আট সপ্তাহের ভ্রূণ মাতৃ জঠরে নয়, বেড়ে উঠছিল অন্তঃসত্ত্বার যকৃতে! এমনই বিরলতম রোগে আক্রান্ত এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলার প্রাণ বাঁচালেন গোয়া মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকরা। অন্তঃসত্ত্বা ওই মহিলার অত্যধিক রক্তক্ষরণ হওয়ায় প্রাণের ঝুঁকি ছিল বলেই জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। বমি ও তলপেটে ব্যথার উপসর্গ নিয়ে যখন তাঁকে হাসপাতালে ভরতি করা হয়, তখন চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বুঝতে পারেন যে ওই মহিলার যকৃৎ অস্বাভাবিকভাবে ফুলে রয়েছে। তাঁকে তৎক্ষণাৎ রেডিয়োলজি বিভাগে স্থানান্তর করা হয়। আর পরীক্ষা করে বোঝা যায়. এটা ইন্ট্রাহেপাটিক প্রেগন্যান্সি।এই বিষয়ে গোয়া মেডিক্যাল কলেজের ডিন ড: শিবানন্দ বন্দেকর সাংবাদিকদের জানান, রেডিয়োলজি বিভাগে তখন উপস্থিত ছিলেন ড: শিখা লাওয়ান্দে ও গ্লোরি। আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁরা প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করে দেখেন, আড়াই মাসের অন্তঃসত্ত্বা ওই মহিলার যকৃতের ডানদিকে রক্তের পাশাপাশি হৃৎপিণ্ডের গহ্বরও রয়েছে।যা জীবনহানি ঘটাতে পারে। পরিস্থিতি যে জটিল তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি। তড়িঘড়ি চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।রেডিয়োলজি বিভাগের প্রধান ড: জীবন ভার্নেকার বলেন, ‘যকৃতের মধ্যেই গর্ভধারণ করেন ওই মহিলা। ভ্রূণের অর্ধেক অংশ ভিতরে, বাকিটা বাইরে বেরিয়ে ছিল। যখন রোগীকে স্ক্যান করা হয়েছিল, তখন হৃদয়ের সঙ্গে একটি ভ্রূণের থলি খুঁজে পেয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। লিভারের মধ্যে হৃদপিণ্ডের স্পন্দন ছাড়াও একটি জীবন্ত ভ্রূণ গর্ভাবস্থায় ছিল। আরও কয়েকবার পরীক্ষা করার প্রয়োজন ছিল, কারণ এটি একটি বিরলতম ঘটনা। রোগীকে তৎক্ষণাৎ অস্ত্রোপচার করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।’ কারণ পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া যায় এটা ইন্ট্রাহেপাটিক এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি।গোটা বিষয়টা জেনারেল সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ফ্রান্সিস নোরোনা বলেন, ‘আমাদের ওই ভ্রূণকে যকৃতের মধ্যে থেকে বের করে আনতে হয়েছে। তারপরই রক্তক্ষরণ বন্ধ করা সম্ভব হয়। অস্ত্রোপচারের ১৩ দিনের মাথায় ওই মহিলাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের জেরে রোগীর শারীরিক অবস্থা ভালো ছিল না। আমরা ভ্রূণটি যকৃতের মধ্যে থেকে বের করি।’ তবে রোগীর জরুরি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর। অস্ত্রোপচারের ১৩ দিনের মাথায় হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান ২৫ বছরের ওই যুবতি।চিকিৎসক গুরুপ্রসাদ পেডনেকার এই বিষয়ে বলেন, ‘আন্তবাহ্যিক অন্তঃস্বত্তা এমনই একটি বিরলতম রোগ যা মোট ৪১টি ঘটনা গোটা বিশ্বে নথিভুক্ত রয়েছে। যার মধ্যে ভারতে মাত্র দুটি এমন ঘটনা সামনে এসেছে। প্রথমটি ১৯৮২ সালে লখনউয়ে—যেখানে মা ও শিশুকে বাঁচানো সম্ভব হয়েছিল। দ্বিতীয়টি ২০১২ সালে দিল্লিতে। যেখানে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। এই ধরনের রোগের ক্ষেত্রে যকৃতে রক্তের চাপ বেড়ে যায়, কারণ যকৃৎ এমন একটি অঙ্গ যেখানে রক্তনালী থাকার কারণে তা দ্রুত চলাচল করতে থাকে। যদি আমরা এই প্রেগন্যান্সি চালিয়ে নিয়ে যাই, সেক্ষেত্রে যকৃতে এত পরিমাণে রক্ত চলাচল করবে যার ফলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।’ উল্লেখ্য, ওই যুবতির দুটি সন্তান রয়েছে এবং ৬ বার অন্তঃসত্ত্বা হয়েছিলেন, যার মধ্যে তিনবার গর্ভপাতও হয়েছিল।