আপনি কি ইলেকট্রনিক্সকে ভালোবাসেন? ইলেকট্রনিক্স নিয়ে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা কম খরচে ইলেক্ট্রনিক্সের কিছু কার্যকরী গ্যাজেট বানাতে চান? ইলেক্ট্রনিক্সের ছাত্রছাত্রী বা প্রায়োগিক দক্ষ🐬তাসম্পন্ন ব্যক্তিরা অবশ্যই ইলেকট্রনিক্স-নির্ভর বিবিধ স্বনির্ভর প্রকল্পকে নিজেদের জীবিকা হিসেবে বেছে নিতেই পারেন।
এই প্রসঙ্গে ইলেকট্রনিক বর্জ্যশিল্প ও এল.ই.ডি. আলোকশিল্প ছাড়া অন্যান𝕴্য কিছু ইলেকট্রনিক প্রকল্পের সম্পর্কে আলোচনা করলেন ওড়িশার জগৎসিংপুরের সি.এন.সি.বি. অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজির পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডঃ শুভেন্দু পণ্ডা এবং কলকাতার ব্যারাকপুর রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কলেজের ইলেকট্রনিক বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ডঃ প্রিয়দর্শী মজুমদার ও সন্দীপ দে।
তাঁরা জানালেন, ইলেক্ট্রনিক্সের প্রাথমিক কিছু ধারণার উপর ভিত্তি করে সহজেই বেশ কিছু প্রকল্প প্রস্তুত ও সেগুলিকে বাজারজাত করা সম্ভব। এই জাতীয় প্রকল্পগুলিকে মূলগতভাবে বেশ কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় - যেমন স্কুল/ কলেজের পরীক্ষাগারে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি (পাওয়ার সাপ্লাই বা ব্যাটারি, ভোল্টমিটার, এমমিটার), বিশেষজ্ঞদের পেশাগত প্রয়োজনে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি (ইলেকট্রিকাল লাইন কন্টিনিউইটি টেস্টার), সামাজিক প্রয়োজন ও চাহিদার উপর ভিত্তি করে তৈরি বিবিধ প্রয়োগমূলক গ্যাজেট (রাস্তার স্বয়ংক্রিয় বাতি, ভূমির আর্দ্রতা পরিমাপক গ্যাজেট, বৃষ্টিপাত নির্দেশক গ্যাজেট, মেটাল ডিটেক্টর), গৃহস্থালিতে ব্যবহৃওত গ্যাজেট (অডিয়ো স্পিকার, বিবিধ সুইচ, ব্যাটারি চার্জার, জলের ট্যাঙ্কের জলতল নির্দেশক গ্যাজেট), একান্তই সময় কাটানো বা বিনোদনমূলক গ্যাজেট (ইলেকট্রনিক পিয়ানো বা অর্গান, বিবিধ 🅠ইলেকট্রনিক্স গেম)।
অবশ্যই এর বাইরেও আর বেশ কিছু সহজে বানানো যায় এমন ইলেকট্রনিক প্রজেক্ট আছে। কোনও একটি ইলেকট্রনিক প্রজেক্টের কাজে হাত দেওয়ার আগে সেই প্রজেক্ট সম্পর্কে খুঁটিনাটি জানাটা খুবই জরুরি, নাহলে সার্কিট তৈরির সময় কোথায় ভুল হচ্ছে বা কেন প্রজেক্টটি সঠিকভাবে কাজ করছে না, তা বোঝা সম্ভব হবে না। প্রথমেই ঠিক করতে হবে, কী বানাতে চাইছেন। যে প্রয়ꦗোগটি বানাতে চাইছেন, তার বর্তনী বা সার্কিট আমরা বই বা ইন্টারনেট থেকে সহজেই জোগাড় করতে পারি। কিন্তু বর্তনীটি কীভাবে কাজ করছে, এই সম্পর্কে জ্ঞান থাকাটা দরকার। সেজন্য বিবিধ ইলেকট্রনিক উপাদানের (রেজিস্ট্যান্স, ক্যাপ্যাসিট্যান্স, ইন্ডাকট্যান্স, ডায়োড, ট্রান্সিস্টর, ফেট ইত্যাদি) কার্যকারিতা সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা জরুরি।
বর্তনীর চিত্রটির উপর ভিত্তি করে প্রয়োজনীয় উপাদানের একটা তালিকা আমাদের প্রস্তুত করতে হবে। বর্তনীর প্রতিটি উপাদানের কোড নম্বর এ𒅌বং কার্যকরী বিভব প্রভেদ, প্রবাহমাত্রা, ওয়াটেজ রেটিং ইত্যাদি মান-সহ ডেটা-শিট ইন্টারনেটেই পাওয়া যাবে| ইলেক্ট্রনিক্সের প্রায় প্রতিটি প্রজেক্টেই উপরে লেখা উপাদানগুলি ছাড়াও এক বা একাধিক সেমিকন্ডাক্টর চিপ (আই.সি.) থাকবেই। কোনও একটি নির্দিষ্ট প্রজেক্টে কোন চিপটি ব্যবহার করবেন, তা বুঝতে গেলে চিপগুলির ম্যানুয়াল বা ডাটা-শিট ভালো করে বোঝার প্রয়োজন আছে। সঠিক চিপ ব্যবহার করাল ফলে প্রজেক্ট তৈরির পরিশ্রম ও খরচ কমে যায়। প্রজেক্টকে আকারে ছোটো রাখতেও সাহায্য করে, তার কারণ চিপগুলির ভিতরে মাত্র কয়েক🍌 বর্গ মিলিমিটার ক্ষেত্রফলের মধ্যেই মাইক্রো-ইলেকট্রনিক প্রযুক্তির সাহায্যে নির্দিষ্ট বর্তনী তৈরি করা থাকে। প্রজেক্টগুলিতে বিচ্ছিন্ন উপাদান, যেমন রোধ, ধারক, ডায়োড ইত্যাদি দিয়ে তৈরি বর্তনীর বাইরের অংশকে আমরা চিপের ভিতরের মাইক্রো-বর্তনীর সঙ্গে সঠিকভাবে মিলিয়ে দিই। বিভিন্ন কম্পোনেন্ট বা আই.সি. গুলিকে সংযুক্ত করার জন্য ইলেকট্রিক তার তো অবশ্যই লাগবে। কিন্তু তা ছাড়াও একটা ভূমি বা বেস দরকার যার উপর সম্পূর্ণ প্রজেক্টটি দাঁড়িয়ে থাকবে।
প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সব থেকে উপযুক্ত বেস হল, ব্রেডবোর্ড বা ছিদ্রযুক্ত ইলেকট্রনিক বোর্ড। ছিদ্রগুলি দিয়ে ইলেকট্রনিক কম্পোনেন্ট, ইলেকট্রিক তার, আই.সি. ও ব্যাটারিগুলিকে নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে সংযুক্ত করা যায়। এই পদ্ধতিতে তৈরি বর্তনী ইচ্ছামতো খুলে নেওয়া বা পালটে ফেলা সম্ভব। সমগ্র কাজটি হাত💃েকলমে করার পরিবর্তে🐎 ইলেকট্রনিক্স সার্কিট তৈরির কোনও সিমুলেশন সফটওয়্যার ব্যবহার করেও করা সম্ভব।
তবে নিজের হাতে কোনও সার্কিট তৈরির মজাই আলাদা। প্রজেক্টটির কার্যকারিতা চূড়ান্ত হলে ব্রেডবোর্ডের পরিবর্তে ভেরোবো💜র্ডে সবকটি কম্পোনেন্ট ও আই.সি. কে সোল্ডারিং করে নেওয়া যায়| এর জন্য একটি সোল্ডারিং কিটকে হাতের কাছে রাখতে হবে। ভেরোবোর্ডে সোল্ডারিং করা প্রজেক্টগুলি নিজের প্রয়োজনমতো বাড়িতে꧑ ব্যবহার করা যায়। তবে এগুলিকে বাজারজাত করতে গেলে অবশ্যই একটা ব্যবসায়িক রূপ দেওয়া প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে একটি প্রজেক্টই হয়তো বহুসংখ্যায় তৈরি করতে হবে। তাই প্রতিবার আলাদাভাবে ভেরোবোর্ডে সোল্ডারিং করে করতে গেলে সময়ের অপচয় হবে। খরচও পুষিয়ে ওঠা যাবে না। তাই প্রতিটি প্রজেক্টকে গুণিতক সংখ্যায় বাজারজাত করতে গেলে সেই প্রজেক্টের সার্কিটটির অনুরূপ প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড (পি.সি.বি.) ডিজাইনিং করিয়ে নিতে হবে। তাতে গুণিতকের সংখ্যার নিরিখে প্রজেক্টের খরচ অনেকটাই কম পড়বে। আর আকারও কম্প্যাক্ট হবে।
শেষ কাজ হল, একটি সুদৃশ্য ধাতব (ও ক্ষেত্রবিশেষে কাঁচের) কেসিং তৈরি করা ও সেই কেসিংয়ের উপর൲ প্রজেক্টটির বিশেষত্ব ও প্রস্তুতকারকের বিবরণ ছাপিয়ে নেওয়া। ব্যস, তাহলেই আপনার বাড়ির ছোট্ট ল্যাবরেটরিতে ইলেকট্রনিক গ্যাজেট প্রস꧟্তুত। প্রয়োজনীয় লাইসেন্স নিয়ে নিন আর বেছে নিন আপনার পছন্দের ই-কমার্স সাইট বা নিজের একটি ছোটো ওয়েবসাইট তৈরি করে ফেলুন ও আপনার প্রজেক্টগুলি বাজারজাত করা শুরু করে দিন।
(লেখকদের মত ব্যক্তিগত)