গত মঙ্গলবার গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের কাছেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আততায়ীদের হাতে খুন হন শাহরিয়ার আলম সাম্য নামে এক ছাত্রনেতা। সেই ঘটনার পর আবারও একবার প্রতিবাদ, বিক্ষোভে উত্তাল হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। এই প্রেক্ষাপটে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বেহাল দশা তুলে ধরেছে বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম - 'প্রথম আলো'।
তাদের প্রকাশ করা প্রতিবেদন অনুসারে - গত মঙ্গলবার মধ্যরাত নাগাদ যেখানে ওই ছাত্রনেতা ও তাঁর দুই বন্ধু আক্রান্ত হন, সেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কার্যত মাদকসেবন, তোলাবাজি-সহ নানা ধরনের অসামাজিক ও বেআইনি কাজের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। অভিযোগ, আগে এইসব কুকর্ম চলত আওয়ামী লিগ ও তাদের ছাত্র সংগঠনের অঙ্গুলিহেলনে। আর, এখন সেসব আরও কয়েক গুণ বেড়েছে বিএনপি নেতৃত্ব এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় ছাত্রনেতার সৌজন্যে!
তদন্তমূলক ওই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, নানা ইতিহাসের সাক্ষী, ঢাকা বিশ্ববিদ্য়ালয় সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নেশাগ্রস্তরা দিনে-দুপুরে প্রকাশ্যেই ছিলিমে টান দেয়! আমজনতা সেসব দেখতে পেলেও, পুলিশকে সেখানে দেখা যায় না। তাছাড়া, প্রায় ৬৩ একর জমি নিয়ে গড়ে ওঠা এই উদ্যান নিয়মিত পরিষ্কারও করা হয় না। ফলে আবর্জনার স্তূপ জমে থাকে এখানে-ওখানে। রয়েছে অন্তত হাজার খানের অস্থায়ী খাবারের দোকান। যেগুলির থেকে নিয়মিত তোলাবাজি করা হয়।
এক মাদক ব্যবসায়ীর বয়ান থেকে জানা গিয়েছে,পুরো উদ্যানে ২৫ থেকে ৩০ জনের একটি চক্র মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তাঁরা অনেকেই দিনের বেলা ফুল বিক্রি করেন। তাঁদের পিছনে বড় বড় মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রক রয়েছেন!
তিনি আরও জানিয়েছেন, এখন মাদক সেবন অবাধ। রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতা-কর্মী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ছাত্রনেতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীকে (পুলিশ প্রশাসন) টাকা দিয়ে, তবেই এখানে মাদক ব্যবসা করা যায়!
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এই উদ্য়ানে বেআইনিভাবে দোকান দিতে গেলে দোকান প্রতি এককালীন ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা (বাংলাদেশি মুদ্রায়) তোলা দিতে হয়। এছাড়াও, দৈনিক দিতে হয় ৫০ থেকে ১০০ টাকা এবং সপ্তাহ শেষে আরও ২০০ থেকে ৫০০ টাকা নেয় তোলাবাজরা!
এই প্রেক্ষাপটে আজ (বৃহস্পতিবার - ১৫ মে, ২০২৫) সকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গড়ে ওঠা বহু বেআইনি ও অস্থায়ী দোকান ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। তবে, তাতে মূল সমস্যার স্থায়ী সমাধান আদৌ হবে কিনা, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।