সিবিআই দাবি করেছিল, ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর যে করসেবকরা অযোধ্যায় জড়ো হয়েছিলেন, তাঁদের প্ররোচনা দিয়েছিলেন বিজেপি এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতারা। সেজন্য বাবরি মসজিদ ধ্বংসের বিভিন্ন সংবাদপত্রের রিপোর্ট, ছবি, ভয়েস রেকর্ডিং জমা দেওয়া হয়েছিল। ৩৫১ জন সাক্ষীর বয়ান এবং মসজিদ ধ্বংসের পর যে অভিযোগগুলি দায়ের হয়েছিল, তাও জমা পড়েছিল। কিন্তু লালকৃষ্ণ আডবানি এবং মুরলী মনোহর জোশীর আইনজীবী এমপি আলুওয়ালিয়া দাবি করেন, বাবরি ধ্বংসের পর যে দুটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল, তাতে ভিন্ন বয়ান ছিল। প্রথম এফআইআর (১৯৭/৯২) দায়ের করেছিলেন রাম জন্মভূমি থানার হাউস অফিসার প্রিয়ম্বনাথ শুক্লা। তাতে বেলা ১২ টার সময় মসজিদ ধ্বংস করা হয়েছিল বলে লেখা হয়েছিল এবং অজ্ঞাতপরিচয় করসেবকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছিল। ওই থানায় দ্বিতীয় এফআইআরে (১৯৮/৯২) আবার লেখা হয়েছিল, সকাল ১০ টায় মসজিদ ধ্বংস করা হয়েছে। তাতে আডবানি, মুরলী মনোহর-সহ অন্যান্য নেতাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছিল। সেই এফআইআর দায়ের করেছিলেন সাব-ইন্সপেক্টর গঙ্গাপ্রসাদ তিওয়ারি। শুনানির সময় আহলুওয়ালিয়া দাবি করেন, দুটি এফআইআর একই থানায় দায়ের করা হয়েছিল। কিন্তু ব্যক্তি বিশেষের উপর আঙুল তুলতে দ্বিতীয় এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল। রায়ে বলা হয়েছে, ‘কেন সেই কাজ করা হয়েছিল, তা শুনানির সময় তার উপযুক্ত কারণ দর্শাতে পারেননি প্রিয়ম্বনাথ শুক্লা (তৎকালীন হাউস অফিসার)।’শুনানির সময় অভিযোগ করা হয়, মঞ্চে ছিলেন আডবানি, জোশী-সহ অন্যান্য নেতারা। তাঁরা স্লোগান দিচ্ছিলেন। যা বিতর্কিত কাঠামো ভেঙে ফেলার জন্য করসেবকদের প্ররোচিত করেছিল। কিন্তু সিবিআইয়ের তরফে কোনও স্লোগানের রেকর্ডিং বা নেতাদের কণ্ঠস্বরের নমুনা জমা দেওয়া হয়নি। আডবানিদের আইনজীবী দাবি করেন, রেকর্ডিংয়ে কারচুপি করা হয়েছে এবং সেই ভাষণ যে আডবানিরা দিয়েছিলেন, তাও প্রমাণিত হয়নি। বুধবারের রায়ে আদালতের পর্যবেক্ষণ, সেটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হতে পারত।প্রমাণ হিসেবে যে সংবাদপত্রের রিপোর্ট, ছবি ও ভিডিয়ো জমা দেওয়া হয়েছিল, তাতেও সমস্যা তৈরি হয়েছিল। রায়ে বিচারক জানিয়েছেন, সংবাদপত্রের যে রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছিল, সেটি আসল মাধ্যমে ছিল না। ফরেন্সিক ল্যাব থেকে ভিডিয়োগুলি যাচাই করা হয়নি। যে ছবিগুলি জমা দেওয়া হয়েছিল, সেগুলির নেগেটিভ জমা দেওয়া হয়নি।অযোধ্যার কোনও বাসিন্দার সাক্ষ্য নেওয়া হয়নি। যিনি জানিয়েছেন যে আডবানিরা জনতাকে প্ররোচিত করেছিল। রায়ে বলা হয়েছে, 'তদন্তের সময় কেউ এগিয়ে আসেননি এবং সাক্ষ্য দেননি যে বিতর্কিত কাঠামো ভেঙে ফেলার ক্ষেত্রে তিনি যুক্ত ছিলেন। একইসঙ্গে এটাও বলা যায়, তদন্তের সময় কেউ বলেননি যে তিনি নেতাদের ভাষণে উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিলেন এবং ধ্বংসে অংশগ্রহণ করেছিলেন।'আদালতের পর্যবেক্ষণ, বাবরি মসজিদের ধ্বংসের সময় গোয়েন্দা রিপোর্টে সতর্ক করা হয়েছিল যে কিছু ‘অযাচিত কাজে’ কিছু ‘সমাজবিরোধী লোকজন’ যুক্ত থাকতে পারে। আদালত জানিয়েছে, প্রত্যক্ষদর্শী অনুজ গুপ্ত বয়ান দিয়েছেন যে জনতার মধ্যে ছিল কয়েকজন ‘ডাকাত ও অপরাধী’। বাবরি মসজিদের ধ্বংসের সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে ছিলেন তিনি। অযোধ্যায় ছিল পোস্টিং। আদালতে সাক্ষ্যও দিয়েছিলেন তিনি।