রিপাবলিক টিভি চ্যানেলের এডিটর-ইন-চিফ অর্ণব মনোরঞ্জন গোস্বামীর জামিনের আবেদনের ‘অসাধারণ’ লিস্টিং প্রক্রিয়া নিয়ে আপত্তি জানালেন সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের (এসসিবিএ) সভাপতি দুষ্যন্ত দাভে। প্রধান বিচারপতির নির্দেশেই আবেদনের এ হেন লিস্টিং হয়েছে কি না, তাই নিয়ে শীর্ষ আদালতের সেক্রেটারি জেনারেলের কাছে প্রশ্ন তুললেন তিনি। বুধবার অর্ণবের জামিনের আবেদন সুপ্রিম কোর্ট মঞ্জুর করে দিলেও রয়ে গিয়েছে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন। সুপ্রিম কোর্টে জমে থাকা অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি স্থগিতথাকলেও কী কারণে আবেদন জানানোর পরের দিনই শুনানির দিন ধার্য করা হল, তাই নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি।মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের সেক্রেটারি জেনারেল সঞ্জীব এস কালগাঁওকরকে পাঠানো চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘এসসিবিএ সভাপতি হিসেবে আপনাকে এই চিঠি লিখে আগামিকাল (বুধবার) ওই মামলার শুনানি লিস্টিংয়ের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। যদিও ওঁর (অর্ণব গোস্বামী) সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানানোর বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার কোনও অভিপ্রায় আমার নেই। কিন্তু এখানে উদ্বেগের বিষয় হল, কোভিড অতিমারী পরিস্থিতির মধ্যে গত আট মাস যাবৎ আপনার নেতৃত্বে থাকা রেজিস্ট্রি শুনানি লিস্টিংয়ের ব্যাপারে পক্ষপাতিত্বকে প্রশ্রয় দিচ্ছে।’কোনও রকম সরকারি শিরোনামহীন ওই চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘বিষয়টি উদ্বেগজনক কারণ যখনই অর্ণব গোস্বামী সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানাতে চান, তখনই তাঁর আর্জি অগ্রাধিকার পায়।’দাভের দাবি, একাধিক আইনজীবীর থেকে তিনি অভিযোগ পেয়েছেন যে, বহু দিন ধরে তাঁদের দায়ের করা বহু জরুরি শুনানির দিন মাসের পর মাস ধার্য করেনি সুপ্রিম কোর্ট। তার মধ্যে বেশ কয়েকটি জামিনের আবেদনও রয়েছে বলে জানিয়েছেন দাভে। অথচ অর্ণবের জামিনের আবেদন তড়িঘড়ি শুনানি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ এসসিবিএ সভাপতির।২০১৮ সালের এক আত্মহত্যা সংক্রান্ত মামলায় বম্বে হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে গত সোমবার সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছিলেন অর্ণব। দাভের দাবি, ‘গতকাল আবেদন জমা পড়ল, এবং সঙ্গে সঙ্গে চূড়ান্ত না হলেও ডায়ারি নম্বর দিয়ে দেওয়া হল এবং বুধবারের শুনানি তালিকায় তা অন্তর্ভুক্ত করা হল। শাসন ক্ষমতার চূড়ান্ত অপব্যবহারের এ এক দৃষ্টান্ত বিশেষ। বোঝাই যাচ্ছে, যিনিই এই নির্দেশ দিয়ে থাকুন, তিনি শাসকদলের পক্ষে। মনে হচ্ছে বিশেষ কোনও কোনও আইনজীবীর মক্কেলদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে, যা সুপ্রিম কোর্টের মতো মহান প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তির পক্ষে কখনই সহায়ক নয়।’চিঠিতে দাভে আরও লিখেছেন, ‘সকলেরই জানা আছে, এমন নজিরবিহীন দ্রুত লিস্টিং প্রধান বিচারপতির বিশেষ নির্ধেশ ছাড়া সম্ভব নয়।’কোনও বিশেষ মামলার শুনানির লিস্টিং সম্পর্কে উল্লেখ না করলেও দাভের ইঙ্গিত কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরমের জামিনের শুনানির দিকেই ইঙ্গিত করছে। মামলার শুনানির দিন ধার্য না হওয়ায় বর্ষীয়ান রাজনীতিককে দীর্ঘ কয়েক মাস হাজতবাস করতে হয়। দাভের প্রশ্ন, লিস্টিং প্রক্রিয়া কম্পিউটার ভিত্তিক হওয়া সত্ত্বেও কী করে এমন হতে পারে? এ ছাড়া, মামলা বিষয়ক নথি শুধুমাত্র কয়েকটি বেঞ্চের মধ্যে সরবরাহ করা হতে পারে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি।