শেষ ৫০ বছরে বাংলাদেশের সেরা ক্রীড়াবিদ কে? সেরা ৫০ এ-ই বা কারা থাকবেন? দেশের অর্ধশতাব্দী উপ𒀰ꦯলক্ষে ক্রীড়াবিদদের এমন তালিকা করতে কিছু বিজ্ঞ মানুষকে দিয়ে একটা র্যাঙ্কিং করিয়েছিলাম৷
অবাক হয়ে খেয়াল করলাম, তালিকার উপরের দিকে প্রত্যাশামত ক্রিকেটারদের আধিক্য নেই৷ বরং ফুটবলার, দাবাড়ু–, বক্সার, শুটাররা ভালোমতোই ঢুকে পড়েছেন৷ তালিকাটা কৌতূহল জাগিয়ে তুলেছে বলে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলাম৷ তাতে আরও একটা মজার জিনিস বের হল৷ শীর্ষে যে সব ক্রিকেটাররা আছেন, তাঁরা সব এই প্রজন্মের৷ যখন অন্য সব খেলার ক্ষেত্রে তারকারা সব পুরনো দিনের৷ ক্রিকেটে শাকিব-মাশরাফি, ফুটবলে সালাহউদ্দিন-মুন্না৷ দাবায় নিয়াজ-রানি৷ দেখতে দেখতে মনে হল, এটাই আসলে পঞᩚᩚᩚᩚᩚᩚᩚᩚᩚ𒀱ᩚᩚᩚ্চাশ বছরের খেলা আর খেলার দিকবদল চিত্রিত করে সঠিকভাবে৷ প্রথম দুই-তিন দশক, মানে নব্বই দশক পর্যন্ত ছিল সব খেলা৷ এরপর শুধুই ক্রিকেট৷ পঞ্চাশ📖 বছরের চিত্র খোলা চোখে ক্রিকেটের সাফল্যের গল্প৷ চোখ কচলে দেখলে আসলে ক্রিকেটের তোড়ে অন্য সব খেলার হারানোর গল্পও৷ একদিকে ক্রিকেটীয় তোরণ তৈরির ঝলমলে ছবি৷ ঠিক তাঁর পিছনের অন্ধকারে অন্য সব খেলার সমাধিক্ষেত্রও৷
পৃথিবীতে খুব কম দেশ আছে (খুব সম্ভবত নেই-ই) যে দেশের প্রধান খেলা বদলে গিয়েছে৷ বাংলাদেশে ছবিটা এমন পাল্টেছে মাঝেমধ্যে প্রশ্ন জাগে, ফুটবলের সেই জোয়ারের দিনগুলো সত্যিই কি ছিল! নাকি সেসব অন্য জন্মের ঘটনা৷ নব্বই দশক পর্যন্ত খেলা মানেই ছিল ফুটবল৷ আবার ঠিক ফুটবল নয়৷ আসলে সব খেলা৷ তখনকার সময় কোনও 🤪খেꦜলা সারা বছর হওয়ার সুযোগ ছিল না৷ কারণ, অত আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা ছিল না৷ স্পনসরদেরও অত চাপ ছিল না যে জনপ্রিয় খেলাটা থেকে যতভাবে সম্ভব নিংড়ে নেওয়া হবে৷ এখন যে কারণে লিগের বাইরে আইপিএল-বিপিএল, ত্রিদেশীয়-চতুর্দেশীয় সিরিজ, তখন ফুটবলের যে রমরমা যে এখনকার মতো স্পনসর আর বাণিজ্য অধ্যুষিত যুগ হলে কত যে টুর্নামেন্ট হত৷ সেসব হলে সারাবছর ফুটবলে মেতে থাকতেন মানুষ৷ সুবিধা হল, তা না হওয়ায় বছরের তিন-চার মাসের ফুটবল মরশুমে বাদ দিলে বাকি সময় হাতে থাকত অন্য খেলার দিকে মনোযোগ দেওয়ার৷ তাই টিটি, ব্যাডমিন্টনে প্রচুর মানুষ হত৷ বাস্কেটবল-অ্যাথলেটিক্সে মনযোগ দেওয়ারও সময় ছিল৷ তাই কয়েক মাস ফুটবল৷ বাকি সময় অন্য খেলা৷ ফুটবলারদের দেবতাতুল্য তারকাখ্যাতি৷ কিন্তু মানুষ খেয়াল রাখে বলে স্প্রিন্টার শাহ আলমও মনোযোগ পান৷ ডানা-মরিয়মদের ব্যাডমিন্টনও উত্তাপ তৈরি করে৷ ছোটো খেলার তারকারা সমাদর পান বলে সেই খেলায়ও পরের প্রজন্ম আগ্রহ বোধ করে৷ যাঁর যে খেলায় ক্ষমতা বা প্রতিভা, তিনি সেখানে নিজেকে বিকশিত করার চেষ্টা করেন৷ সাঁতারু বা বক্সার হলে মোশাররফদের মতো তারকার মর্যাদা মেলে বলে কিশোররা সাঁতার কাটেন৷ বক্সিংয়েও হাত পাকানোর চেষ্টা করেন৷ আবার সেসব খেলায় কিশোর-তরুণদের আগ্রহ আছে, সেই সময়ের সীমিত কাঠামোয় ঠিকই পাড়ায় মহল্লায় বক্সিং খেলার পর্যন্ত বন্দোবস্ত হয়ে যায়৷ ৮০'র দশকের কিশোরদের মনে থাকবে, ১৯৮৫ এশিয়া কাপে বাংলাদেশে হওয়া এবং বাংলাদেশের সাফল্যসূত্রে হকির এমন জোয়ার তৈরি হয়েছিল যে সবাই খেলাটা খেলতে চান৷ কিন্তু সরঞ্জাম দামী এবং দুর্লভ৷ সমস্যা নেই৷ নিজেরাই বাঁশ দিয়ে বিকল্প তৈরি করে দেশকে বানিয়ে ফেলল হকিময়৷ এভাবেই কখনও বাংলাদেশ সাঁতারময়৷ কখনও বক্সিংময়৷ এবং কখনও ক্রিকেটময়ও৷
তখনও ক্রিকেট ছিল৷ কেউ কেউ আপত্তি করে বলেন, ক্রিকেট তখন দুই নম্বর খেলাও ছিল না। কিন্তু এর সঙ্গে একমত নই৷ ক্রিকেট ছ🧸িল বিপুল ব্যবধানে পিছিয়ে থাকা দুই নম্বর৷ এখনকার ফুটবলের সঙ্গে তাঁর দারুণ মিল৷ এখন মানুষ ক্রিকেটের চোখে ফুটবলকে দেখেন৷ ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক সাফল্যের সমতুল্য সাফল্য ফুটবলে চায় এবং পায় না বলে খেলাটা এমন অনাদৃত৷ তখন ফুটবলের সমাদর ছিল পুরোই ক্লাবভিত্তিক (যেমনটা পুরো দুনিয়াতে এখনও৷ আবাহনী-মহামেডান-ব্রাদার্স এই ফুটবলভিত্তিক এবং সমর্থকপুষ্ট ক্লাবগুলো ক্রিকেট দলও করত৷ অনুগত ক্লাব সমর্থকেরা ক্রিকেটেও সমর্থনসূত্রে মনোযোগ রাখত৷ নিজের ক্লাব কেমন করছে না করছে-দেশের ক্রিকেট ছিল এই অঙ্কজাত সমীকরণে৷ তবে ক্রিকেটীয় ভালোবাসা বা উত্তেজনা ছিল আন্তর্জাতিকতাবাদী৷ ভারত-পাকিস্তান প্রায় আবাহনী-মহামেডানের কাছাকাছি উত্তেজনা যোগাত৷ ইমরান-গাভাসকার𝔍 নিয়ে ধুন্ধুমার বিতর্ক৷ এখনকার ফুটবলের সঙ্গে মিলটা পাচ্ছেন তো! দেশের ফুটবল নিয়ে উদাসীনতার আড়ালে ব্রাজিল-আর্জেন্তিনা আর মেসি-রোনাল্ডো নিয়ে প্রায় জীবন-মরণ উন্মাদনা৷ কিন্তু ই যে, স্থানীয় ফুটবলের মত তখনকার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটও সাময়িক, সারা বছরের ব্যাপার নয় বলে উন্মাদনার দিন আসত বছরে এক-দুই বার৷ বাকি অফুরন্ত সময়ে ক্রীড়ামনের অন্য খেলায় মনযোগ দিতে মানা নেই৷
নব্বই দশকে বিশ্ব বদলাল৷ বদলাল বাংলাদেশও৷ খালি চোখে এটাও দেখা যাবে না যে এই ভূ- রাজনীতির বদল কীভাবে ক্রীড়াবোধও বদলাল৷ বিশ্বে সাম্য আর সমাজতন্ত্র পুরনো বলে পরিত্যাজ্য হয়ে চকচকে এক🌸 আধুনিক দুনিয়ার ঝলকানি এল৷ খোলা বাজার৷ যোগ্যতা অনুযায়ী যে যতদূর খুশি যেতে পারে৷ মানুষের স্বাভাবিক যে প্রবণতা তার জন্য দারুণ আকর্ষণীয়৷ ব্যক্তিগত বিধিনিষেধের সঙ্গে অর্থ আর বাণিজ্যের বিধিনিষেধও উঠে যাওয়ায় বিনিয়োগ-আর্থিক স্বচ্ছলতার অফুরন্ত সম্ভাবনা৷ খোলা বিশ্বের হাওয়া গায়ে লাগিয়ে মানুষ তাতে ঝাঁপালেন৷ উত্তেজনায় ব্যক্তি মানুষ খেয়াল করলেন না তিনি আসলে নিজেকে বিলিয়েই দিচ্ছেন৷ আর্থিক অগ্রগতির চেষ্টায় সংস্কৃতি-খেলা সব এমন খেলো ব্যাপার হল যে এর প্রয়োজনই যেন আর ঠিক থাকল না৷ আরও একটা অঙ্ক এল৷ সবকিছু আছে, তবে সেটা এক নম্বরের জন্য৷ জিততে পারলে, অন্যদের প🌞িছনে ফেলতে পারলে তবেই তুমি সফল৷ রাজনীতি আর সমাজের এই অঙ্কের ফেরেই সমস্যায় পড়ল খেলা৷ যে খেলায় তুমি জিতবে, এক নম্বর হবে সেই খেলাটাই খেলবে৷ বাকিটা পয়সা দেবে না৷ মান দেবে না৷ ভালোবাসার কথা বলে এসবে মেতে থাকা বাতিল সময়ের বিলাসিতা৷
এদিকে বিশ্বের এই হাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশেও বদল এসেছে৷ ১৫ বছরের সামরিক শাসন শেষে গণতন্ত্রে দেশ৷ খোলা সমাজ, প্রচুর পুঁজি৷ নতুন ধারার সংবাদমাধ্যম এল৷ এরা দেখল এবং দেখাল ক্রিকেটেই 🌠ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা৷ ততদিনে আরও একটি ঘটনা ঘটেছে৷ জিম্বাবোয়ে টেস্ট সেস্টাস পেয়ে গিয়েছে, এর বাইরে আরও তিনটি দেশ বিশ্বকাপ খেলবে, কাজেই বাংলাদেশের সোনালী সুযোগ৷ সেই সম্ভাবনার অঙ্কই ক্রীড়াবোধ বদলাতে শুরু করল৷ ফুটবলে কিছু হবে না, ক্রিকেটেই ভবিষ্যৎ 𓆏ধরে এমন একটা হাওয়া তৈরি হল যে বাকি সব খেলার সেই হাওয়ায় উড়ে যাওয়ার দশা তৈরি হয়েছিল৷ ক্রিকেটে মনযোগ, টাকা, ভালোবাসা সব যোগ হল৷ এসব গায়ে মেখে ক্রিকেট উড়েছে৷ বাকিরা ডুবেছে৷ আবার কেউ কেউ ক্রিকেটের মতো উড়তে গিয়ে পা মচকেছে৷
সেই সময়ের ক্রিকেট সংগঠকরা সম্ভাবনার হাইওয়ে ধরেই চলেছেন৷ চালিয়েছেন৷ ক্রিকেটে সাফল্য এসেছে৷ আরও সাফল্যের সম্ভাবনায় আরও নিজেদের ঢেলে দিয়েছি৷ এসবে কোনও সমস্যা ছিল না৷ ক্রিকেট বাংলাদেশকে যা দিয়েছে, সত্যি বললে বাকি সব খেলা মিলেও সেই সাফল্য দিতে পারেনি৷ শাকিব ক্রিকেটের বিশ্ব পর্যায়ে যে মাত্রায় পৌঁছেছেন, বাংলাদেশের আর কোনও ক্রীড়াবিদ তাঁর ধারেকাছে যেতে পারেননি৷ যতটা এগিয়ে যাওয়া উচিত ছিল, ততটা ক্রিকেটে পারলাম কিনা, সেই প্রশ্ন থাকবে৷ ইদানিং ব্যর্থ সময়ে সেটা নিয়ে আরও বড় প্রশ্ন৷ বৃহত্তর ক্রীড়া মানচিত্র বিবেচনায় গেলে ক্রিকেটীয় প্রভাবটা কেবল হারজিতের মধ্যে নেই৷ ক্রিকেট এখন তারুণ্যের স্বপ্ন৷ ক্রিকেটারেরা সবচেয়ে বড় সামাজিক নায়ক৷ এখানেই ক্রিকেট মিলে যাচ্ছে বাণিজ্য আর রাজনীতির অঙ্কের সঙ্গে৷ খেলাটা দেশের এক নম্বর আবেগ বলে বাণিজ্য দুনিয়া এটাকে যতভাবে সম্ভব ব্যবহার করতে চায়৷ আর তাই ক্রিকেটেই সব বিনিয়োগ৷ সামগ্রিক মনযোগ৷ তাতে ক্রিকেটের জৌলুস আরও বাড়ে৷ মানুষ আরও ক্রিক💝েটমুখী হয়৷ খেলা বলতে তাই টিকে থাকল শুধু ক্রিকেট৷
আবার বিশ্ব স্পনসর আর বাণিজ্যের ফেরে খেলাটা চলতে থাকে সারা বছর৷ একসময়ের শীতের খেলা এমন ছটি ঋতুর ব্যাপার হয়ে গিয়েছে যে অন্য দিকে মনোযোগ দেওয়ার সময়ই নেই৷ সবাই ক্রিকেট দেখেন, কেউ কেউ চেষ্টা করেন৷ না পারলে বাদ দেন৷ নিজের সন্তানের অন্য খেলায় প্রতিভা আছে দেখলেও উৎসাহিত হওয়ার বদলে আতঙ্কিত হন মানুষ৷ সম্ভাবনাহীন একটা খেলায় মেতে যদি ভবিষ্যৎটা নষ্ট করে বসে! কাজেই সামান্য কিছ মানুষ শেষপর্যন্ত খেলেন৷ এতে করে সামগ্রিকভাবে একটা ক্রীড়াবিমুখতাও তৈরি হচ্ছে৷ রাস্তার ধারে বা মাঠে👍 দলে-দলে বাচ্চারা খেলছে, সেই দৃশ্য এখন পুরনো আর্কাইভেই মেলে শুধু৷
৫০ বছর পূর্তির দিনে লেখাটা লিখতে বসে এই ছবি হারিয়ে যাওয়ার দুঃখটা খুব বুকে বাজে৷ ক্রিকেটানন্দ আবার সেটাকে ভুলিয়ে রাখে৷ এই ভুলে থাকি বলে তবু কিছু আনন্দ নিয়ে বাঁচি৷ আবার ভুলে থাকি বলে অন্য খেলাকে অবহেলার ভুলটা বয়েই চলে৷ অর্ধশতাব্দীর খাতার শেষ পাতায় বোধহয় এটাই লেখা হবে৷ ক্𒁏রিকেটে অর্জন🍰৷ বাকি সব বর্জন৷
(বিশেষ দ্রষ্টব্য : প্রতিবেদনটি ডয়চে ভেলে থেকে নেওয়া হয়েছে। সেই প্রতিবেদনই তুলে ধরা হয়েছে। হিন্দুস্তান টাইমস বাংল💎ার ওকোনও প্রতিনিধি এই প্রতিবেদন লেখেননি।)
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।