশ বেছে🔯 নিয়েছিলাম, বুঝতে পারিনি ওই মাছ বেশিক্ষণ জলে সিদ্ধ করা যায় না। ছোট্ট করে বললে, পুরো রান্নাটা একেবারে ঘেঁটে ঘ, মাছটা একটা মণ্ড হয়ে গিয়েছিল। জঘন্য, এককথায়’।
বিশ্বকে দেওয়া ভারতের সবচেয়ে বড় দান নাকি ‘ডাল’, শূন্য আর দাবার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ এটা। সত্যি কি তাই? লেখক বললেন, 'একদম, আমি নিশ্চিত কেউ না কেউ শূন্য ঠিক খুঁজে নিত। কিন্তু ডালের এমন ব্যবহার ভারতেই সম্ভব। ভারতে এতধরণের ডাল, এতভাবে রান্না করা হয় আমি আশ্চর্য হয়♐ে যাই। আপনি একসঙ্গে ডালের তিনটে আলাদা পদ তৈরি করে একবেলার খাবার খেয়ে ফেলতে পারেন। আমার ছোটবেলায় তো তিনরকমের ডাল তৈরি হত যা চেটেপুটে খেতাম, তেতো ডাল, মিষ্টি ডাল আবার পাতলা ডাল।
আত্মীয়-পরিজনদের রান্না করে খাওয়ানোর পাশাপাশি নিজের জন্যও রান্না করতে ভালোবাসেন অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপ💛াধ্যায়। নিজের জন্য কেমন খাবার রান্না করেন? এই মামলায় তিনি খাঁটি বাঙালি। ডাল ভীষণ পছন্দের খাবার তাঁর, পাশাপাশি সবজি দিয়ে মাংস বা ডিম রান্না করে খেতেও ভালোবাসেন। তবে রোজকার খাবার শেষে ডেজার্ট বিশেষ পছন্দ নয় তাঁর।
ভাত থেকে পাস্তার উল্লেখ থাকলেও তাঁর বইতে রুটি বা চাপাটি জাতীয় খাবারের উল্লেখ❀ নেই। কারণ হিসাবে তিনি জানান, ওগুলো বেশি খাাটুনির কাজ, এবং তিনি এক🔥েবারেই বেকিং-এ পুটু নন।
টে♌গলিয়াটা (ইতালীয় খাবার) খুব পছন্দের খাবার অভিজিতবাবুর, পাশাপাশি তাঁর চিট শিটে জায়গা করে নিয়েছে মরোক্কান জালুক (Moroccan Zaalouk) এবং সুন্দল (দক্ষিণ ভারতীয় ডালের পদ বিশেষ)। এছাড়াও চটপট রান্নার ক্ষেত্রে পাস্তা কিংবা স্যালাডও মন্দ নয়।
বাঙালি মাত্রই মিষ্টিপ্রেমী, সেই প্রেম অধরা নয় দারিদ্র দূরীকরণ নিয়ে গবেষণার জন্যে নোবেলজয়ীরও। কৃষ্ণনগরের সরভাজা থেকে কলকাতার ঐতিহ্যশালী সন্দেশ খুব পছন্দ তাঁর। পাশাপাশি ডার্ক চকোলেটের বিরাট ভক্ত তিনি। বলেই ফেললেন,ꦫ ‘আমি কিন্তু চকোহলিক’।