ইন্টারনেট ও স্মার্টফোনের যুগে ছাপানো বইয়ের অস্তিত্ব অনেক জায়গায় হুমকির মুখে পড়ছে৷ স্পেনের একটি প্রত্যন্ত গ্রাম কিন্তু অনেক বইয়ের দোকান নিয়ে বইপ্রেমীদের আকর্ষণ করে চলেছে৷ পুরানো টাইপরাইটার ভিক্টর লোপেস-বাচিলারের ধ্যানজ্ঞান৷ বিশেষ করে সে রকম টাইপরাইটার দিয়ে লেখা বই তার বিশেষ পছন্দের৷ স্পেনের উরুয়েনিয়া গ্রামে অ্যান্টিক বইয়ের দোকান চালান তিনি৷ ৪৭ বছর বয়সি বার্সেলোনার এই মানুষটি এভাবে নিজের একটি স্বপ্ন পূরণ করেছেন৷ 🍒ভিক্টর বলেন, ‘দোকানে গিয়ে ♕বই ঘাঁটতে আমার সব সময়ে ভালো লাগত৷ এখন এত বইয়ের মাঝে বসে পেশা হিসেবে এমন কাজ সত্যি আমার জন্য বিশাল সৌভাগ্য৷'
পছন্দের সেই পেশার জন্য তাঁকে অবশ্য আপোশ করতে হচ্ছে৷ উরুয়েনিয়ার মতো প্রত্যন্ত এলাকায় আর কোনও রুটির দোকানও অবশিষ্ট নেই৷ এমনকি শেষ মাংসের দোকা𒁏নটিও বন্ধ হয়ে গিয়েছে৷ কিন্তু মধ্যযুগের ছাপসর্বশ্ব মাত্র ১০০ জনের ছোট্ট এই জনপদে আটটি বইয়ের দোকান রয়েছে৷ গ্রামটি বইয়ের জন্য বিখ্যাত৷ ভিক্টর লোপেস-বাচিলার বলেন, ‘সাধারণত ﷽বড় শহরে এমন বইয়ের দোকান দেখা যায়৷ কিন্তু বইয়ের গ্রাম হিসেবে উরুয়েনিয়া আসলে এক এক্সপেরিমেন্ট৷ এই প্রকল্পের মাধ্যমে বড় শহর থেকে বইয়ের দোকান বার করে এনে সংস্কৃতি ও পর্যটনের বিশেষ মোড়কে পরিবেশন করা হচ্ছে৷' গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে যাবার প্রবণতার মোকাবিলা করতে প্রায় ১৫ বছর আগে রাজ্য সরকার বইয়ের গ্রামের এই প্রকল্প শুরু করে৷ বইয়ের দোকানের মালিকদের মাসে মাত্র দশ ইউরো ভাড়া গুনতে হয়৷
ফিদেল 𓆉রাসো এবং তামারা ক্রেসপো তাঁদের মধ্যে একজন৷ তামারা সাংবাদিক ও ফিদেল পেশায় ফটোগ্রাফার৷ এই দম্পতি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পা রেখেছেন৷ ইরাক যুদ্ধ, শরণার্থী সংকট, বার্লিন প্রাচীরের পতনের মতো ঘটনার সাক্ষী ছিলেন তাঁরা৷ তাঁদের দোকান থেকে সাংবাদিকতা ও ভ্রমণ সংক্রান্ত বই বাইরে পাঠানো হয়৷ তামারা ক্রেসপো দোকানের সাফল্যের কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘ছোট এই বইয়ের দোকানটি স্পেনের জনবিরল এক প্রত্যন্ত এলাকায়, চাষের খেতে ঘেরা একটি গ্রামে অবস্থিত হলেও ইন্টারনেটের মাধ্যমে বাকি বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত৷ আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভিত্তিতে কাজ করি৷ কে কখন দোকানে ঢুকে বই কিনবেন, তার অপেক্ষায় বসে থাকি না৷'
লুইস এনরিকে বালদেস এই প্রকল্পের প্রধান৷ কিছুকাল আগেই তিনি বইয়ের এই গ্রামের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন৷ তিনি জায়গাটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে চান, আরও পর্যটক আকর্ষণ করতে চান, খাদ্যরসিকদের জন্য আরও রেস্তোরাঁ দেখতে চান৷ এভাবেই অজ পাড়াগাঁকে আকর্ষণীয় করে তোলার পরিকল্পনা বাস্তব করতে চান তিনি৷ লুইস বলেন, ‘বান্ধবীকে নিয়ে এই গ্রামে এসে কফি বা বিয়ার পানের জায়গা অথবা টয়লেট খুঁজতে অনেক সময় লাগলে মনে হতে পারে, আবার কি এখানে আসা উচিত হবে? ৩৭টি বইয়ের দোকান থাকলেই বা কী🌳 এসে যায়❀?'
বই বাঁধানোর আটটি দোকানের সঙ্গে আরও একটি যোগ হচ্ছে৷ রোসা দে মিগেল ও ফ্যার্নান্দো গুতিয়েরেস বিভিন্ন লাইব্রেরি, মহাফেজখানা, নোটারি পাবলিকের দফতর থেকে অর্ডার পান৷ মরসুম অনুযায়ী পর্যটকদের হাতে বাঁধানো বই বিক্রিও করেন তাঁরা৷ তবে আরও পর্যটক এলে বইয়ের এই গ্রামে সꦡত্যি বাড়তি সাফল্য আসবে, এমন ধারণা সম্পর্কে তাঁদের মনে সংশয় রয়েছে৷ ফ্যার্নান্দো মনে করেন, ‘পর্যটন ব্যাপারটা মোটেই স্পষ্ট নয়৷ বেশি পর্যটক আকর্ষণ করলে প্রায়ই ভালো হয় না৷ বেশি পর্যটক এলে꧂ই পরিষেবা আরও ভালো হয় না৷ এমনকি আমরা বেশি বিক্রি করতে পারলেও নয়৷'
স্পেনের গ্রামাঞ্চলে পর্যটক আকর্ষণ করে উরুয়েনিয়া কিছুটা সাফল্য পেয়েছে বটে, কিন্তু গ্রামটির একচেটিয়া অবস্থান আর নেই৷ বার্সেলোনার কাছেই দ্বিতীয় একটি ‘বুক ভিলেজ' গড়ে উঠেছে৷ সেখানেই আবার ভিক্টরের আদি নিবাস৷ তা সত্ত্বেও তিনি নিজের পরিকল্পনা আঁকড়ে ধরে রয়েছেন৷ তিনি পাকাপাকি থাকতে ও কাজ করতে এস𒁏েছেন৷