ফারিহা ইফতিকাররাস্তায় আনাজ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন ইংরেজির শিক্ষক। সাইকেলের সারানোর দোকানে কাজ করছেন বিজ্ঞানের শিক্ষক। আবার গম ক্ষেতে কাজের জন্য নিজের গ্রামে ফিরে গিয়েছেন সংস্কৃতের স্যার।শুধু তাঁরা নন, দিল্লির সরকারি স্কুলে অসংখ্য অতিথি শিক্ষক একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে গত তিন মাস ধরে স্কুল বন্ধ থাকায় চরম আর্থিক সংকটে পড়েছেন তাঁরা। ফের কবে স্কুল খুলবে, তা নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে বিকল্প আয়ের উপায় খুঁজতে বাধ্য হচ্ছেন সেই শিক্ষকরা।রাজধানীর ১,০৩০ টি সরকারি স্কুলে অতিথি শিক্ষকের সংখ্যা ২০,০০০-এর বেশি। প্রতি বছর তাঁদের চুক্তি নবীকরণ করা হয়। মূলত দৈনিক ভিত্তিতে তাঁদের টাকা দেওয়া হয়। রবিবার, গ্রীষ্মকালীন এবং শীতকালীন বা কোনও জাতীয় ছুটির দিনে তাঁদের টাকা দেওয়া হয় না। সেই সময় অনেকে সামার ক্য়াম্পে যোগ দেন। কিন্তু লকডাউনের জেরে আয়ের সেইসব পথও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যদিও গত ৫ মে দিল্লির শিক্ষা দফতরের তরফে একটি নির্দেশিকা জারি করে জানানো হয়েছিল, চলতি বছরের ৮ মে পর্যন্ত সব অতিথি শিক্ষকদের বেতন মিটিয়ে দিতে হবে। আর গরমের ছুটির সময় ডাকলে সেই বেতনও দিতে হবে। করোনা পরিস্থিতিতে অনেক স্কুল অনলাইন ক্লাস শুরু হলেও তাতে খুব বেশি অতিথি শিক্ষকদের ডাকা হয়নি।তেমনই একজন ওয়াজির সিং। গত ৮ মে পর্যন্ত সুলতানপুরীর একটি স্কুলে ইংরেজি পড়িয়েছেন তিনি। ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর, বিএড এবং সিটেট উত্তীর্ণ ওয়াজির পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। হরিয়ানার পানিপথে পরিবারের পাঁচজন তাঁর উপরই নির্ভরশীল। তাই বাধ্য হয়ে গত মাস থেকে নিজের ভাড়াবাড়ির কাছে সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত ফল বিক্রি করছেন। সেজন্য ২,০০০ টাকা দিয়ে একটি ঠেলাগাড়িও ভাড়া করেছেন। ওয়াজির বলেন, ‘দিনে ৪০০-৫০০ টাকা আয় হচ্ছে। আমার বাবার শরীরের অবস্থা ভালো নয়। তিন ভাই পড়াশোনা করছে। স্কুল থেকে ডাক না পাওয়া পর্যন্ত আমি ফল-আনাজ বিক্রি করব। কিছু আয় তো হচ্ছে।’একই অবস্থা বিজ্ঞানের শিক্ষক দেবেশ কুমারের। গত ৩১ মার্চ থেকে তাঁর হাতে কোনও কাজ নেই। এদিকে বাড়িতে তাঁর বয়স্ক মা, স্ত্রী এবং ছেলে রয়েছেন। ছেলে একটি বেসরকারি স্কুলের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। তাই বাধ্য হয়ে গাজিয়াবাদে ভাড়াবাড়ির কাছে সাইকেল সারাইয়ের দোকানে কাজ করছেন দেবেশ। গত ছ'বছর ধরে দিল্লির সরকারি স্কুলে কর্মরত দেবেশ বলেন, 'এপ্রিল থেকে কাজ না থাকায় ছেলের স্কুলের টাকা মেটাতে পারিনি। খরচ সামাল দিতে সাইকেলের চাকা সারাই করছি।'অন্যদিকে পশ্চিম দিল্লির একটি স্কুলে কাজ করতেন সংস্কৃতের শিক্ষক সঞ্জীব কুমার। কিন্তু এপ্রিল থেকে তিনিও কর্মহীন। এই পরিস্থিতিতে হিমাচল প্রদেশে নিজের বাড়ি ফিরে যান তিনি। সেখানে নিজের গমের ক্ষেতে কাজ করছেন। তা দিয়েই কোনওভাবে সংসার টানছেন জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং সংস্কতে স্নাতকোত্তর করা শিক্ষক।বিষয়টি নিয়ে নাম গোপন রাখার শর্তে দিল্লির শিক্ষা দফতরের এক আধিকারিক জানান,করোনা পরিস্থিতির জন্য এতজন অতিথি শিক্ষকের বেতন দিতে পারবে না সরকার। যখন প্রয়োজন হবে, তখন ডেকে নেওয়া হবে। আর কবে সেই প্রয়োজনটা আসবে, সেই অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছেন ওয়াজির, দেবেশ, সঞ্জীবের মতো অসংখ্য শিক্ষকরা।