নারী-পুরুষনির্বিশেষে সকলের জীবনেই একটা লড়াই থাকে। কিন্তু নারীদের মতো সমাজ পুরুষদেরও নির্দিষ্ট কিছু নিয়মে বেঁধে দেয়। পুরুষ কাঁদতে পারবে না, তাঁকেই সংসারের সব ভার নিজের কাঁধে তুলে নিতে হবের মতো আরও একাধিক বিষয়। আর এবার এই সবটা নিয়ে সমাজমাধ্যমের পাতায় লিখলেন জিতু কমল।
বৃহস্পতিবার স্যোশাল মিডিয়ায় জিতু লেখেন, ‘পুরুষ হতে গেলে আকাশের মতো অসীম হতে হয়, বটবৃক্ষের মতো ছায়াময় হতে হয়, মনের মধ্যে সমুদ্রের গভীরতা রাখতে হয়, পাহাড়ের উচ্চতার মতো ধৈর্য ধরতে হয়, নীলকন্ঠের মতো সব বিষ নিজের ভেতর ধারণ করতে হয়, চোখের জল বুকের ভেতর লুকিয়ে রাখতে হয়, সখ - আহ্লাদগুলোকে বাক্সবন্দি করে পরিবারের দ্বায়িত্ব পালন করতে হয়। নিজের হাজার স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে ছোট ভাই-বোন কিংবা ছেলে-মেয়ের স্বপ্নদ্রষ্টা হতে হয়।’
আরও পড়ুন: নতুন মেগায় শুভস্মিতার সঙ্গে জুটি বাঁধতে চলেছেন সৌরভ? HT Bangla-এর কাছে মুখ খুললেন নায়ক
সমাজ শেখায় পুরুষ চোখের জল ফেলতে পারে না, সেই কথার প্রসঙ্গ টেনে নায়ক লেখেন, ‘পুরুষ হতে গেলে কান্না মিশিয়ে দিতে হয় বৃষ্টির জলে। পুরুষ হতে গেলে সুখ বিসর্জন দিতে হয় হাসি মুখে। পুরুষ হতে গেলে নিজেকে পরিণত করতে হয় নারকেলে।’
তবে শুধু তো সংসার নয়, পুরুষের উপর অনেক ক্ষেত্রেই কোনও নারীর দায়িত্বও এসে পড়ে। নায়কের মতে, ‘পুরুষ হচ্ছে গ্রীষ্মের কাঠ-ফাটা রোদ্দুরে নারীর বটবৃক্ষের ছায়া আর হাত পাখার শীতল হাওয়া, বর্ষায় মাথার উপর ছাতা, শরতে সাদা নীল রঙের মেলায় প্রকৃতি উপভোগের অপার আনন্দ, হেমন্তের সকালে শিশির ভেজা ঘাস আর হালকা কুয়াশা প্রকৃতিতে মেলায় ঘোরার সঙ্গী, শীতে গায়ের কাঁথা আর বসন্তে প্রেমের জোয়ারে ভাসানো ঢেউ।’
আরও পড়ুন: বয়কটের ডাক উঠেছে! ছবির প্রচারেই কি তবে এতদিন পর অপারেশন সিঁদুর নিয়ে মুখ খুললেন আমির?
তবে এটুকুই শুধু একজন পুরুষের মাপকাঠি হতে পারে না। অভিনেতার মতে প্রকৃত পুরুষ সে, যে নারীর সুযোগ নেয় না বরং সর্ব ক্ষেত্রে তাঁর পাশে থাকে। জিতুর কথায়, 'যে অন্ধকার রাস্তায় নারীর দিকে লালসার হাত না বাড়িয়ে, দ্বায়িত্বের হাত বাড়ায়। পুরুষ তো সে, যে ভিড় বাসে অচেনা নারীকে সিট ছেড়ে দিয়ে, আগলে রাখতে সিটের পাশে দাঁড়ায়। পুরুষ তো সে, যে বন্ধুটা হাজারবার সুযোগ পেয়েও বান্ধবীর অন্ধ বিশ্বাসের মূল্যায়ন করতে জানে। পুরুষ তো সে, যে সংসারে সুখ অবিচল রাখতে নিজেকে বিলিয়ে দেয়। পুরুষ তো সে, যে সকল পরিস্থিতে পছন্দের নারীর হাতটা শক্ত করে ধরে রাখে।'
তবে বার বার অভিনেতার লেখায় পুরুষদের সেই সব বেদনা লুকিয়ে রাখার অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ হয়। জিতু লেখেন, 'পুরুষ তো সে, যে আসলে একটা মানুষ হয়েও মেশিনের মতো অবিরত চলে, পুরুষ তো সে, যে নিজের সকল ব্যথা - বে'দ'না লুকিয়ে সবাইকে ভালো রাখার ব্রতী হয়েছে। পুরুষ হচ্ছে পথ হারানোর নারীর পথ দেখানো নাবিক। পুরুষ হচ্ছে নারীর জীবনের ভরা ডুবিতে জাদুকরী এক খেয়া, পুরুষ হচ্ছে নারীর সুন্দর সাবলীল দিন, পুরুষ হচ্ছে নারীর মানসিক সুখ, শান্তির ঠিকানা।'
তাঁর মতে পুরুষ হলে জন্মালেই পুরুষ হওয়া যায় না, পুরুষ হয়ে উঠতে হয়। জিতুর কথায়, ‘পুরুষ কুলে জন্ম নিলেই পুরুষ হওয়া যায় না, পুরুষ তো সে, যে নারীকে ভোগের বস্তু কিংবা খেলনা মনে করে না, যে নারীকে নিজের হাতের পুতুল বানিয়ে রাখার চেষ্টা করে না, যে নারীকে সম্পত্তি মনে করে না, পুরুষ হওয়া সহজ নয়, পুরুষ আসলে সে, যে নারীকে আগলে রাখতে জানে, যে কোনও পরিস্থিতিতে নারীকে সম্মান করতে জানে, যে নারীকে সম্পদ মনে করে। পুরুষ হওয়া সহজ নয়।’
জিতুর জীবনেও এসেছিল নারী। নবনীতা দাসের সঙ্গে বেশ সুখেই সংসার করছিলেন তিনি। কিন্তু সহসাই হয় ছন্দপতন। তাঁরা বিচ্ছেদের পথে হাঁটেন। সেই সম্পর্কে কোনও উপলদ্ধি থেকেই কী এই কথা লিখলেন নায়ক?
তবে অভিনেত্রী শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে ছবি দিয়ে এই কথাগুলি ক্যাপশনে লিখে জিতুকে পোস্ট করতে দেখা যায়। সামনেই তাঁদের নতুন ছবি 'গৃহপ্রবেশ' আসছে। সেই ছবির কারণেই এই লেখা? নাকি তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের জের? তা অবশ্যই খুব একটা বোঝা যায়নি জিতুর পোস্ট দেখে।