দু'জায়গার দূরত্ব প্রায় ১৩০ কিলোমিটার। দেশও আলাদা। কিন্তু বাংলাদেশের ওড়াকান্দিতে দাঁড়িয়ে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, তাতে পুরোপুরি রাজনৈতিক বার্তা খুঁজে পেলেন পর্যবেক্ষকরা। তাঁদের বক্তব্য, ওড়াকান্দিতে দাঁড়িয়েই পশ্চিমবঙ্গ ভোটের একপ্রস্থ প্রচার সেরে নিলেন মোদী।বাংলাদেশ সফরের দ্বিতীয় দিনেই গোপালগঞ্জে মতুয়া ধর্মের প্রবক্তা হরিচাঁদ ঠাকুর জন্মস্থানে যান মোদী। সেখানে ওড়াকান্দি মন্দিরে প্রার্থনা করেন। পরে নিজের ভাষণে দাবি করেন, কীভাবে শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে এসেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, তিনি নিয়মিতভাবে শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের অনুগামীদের থেকেও অনেক কিছু শিখেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি ঠাকুরবাড়িতে গিয়েছিলাম। আমার মনে আছে, আমি পশ্চিমবঙ্গের ঠাকুরনগরে গিয়েছিলাম, তখন আমার মতুয়া পরিবারের সদস্যরা আমায় অপরিসীম ভালোবাসা দিয়েছেন। বিশেষত বড়মা যেভাবে আমায় কাছে টেনে নিয়েছিলেন, মায়ের মতো আশীর্বাদ করেছিলেন, তা আমার জীবনের অন্যতম মূল্যবান সম্পদ। ঠাকুরনগর থেকে বাংলাদেশে এসে একইরকম অনুভূতি হচ্ছে।’ শনিবার মোদী দাবি করেন, দীর্ঘদিন ধরেই ওড়াকান্দিতে আসার ইচ্ছা ছিল তাঁর। ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথমবার বাংলাদেশে এসেও ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন। অবশেষে শনিবার সেই ইচ্ছাপূরণ হয়েছে। যদিও ঠিক পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচনের সময় ‘কূটনৈতিক’ সফরে মোদী ওড়াকান্দিতে যাওয়ায় অনেকেই রাজনৈতিক ছায়া দেখতে পাচ্ছেন। এমনিতে পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ৩৫ টি কেন্দ্রে মতুয়া ভোট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে সেই ভোটের একটা বড় অংশ গিয়েছিল বিজেপির ঝুলিতে। কিন্তু নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের কার্যকর হওয়া নিয়ে টালবাহানার জেরে মতুয়াদের মধ্যে সেই সমর্থন কিছুটা হলেও ধাক্কা খেয়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, বিশেষত যেভাবে মতুয়া সমাজের প্রশস্তি করলেন, তাতে ঠাকুরনগর এবং নদিয়ার মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখার কৌশল স্পষ্ট। এমনকী বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরেরও ভূয়সী প্রশংসা করেন মোদী। জানান, শান্তনু তাঁর থেকে বয়সে ছোটো হলেও বনগাঁর সাংসদের থেকে অনেক কিছু শিখতে পারেন। কারণ শান্তনু শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের ভাবাদর্শে অনুপ্রাণিত। মোদী বলেন, ‘এটা ভারত এবং বাংলাদেশের আত্মিক সম্পর্কের তীর্থক্ষেত্র।’ সঙ্গে মোদী আশ্বাস দেন, ওড়াকান্দিতে প্রাথমিক স্কুল তৈরি করবে ভারত সরকার। সেইসঙ্গে ওড়াকান্দিতে যে ভারতীয়রা আসেন, তাঁদের আরও সাহায্য করবে কেন্দ্র।