বাংলা নিউজ > ঘরে বাইরে > পাহাড় আর ওঁদের কিছু শেখায় না, পাহাড় শুধু জিজ্ঞেস করে, আপলোড করেছ

পাহাড় আর ওঁদের কিছু শেখায় না, পাহাড় শুধু জিজ্ঞেস করে, আপলোড করেছ

পাহাড় আর ওঁদের কিছু শেখায় না, পাহাড় শুধু জিজ্ঞেস করে, আপলোড করেছ

Opinion Piece: এক সময়ে শুধু হাঁটার আনন্দেই পাহাড়ে যেত মানুষ। নতুন কিছু দেখার লোভ থাকত শুধু। এখন তার সঙ্গে জুড়েছে সার্টিফিকেটের লোভ। এর পিছনে রয়েছে কোন ইতিহাস? 

যদি কাগজে লেখো নাম: 'পাহাড়চূড়ায় সার্টিফিকেট সংস্কৃতি'

রহস্য,রোমাঞ্চ,প্রতিহিংসা,অ্যাডভেঞ্চার— এইসব ব্যাপারগুলো বাঙালির প্রিয়। সে সাহারায় শিহরণ কিংবা পাহাড়চূড়ায় আতঙ্ক ভালোবাসে।

তবে সেই ভালোবাসা সাধারণত বইয়ের পাতা, সিনেমা, এবং ওটিটি-র পর্দায় সীমাবদ্ধ। ফেলুদা-কিরীটী-ব্যোমকেশ থেকে আজকের একেন— বাঙালি এদের থেকে আজও মগজাস্ত্র প্রয়োগ করা শেখে। আর কেন জানি না, আমার মনে হয়, বাঙালির অ্যাডভেঞ্চারের বিস্তার তার কল্পনার জগতে , বিভূতিবাবুর শঙ্কর আর শরৎচন্দ্রের ইন্দ্রনাথে। তাই বলাই যায়, বাঙালি যত না অ্যাডভেঞ্চার করে, তার চেয়ে ঢের বেশি পড়ে।

আজকাল অবশ্য সে বলার জো নেই। বাঙালি এভারেস্ট থেকে দক্ষিণ মেরু– সব জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে। হোক না সে ট্রাভেল এজেন্সির প্যাকেজে, গিয়েছে তো! এই আনন্দময় বাংলা বাজারে এতেই নিজেদের অভিযাত্রী হিসেবে চালিয়ে দেওয়া দিব্যি সম্ভব। এ তো হামেশাই হচ্ছে।

আর সেই টুরিস্ট অভিযাত্রীরাই আজকাল একটা পিক ক্লাইম্ব কিংবা ট্রেক শেষ করার পর, হাতে চায় একফালি কাগজ এবং তাতে ছাপার অক্ষরে (হস্তাক্ষরেও হতে পারে) তার নিজের নাম। হ্যাঁ, শেষ পাতে একটু মিষ্টি দইয়ের মতো, ট্রেক শেষ করে, রোড-হেডে পৌঁছেই হাতে চায় একটি সার্টিফিকেট। তবেই প্যাকেজের ষোলআনা উসুল হয়। হয় হিমালয়ের গ্রামীণ পথের শেষে এক ইনস্টাগ্রামিন সমাপ্তি! পাহাড়চূড়ায় আতঙ্ক কিংবা প্রতিহিংসা নয়, এখন শংসা-র প্রয়োজন, পত্র সহযোগে!

যে সভ্যতায়, জন্ম-মৃত্যুর কথা না হয় বাদই দিলাম, শিক্ষা, চাকরি, বিবাহে, বিবাদে, অভাবে, স্বভাবে, গোলযোগে, অভিযোগে একটা না একটা সার্টিফিকেট (তা খাঁটি হোক কিংবা জাল) ছাড়া গতি নেই, সেখানে একখানা জলজ্যান্ত গিরিপথ পার করে, কিংবা, একটা কোনও বিরাট উঁচু পাহাড়ের বেস ক্যাম্প, নিজের হাঁটুর শ্রাদ্ধ এবং তদুপরি একগাদা ট্যাঁকের কড়ি খরচ করে ঘুরে আসার পর, একটা সার্টিফিকেট চাওয়া, কী এমন দোষের শুনি? সব কিছুরই যদি সার্টিফিকেট থাকতে পারে, তাহলে আমার শখের অ্যাডভেঞ্চার ট্রিপের থাকবে না কেন?

আজকের লেখায় সেটাই বিষয়বস্তু। বলছি। একটু সবুর করুন। এতে ব্যঙ্গ, শ্লেষ কিংবা ক্লেশ, কোনওটাই নেই। যেটা আছে সেটা বেশ ইন্টারেস্টিং। একটু গোড়া থেকে বলি?

২০০৫ সালের শরতে আমি আফ্রিকায় গিয়েছিলাম কিলিমাঞ্জারো পাহাড়ে উঠতে। কোনও রেকর্ড করা কিংবা প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্যে নয়। গিয়েছিলাম একান্ত কৌতূহলের টানে। তখন আমি পেশাদার অভিযাত্রী ও পর্বতারোহণ গাইড হিসেবে নিজেকে তৈরি করছি। তার মাত্র দু’সপ্তাহ আগেই আমি গাড়োয়ালের কামেট (৭,৭৫৬ মিটার) অভিযানে একটি ফরাসি দলকে নেতৃত্ব দিয়ে ফিরেছি। স্বাভাবিকভাবেই, কামেট ফেরত কিলিমাঞ্জারো চড়াকে কোনও অভিযান নয়, খানিকটা ওয়াক ইন দি পার্ক মনে হয়েছিল। সত্যি বলতে কী, সেই কিলিমাঞ্জারো ট্রেকের শেষে আমার ওজন বেড়ে গিয়েছিল!

কিলিমাঞ্জারো একটা আগ্নেয়গিরি। তার তিনটে মাথা— কিবো, মাওয়েঞ্জি এবং শিরা। মাওয়েঞ্জি এবং শিরা মৃত, কিন্তু কিবো ঘুমন্ত। অর্থাৎ, যে কোনও দিন আবার কিবো থেকে অগ্ন্যুৎপাত হতে পারে। সেই কিবো-র ক্রেটার রিমের উচ্চতম বিন্দুর নাম উহুরু। উহুরু পিকে উঠলে তবেই বলা যায় কিলিমাঞ্জারো চড়া হল। আজকাল ফি বছর গড়ে ৩০-৩৫ হাজার মানুষ এই উহুরু আরোহণের ট্রফি আহরণে যান। হ্যাঁ, পাহাড় চড়া আজকাল মূলত এক ধরনের ট্রফি হান্টিং-এ পরিণত হয়েছে।

তারিখটা এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না। তবে সকালটা বেশ মনে আছে। রাত দুটো নাগাদ ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে নিকষ অন্ধকারে চড়াই ভাঙা শুরু হয়েছিল। কয়েকশো মানুষের সারিবদ্ধ একটা মিছিল, জমে যাওয়া লাভা এবং ছাইয়ের ঢাল বেয়ে, এক পা এক পা করে উঠছিল শিখরের দিকে। উদ্দেশ্য একটাই, আফ্রিকা মহাদেশের সর্বোচ্চ বিন্দু উহুরু থেকে সূর্যোদয় দেখা। আর হ্যাঁ, শিখরে বসানো সাইনপোস্টের সামনে দাঁড়িয়ে একখানা মোক্ষম ছবি তোলা। তার জন্যও লাইন পড়ে বৈকি।

সামিট থেকে সূর্যোদয় দেখা এবং ছবি তোলার লাইনে সেদিন আমিও ছিলাম। শিখর থেকে সূর্যোদয় দেখা ব্যাপারটা আমার কাছে নতুন ছিল না, তবে সামিটে সাইনপোস্ট দেখে খানিকটা চমকে গিয়েছিলাম। প্রকৃতির উপর মানুষের ঠুনকো গা-জোয়ারি আসলে টুরিস্ট টানার চমক এবং তার বেপরোয়া বিপণন– এটা বুঝতে আমার আরও সময় দরকার ছিল। একটা শিখরের সর্বোচ্চ বিন্দুতে পৌঁছেও মানুষ সন্তুষ্ট হয় না। পাহাড়চূড়াতেও তার দরকার সমতল থেকে তুলে আনা নাগরিক সাইনপোস্ট– তবে না একখানা ‘বিজয়’ হল, তবে না প্রমাণ হল আমি সভ্য মানুষ!

তার পরদিন, কিলিমাঞ্জারোর জাতীয় উদ্যান থেকে বেরনোর সময়, আমার সোয়াহিলি গাইড ভাইটি আমার হাতে রঙিন একটা সার্টিফিকেট তুলে দিয়ে আমাকে বলেছিল— ‘অভিনন্দন! তুমি সফল!’ সৌজন্যবশত সেটি নিয়ে ব্যাগে রেখে দিয়েছিলাম, আর কোনও দিন তাকিয়েও দেখিনি। আরুশা ফেরার পথে একটা চাগা বস্তিতে ঢুকে এক বালতি মবেগে (mbege হল চাগা উপজাতির বিয়ার— কলা এবং মিলেটের এক আনন্দঘন মিশ্রণে তৈরি) খেয়েছিলাম সেই গাইড ভাই আর আমার দলের মালবাহকদের সঙ্গে।

ওই কাগজের কোনও মূল্য ছিল না আমার কাছে। কিবোর পাহাড় তো আগেই আমাকে সব গুপ্তধনের সন্ধান দিয়ে দিয়েছিল। কোথায় আনন্দ আছে, কোথায় আকাশ নীল, কোন মেঘটা আসলে এবার আমাকে পিঠে রুকস্যাক তুলে নিতে বলছে— এই সব আর কি?

উহুরু-র শীর্ষে আমি কোনও বিশেষ আনন্দের ইশারা খুঁজে পাইনি। পেয়েছিলাম শিখর থেকে নামার পর , আরুশা থেকে একটু দূরের একটা ছোট গ্রামে। আমি নিঃশব্দে সেই মুহূর্তটা অনুভব করছিলাম। তার না ছিল কোনও উচ্চারণ, ছিল না কোনও উদযাপন। ছিল এক গভীর নীরবতা। আমি আফ্রিকার প্রেমে পড়েছিলাম। তবে সে অন্য গল্প।

সেদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় হঠাৎই চোখে পড়ল এক ট্রেকিং কোম্পানির পোস্ট। পোস্টের বক্তব্য, তাঁদের অন্নপূর্ণা বেসক্যাম্প ট্রেকের ক্ল্যায়েন্টরা ট্রেক শেষ করে তাঁদের ‘সার্টিফিকেট অর্জন’ করেছেন। সঙ্গে হাতে সার্টিফিকেট ধরা একটি হাসিখুশি গ্রুপ ছবি। সার্টিফিকেট অর্জনের উল্লাস আমাকে অবাক না করলেও একটা বিরক্তির উদ্রেক করেছিল, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। পাহাড়ি পথে হাঁটার অভিজ্ঞতা, প্রকৃতির দেওয়া নীরব কিছু শিক্ষার চেয়ে একটা সার্টিফিকেটই হয়ে উঠেছে মূল উদ্দেশ্য।

সার্টিফিকেটের এই সাতকাহনে মনে পড়ে যায় আরও কয়েক বছর আগের কথা। এক ভদ্রলোক আমাকে খুব আন্তরিকভাবে অনুরোধ করেন— তিনি কি তাঁর স্ত্রীর এভারেস্ট অভিযান সফল হয়েছে, এমন একটি সরকারি সার্টিফিকেট পেতে পারেন? আমি কি সেই সার্টিফিকেট জোগাড় করে দিতে পারি? তাঁর স্ত্রী সত্যিই চূড়ায় উঠেছিলেন কি না আমার জানা নেই, কিন্তু কাগজ ছাড়া তিনি ব্যাপারটা জনসমক্ষে প্রমাণ করতে পারছিলেন না। অভিযানে সার্টিফিকেটের এও এক নতুন ভূমিকা।

এই সার্টিফিকেট জোগাড় করার ব্যাপারটা আমাকে নরেন্দ্র যাদবের কথা মনে করিয়ে দেয়। ২০১৬ সালে নরেন্দ্র সিং যাদব এভারেস্টে না উঠেই একটা জাল সার্টিফিকেট দেখিয়ে ভারত সরকারের তেনজিং নোরগে পুরস্কার প্রায় পেয়ে গিয়েছিলেন। শেষ মুহূর্তে তাঁর চাল ধরা পড়ে যায় এবং পুরস্কার হাত থেকে ফসকে যায়। ২০২২ সালে নরেন্দ্র আবার এভারেস্টে যান– এবার সত্যি সত্যি ক্লাইম্বটা করেন এবং কাঠমান্ডু থেকে খাঁটি সার্টিফিকেট নিয়ে তবেই দেশে ফেরেন। আন্তর্জাতিক পর্বতারোহী মহলে ভারতের মুখ তিনি আগেই পুড়িয়েছিলেন, তবে শেষ পর্যন্ত নিজের মুখরক্ষা করেছেন। আমরা ধন্য হয়েছি।

এখন প্রশ্ন হল, এই ‘সার্টিফিকেট সংস্কৃতি’ শুরু হল কোথা থেকে? আজকের রঙিন, ল্যামিনেটেড, টেমপ্লেট ডিজাইন করা সার্টিফিকেট দেখলে যতটা আধুনিক মনে হয়, তার শিকড় কিন্তু দুই শতাব্দীরও বেশি পুরনো।

১৭৮৬ সালে জ্যাক বালমা এবং মিশেল-গ্যাব্রিয়েল প্যাকার্ড যখন প্রথম মঁ ব্লাঁ চূড়ায় উঠলেন, স্থানীয় লোকেরা তাঁদের সাফল্য স্বীকৃতি দিয়ে লিখিত বিবৃতি প্রদান করেন – একরকম সাক্ষ্যপত্র¹। তখন তো ছবি বা জিপিএস ছিল না, প্রমাণ বলতে এইরকমই কিছু একটা লাগত। ১৮৫৭ সালে, ব্রিটিশ পর্বতারোহী থমাস হিনচলিফ মঁ ব্লাঁ উঠেছেন কি না এই নিয়ে সন্দেহ ছিল অনেকের মনে। তাই তিনি অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে শামোনি-র গাইডদের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক একটি সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেন তাঁর দাবির সমর্থনে²।

হিমালয় অঞ্চলেও আমরা এর ছায়া দেখি। ব্রিটিশ আমলে শেরপাদের হাতে থাকত পাসবুক— যেখানে উচ্চতাজয়, অভিযানের বিবরণ লেখা থাকত³। পরবর্তীতে ১৯৩৮ সালে হিমালয়ান ক্লাব চালু করে ‘টাইগার মেডেল’—শ্রেষ্ঠ শেরপাদের স্বীকৃতি দিতে⁴।

এসবই ছিল প্রমাণের সংস্কৃতি। কেবলমাত্র অভ্যন্তরীণ সম্মান নয়, ভবিষ্যতের জন্য দলিল রেখে যাওয়া। প্রমাণ কিংবা সম্মান থেকে স্মারকে রূপান্তরের ব্যাপারটা এখান থেকেই শুরু।

বিশ শতকের শেষভাগে অ্যাডভেঞ্চার পর্যটনের ব্যাপক প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে এই স্বীকৃতি রীতিমতো বানিজ্যিক রূপ পেতে শুরু করল।

নেপালের ২০০২ সালের পর্বতারোহণ বিধিমালায় বলা হয়েছে, কোনও পারমিটধারী অভিযাত্রী যদি শৃঙ্গ জয় করেন, তবে তাঁকে সরকার একটি অফিসিয়াল শংসাপত্র দেবে⁵। কিন্তু বহু বছর পর্যন্ত এই স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত ছিলেন শেরপারা— কারণ তাঁরা পারমিটের জন্য টাকা দেন না। ২০১৮ সালে জনমতের চাপে এই অবিচার সংশোধন হয়⁶।

তানজানিয়ার কিলিমাঞ্জারোতেও, TANAPA চূড়ায় ওঠার পর ট্রেকারদের একটি রঙিন সার্টিফিকেট দেয়⁷। অনেকেই বলেন এটি তাঁদের মানসিক ও শারীরিক জয়ের প্রতীক⁸। জাপান এই ব্যাপারে একটু এগিয়ে। মাউন্ট ফুজি-তে শিখরে উঠতে না পারলেও, টুরিস্টরা তাঁদের ‘সততা ও প্রচেষ্টার’ স্বীকৃতি স্বরূপ একটা স্মারক চিঠি কিনতে পারেন⁹।

পেরুর ইনকা ট্রেইলে অনেক ট্রেকিং কোম্পানি নিজেদের ব্র্যান্ডেড ‘কমপ্লিশন সার্টিফিকেট’ দেয়। আজ এমন কোনও জনপ্রিয় ট্রেকিং গন্তব্য নেই, যেখানে কোনও না কোনওভাবে ছাপানো প্রমাণ দেওয়া হয় না।

এই সংস্কৃতি এত জনপ্রিয় হল কেন?

১. আত্মপ্রমাণের আকাঙ্ক্ষা – অনেকের কাছে এই সার্টিফিকেট কেবল স্মারক নয়, আত্মজয়ের প্রতীক। পাহাড় নয়, নিজেকে জয় করার প্রমাণ।

২. বিপণনের হাতিয়ার – অপারেটররা এটাকে অভিজ্ঞতার অংশ হিসেবে বিক্রি করে, ‘অফিশিয়াল ফিনিশার’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটানোর এক মাধ্যম।

৩. নথিভুক্তিকরণ ও দলিল – যেমন নেপালে সরকারপ্রদত্ত সার্টিফিকেট সরকারি রেকর্ডের অংশ হয়। বিতর্কের সময় বা পুরস্কারে, এর দরকার পড়ে।

৪. ঔপনিবেশিক মনোভাবের রেশ – আগে ইউরোপীয় অভিযাত্রীরা শৃঙ্গ জয় করতেন, দখল করতেন, প্রমাণ রাখতেন। আজ আমরা বলি, ‘আমি গিয়েছি, আমি প্রমাণ দেখাতে পারি।’

নরেন্দ্র সিং যাদব কিংবা সেই ভদ্রলোক যিনি তার স্ত্রীর জন্য হন্যে হয়ে একটা এভারেস্ট সামিট সার্টিফিকেট, যে কোনও মূল্যে কিনে নিতে চাইছিলেন– তাঁদের কথাই ধরুন না¹⁰। ঘটনা দুটো যতই হাস্যকর হোক না কেন, আসলে তা আমাদের সমাজের ‘অ্যাডভেঞ্চার’ ধারণার সঙ্কীর্ণতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।

পর্বতারোহণ এখন একটা প্ল্যাটফর্ম। প্রমাণের এই তাগিদ আজকের ডিজিটাল সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে গেছে। প্রতিটা ট্রেক এখন এক পারফরম্যান্স। প্রতিটা চূড়া যেন একটা প্রেক্ষাগৃহ।

২০১৯ সালের এভারেস্ট ‘ট্র্যাফিক জ্যাম’-এর ছবি মনে আছে নিশ্চয়ই¹¹—ডেথ জোনে শত শত পর্বতারোহী দাঁড়িয়ে আছেন, শুধুমাত্র এক টুকরো ছবির জন্য।

পাহাড় এঁদের কিছু শেখায় না। পাহাড় এখন জিজ্ঞেস করে—আপলোড করেছ?

আমরা কী হারাচ্ছি? সার্টিফিকেট নিজে দোষের কিছু নয়। কিন্তু যখন সেটাই উদ্দেশ্য হয়ে ওঠে, তখন অভিজ্ঞতা হয়ে দাঁড়ায় এক ছায়া মাত্র। ট্রেকিং হোক কিংবা মাউন্টেনিয়ারিং— তার গভীরে আছে এক আত্মসমর্পণ। নিজের অন্তরের সঙ্গে একান্তে দেখা হওয়া। কান পেতে শোনা সেই কণ্ঠস্বর, যা কেবল নীরবতায় ফিরে আসে। সেটা ছাপানো যায় না, সেটা ফ্রেমে আটকে রাখা যায় না।

এডমন্ড হিলারি বলেছিলেন, ‘আমরা পাহাড় জয় করি না, আমরা নিজেদের জয় করি।’ কিন্তু যখন পাহাড়চূড়া একটা সার্টিফিকেট প্রিন্টিং মেশিনে পরিণত হয়, তখন সেই জয় ঠিক কোথায় থাকে?

আমি কোনও স্বীকৃতির বিরোধিতা করছি না। কেবল বলছি— চলুন আমরা আবার হাঁটি, শুধুমাত্র হাঁটার জন্য। প্রমাণের জন্য নয়, উপস্থিত থাকার জন্য। মানুষের ভিড়ে, পায়ের চাপে ওষ্ঠাগত প্রাণ প্রকৃতির শেষযাত্রায় সাক্ষী থাকার জন্য। ছবিটা থাকুক, যদি রাখতেই হয়— স্মৃতি হিসেবে। সার্টিফিকেট থাক, ফুটনোট হিসেবে। শিখর হোক এক নীরব উপলব্ধি। সমতলে, কোলাহলে ফিরে আসার আগে নিজের সঙ্গে দেখা হওয়ার একটা ক্ষণ।

(মতামত ব্যক্তিগত)

  • তথ্য সূত্রসমূহ:

Isserman, M. & Weaver, S. (2008). Fallen Giants: A History of Himalayan Mountaineering. Yale University Press.

Hinchliff, T. W. (1857). Summer Months Among the Alps.

Ortner, S. B. (1999). Life and Death on Mt. Everest. Princeton University Press.

Himalayan Club Archives (1938). Tiger Medal Records.

Government of Nepal. (2002). Mountaineering Expedition Regulation.

The Kathmandu Post (2018). ‘Sherpas to Receive Climbing Certificates.’

TANAPA – Tanzania National Parks Authority.

Peak Planet Trekking Blog.

Mt. Fuji Association and Inca Trail Operators’ Websites.

The Hindu (2021). “Narender Singh Yadav Disqualified from Tenzing Norgay Adventure Award."

BBC News (2019). ‘Everest Traffic Jam.’ http://www.bbc.com/news/world-asia-48395880

পরবর্তী খবর

Latest News

পাহাড় আর ওঁদের কিছু শেখায় না! পাহাড় শুধু জিজ্ঞেস করে, ‘আপলোড করেছ’ 'লেডিস বলে আলাদা করে বসার ব্যবস্থা?' মহিলাদের সিট সংরক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন তুলল পাওলি কী হেমারেজিক প্যানক্রিয়াটাইটিস, যাতে মৃত্যু রিঙ্কু-পুত্র প্রীতমের, নেশাই কারণ? IPL খেলার জন্য PSL-কে লাথি দুই তারকার, চাপে বাবরের দলও, স্বস্তি পেল PBKS এবং GT ১২০০ পয়েন্টের বেশি লম্বা লাফ! লক্ষ্মীবারে বিনিয়োগকারীদের আয় ৫ লক্ষ কোটি প্রাথমিকে চাকরি দেওয়ার নামে ধর্ষণ? প্রভাবশালী তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে… দেশ জুড়ে ‘বয়কট টার্কি’ রব! তাবড় পদক্ষেপে ময়দানে এবার ‘জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া’ও জ্যোতিষমত বলছে আর কয়েক দিনের অপেক্ষা! সূর্য-গুরুর যুতিতে ৩ রাশির লাকি কবে থেকে? বেক না করেই এক মিনিটে বানান ম্যাঙ্গো চিজ কেক, দেখে নিন রেসিপি ফপর দালালি বরদাস্ত করা হবে না, পাকিস্তান নিয়ে জয়শংকরের রোষের মুখে ট্রাম্প

Latest nation and world News in Bangla

১২০০ পয়েন্টের বেশি লম্বা লাফ! লক্ষ্মীবারে বিনিয়োগকারীদের আয় ৫ লক্ষ কোটি দেশ জুড়ে ‘বয়কট টার্কি’ রব! তাবড় পদক্ষেপে ময়দানে এবার ‘জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া’ও ফপর দালালি বরদাস্ত করা হবে না, পাকিস্তান নিয়ে জয়শংকরের রোষের মুখে ট্রাম্প হাজার-হাজার পাকিস্তানি ভিক্ষুক, ধরে ধরে দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে আরব রাষ্ট্রগুলি! 'আমার বাড়ি ভারত!' সংঘর্ষের আবহে সেনাবাহিনীকে কুর্নিশ রুশ বধূর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দিনের বেলা যাঁরা ফুল বেচেন, তাঁরাই রাতের বেলায়...! পারিবারিক সম্পত্তি বাঁচাতেই পাকিস্তানকে বাঁচালেন ট্রাম্প? সামনে এল চুক্তির তথ্য বিল পাশ করার সময়সীমা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টকে ১৪ প্রশ্ন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর ভারত ‘নিজের খেয়াল রাখতে পারবে’,এদেশে অ্যাপেল-র প্ল্যান্ট বাড়ুক..চান না ট্রাম্প? তরুণ-তরুণীদের স্বপ্নপূরণের হাতছানি! ইউপিএসসি ২০২৬ সালের পরীক্ষার ক্যালেন্ডার

IPL 2025 News in Bangla

IPL খেলার জন্য PSL-কে লাথি দুই তারকার, চাপে বাবরের দলও, স্বস্তি পেল PBKS এবং GT রিপোর্ট- ভারতের প্রথম গ্রুপকে নিয়ে ইংল্যান্ড উড়ে যাবেন গম্ভীর, জানা গেল দিনক্ষণ বড় ধাক্কা খেল KKR, IPL-এ আর যোগ দিচ্ছেন না মইন,উইন্ডিজ তারকাকে নিয়েও রয়েছে সংশয় একটা বিরতি দরকার… IPL 2025-এর দ্বিতীয় পর্ব শুরুর আগেই পৃথ্বী শ-র রহস্যজনক বার্তা বাংলাদেশের প্লেয়ারকে কেন সই?DC-র ম্যাচ বয়কটের দাবি ভক্তদের,ছাড় পাচ্ছে না BCCI-ও প্রোটিয়া তারকারা BCCI-এর চাপে WTC Final-এর প্রস্তুতি পিছিয়ে দিতে পারে: রিপোর্ট RR তারকা বৈভব সূর্যবংশী কি বোর্ডের পরীক্ষায় ফেল করেছে?নেটপাড়ায় চলছে তুমুল চর্চা কোন দল বিদেশিদের নিয়ে কতটা চাপে? IPL 2025-এ কতটা প্রভাব ফেলবে WTC ও ENG vs WI? আইপিএল ২০২৫: প্লেঅফে উঠতে হলে কোন দলকে কতগুলো জিততে হবে? KKR-র কি সম্ভবনা রয়েছে? মুস্তাফিজুর IPL 2025-এ খেলবেন না? UAE উড়ে গেলেন বাংলাদেশের পেসার, কী বলল BCB?

Copyright © 2025 HT Digital Streams Limited. All RightsReserved.
caco88