গালওয়ান উপত্যকায় কম করে ১-১.৫ কিলোমিটার পিছু হটেছে চিন। কিন্তু এর পিছনে আছে গতকাল জাতীয় সুরক্ষা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের একটি ফোন কল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানিয়েছে যে চিনের বিদেশমন্ত্রী ও স্টেট কাউন্সিলর ওয়াং ই-এর সঙ্গে গতকাল ভিডিও কল করেন ডোভাল। সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিস্থিতিতেই আলোচনা হয়। সীমান্তে কীভাবে শান্তি ফেরানো যায় ও গালওয়ান সংঘর্ষের মতো ঘটনা ভবিষ্যতে এড়ানো যায়, সেই নিয়েই এই দুই উচ্চপদস্থ কর্তার মধ্যে আলোচনা হয় বলেই জানা গিয়েছে। দুই পক্ষের মধ্যে এই কথাও হয়েছে যে নিজে থেকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বদলাবে না কেউ। সামরিক ও কূটনৈতিক স্তরে আলোচনা চলবে যাতে বিভেদ বিবাদে না বদলে যায়, বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই খবর এল যে কিছুটা পিছু হটেছে চিন। যসূত্রের মোতাবেক জানা গিয়েছে যে এক থেকে দেড় কিলোমিটার প্যাট্রোলিং পয়েন্ট ১৪ থেকে পিছিয়ে গিয়েছে চিনের সেনা। তাঁবু ও সাঁজোয়া গাড়িও পিছিয়ে দিয়েছে। তবে ঠিক কতটা পিছিয়েছে তারা, সেটা ভেরিফাই করে দেখবে ভারত। এদিন চিনের থেকে সরকারি ভাবে এই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করা হয়েছে। দুই মিলিটারির আলোচনায় সীমান্তে শান্তি ফেরানোর প্রক্রিয়া কিছুটা এগিয়েছে বলে জানিয়েছে চিন। তবে এই নিয়ে বিষদে কিছু বলেনি বেজিং। বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র সাও লিজিয়ান জানান যে ৩০শে জুন কম্যান্ডার পর্যায়ের আলোচনা হয়। দুই পক্ষই যে আগের আলোচনায় সমঝোতা হয়েছিল, সেটা রূপায়ণ করার প্রক্রিয়ায় রত। সামনের সারিতে যে বাহিনী আছে, উত্তেজনা প্রশমিত করার ক্ষেত্রে তারা ভূমিকা নিয়েছে বলে জানিয়েছে চিন। চিন যেরকম করেছে, একই ভাবে ভারতও উত্তেজনা কমানোর জন্য ব্যবস্থা নেবে বলে আশা প্রকাশ করেছে বেজিং।।তবে চিনের বিদেশমন্ত্রকের দেওয়া বক্তব্যে স্পষ্ট যে এই পুরো ঘটনায় দায় তারা ভারতের ওপর চাপাতে চায়। চিনের বিদেশমন্ত্রক বলেছে যে নিজেদের অখণ্ডতা রক্ষা করতে যা দরকার, তারা তা করবেন। ভারতকে জনতা মতামত সঠিক দিকে চালিত করার পরামর্শও দিয়েছে তারা। ছয় দিন আগে কোর কম্যান্ডারদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্তই হয়েছিল যে দুই পক্ষই নিজেদের বাহিনী কিছুটা পিছিয়ে নেবে। কিন্তু অতীতে এরকম বোঝাপড়া হলেও সেটা মানেনি চিন। গালওয়ানে পয়েন্ট ১৪-এ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয় ১৫ জুন যেখানে ২০ জন ভারতীয় সেনা ও অজানা সংখ্যক চিনা সেনা মারা যান।কিন্তু এবার কোর কম্যান্ডারদের বৈঠকে ডিসএনগেজমেন্ট সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত মেনে নিল চিন। পিছু হটল তাদের সেনা। সূত্রের খবর, বোঝাপড়া অনুযায়ী চলছে কাজ। পয়েন্ট ১৪ থেকে তাঁবু ও অন্যান্য পরিকাঠামো সরিয়েছে সেনা। কোর কম্যান্ডারদের বৈঠকে ঠিক হয়েছিল যে দ্রুত ধাপে ধাপে দুই পক্ষই সেনা কমাবে ওই জায়গা থেকে।প্রতিটি পদক্ষেপের পর অন্য দিক দেখবে যে কথা অনুযায়ী কাজ হয়েছে কিনা। তারপর প্রতি ৭২ ঘণ্টায় ডিসএনগেজমেন্ট প্ল্যানের পরবর্তী ধাপটি নেওয়া হবে। গালওয়ান, হট স্প্রিংস-গোগরা পোস্ট অঞ্চল থেকে চিনা সেনা নিজেদের গাড়িও সরিয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় সেনা সূত্র।৩০ জুনের বৈঠকে ভারতের দিক থেকে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় কয়েকটি এলাকায় স্ট্যাটাস কু আন্টে ফিরাতে হবে। এর মধ্যে আছে গালওয়াং উপত্যকা, প্যাংগং লেক ও দেপসাং প্লেন। এখানে এপ্রিলের শুরুতে যে অবস্থা ছিল, সেটা ফেরানোর দাবি করছে ভারত।