রাহুল সিংবন্ধ তো করেনি, উলটে পূর্ব লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর সামরিক গতিবিধি আরও বাড়াল চিন। বাড়ানো হয়েছে সৈন্য সমাবেশ, সাঁজোয়া গাড়ি, মাটি খননকারী যন্ত্র। গত ২২ জুনের উপগ্রহ চিত্রে সেই বিষয়টি ধরা পড়েছে। একই কথা জানিয়েছেন দুই আধিকারিক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আধিকারিক জানান, প্যাট্রোলিং পয়েন্ট-১৪-র কছে একটি নয়া এবং বড় কাঠামো তৈরি করা হয়েছে। খুব সম্ভবত সেটি একটি নজরদারি পোস্ট। যে এলাকার কাছে গত ১৫ জুন ভারতীয় এবং চিনা সেনার মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছিল। মৃত্যু হয়েছিল ২০ জন ভারতীয় জওয়ানের। মারা গিয়েছে চিনা ফৌজিরাও। তবে বেজিংয়ের তরফে হতাহতের সংখ্যা প্রকাশ করা হয়নি।মার্কিন সংস্থা ম্যাক্সার টেকনোলজিস যে উপগ্রহ চিত্র প্রকাশ করেছে, তাতে স্পষ্ট যে শুধু গালওয়ান উপত্যকায় নয়, অন্যান্য জায়গাতেও ক্রমশ সামরিক শক্তি বাড়াচ্ছে চিন। যেদিন সেই ছবি ধরা পড়েছে, সেদিনই মলডোয় ১১ ঘণ্টার ম্যারাথন বৈঠক করেছিলেন দু'পক্ষের সেনা কম্য়ান্ডাররা। সেখানে ‘পারস্পরিক ঐক্যমতের ভিত্তিতে সেনা সরানোর’ বিষয়ে রাজি হয়েছে দু'দেশই। 'হিন্দুস্তান টাইমস'-এর হয়ে প্রাক্তন সেনা আধিকারিক, আধিকারিক এবং চিনা বিশেষজ্ঞরা উপগ্রহ চিত্র খতিয়ে দেখেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, ছবিতে চিনা কার্যকলাপের স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলেছে এবং প্রকতৃ নিয়ন্ত্রণরেখার এপারে অর্থাৎ ভারতে নজরদারি চালানোর জন্য নয়া আউটপোস্টও গঠন করা হয়েছে।নর্দান আর্মির প্রাক্তন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ডি এস হুডা (অবসরপ্রাপ্ত) বলেন, ‘নদীখাতে স্পষ্টভাবে অসংখ্য তাঁবু, সাঁজোয়া গাড়ি, ভারী ট্রাক এবং বুলডোজার দেখা যাচ্ছে। রাস্তা নির্মাণও করা হচ্ছে। চিনা সেনার অবস্থান একেবারে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার উপর।'ডেসপ্যাং, গোগরা পোস্ট-হট স্প্রিং এবং প্যাংগং সো লেক জায়গাতেও সৈন্য সমাবেশ কমেনি। চিনের এলাকা থেকে গোগরা পোস্ট-হট স্প্রিং সেক্টর এবং ডেসপ্যাংয়ে দিকে তাক করে পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) সাঁজোয়া গাড়ি এবং আর্টিলারি বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। পালটা দ্বিতীয় আধিকারিক জানিয়েছেন, চিনের যে কোনও প্ররোচনামূলক পদক্ষেপের জবাব দিতে কড়া নজর রাখছে ভারতীয় সেনা। না আঁচালে যেহেতু চিনকে বিশ্বাস নেই, তাই সেনা সরানোর প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ না হওয়া চূড়ান্ত সতর্ক থাকছে নয়াদিল্লি। তবে সেনা সরানোর প্রক্রিয়া খুব একটা সহজ হবে না বলে মত বিশেষজ্ঞদের। নর্দান আর্মির প্রাক্তন কমান্ডার বলেন, ‘রাতারাতি সেনা সরানোর প্রক্রিয়া হতে পারে না। ছবিগুলি উদ্বেগের কারণ এবং গালওয়ান উপত্যকায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে ঘাঁটি গেড়ে থাকার চিনের উদ্দেশ্যও স্পষ্ট করেছে। মাত্র দু'দিনেই উচ্চপদস্থ কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠকের ফল ওই এলাকায় দেখা যাবে না।’তবে মিলিটারি অপারেশনসের প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) বিনোদ ভাটিয়া জানিয়েছেন, উপগ্রহ চিত্রের ব্যাখ্যাও অত্যন্ত জটিল এবং ভুল সিদ্ধান্তেও পৌঁছাতে পারে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের থিঙ্কট্যাঙ্ক সেন্টার ফর জয়েন্ট ওয়ারফেয়ার স্টাডিজের প্রধান বলেন, ‘উপগ্রহ চিত্রে কী ভাবে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখাকে সুপারইম্পোজ করবেন, সেটাই বিষয়। যা আপনাকে সিদ্ধান্তে উপনীত হতে সাহায্য করে। তবে কয়েকটি ব্যাখ্যা সঠিক হতে পারে।’