জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে জামাই ষষ্ঠী পালিত হয়। তবে এটি আসলে ষষ্ঠীর পুজো। সন্তানের মঙ্গল কামনায় ষষ্ঠী দেবীর পুজো করা হয়। কন্যা যাতে সন্তানবতী হয়, তার জন্য তাঁকে সন্তুষ্ট করার জন্য জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্ল ষষ্ঠীতে তার পুজো করা হয়। তবে এখন মা ষষ্ঠীর সঙ্গে জামাই জুড়ে দিয়ে এই দিনটি জামাই ষষ্ঠী হিসেবে পালিত হয়। তবে জামাই ষষ্ঠী পালনের আসল উদ্দেশ্য হল মাতৃত্ব, সন্তান ধারণ এবং বংশবৃদ্ধি। মেয়ে যাতে সুখে দাম্পত্য জীবন যাপন করতে পারে, তার মঙ্গল কামনা করে এই দিনটি পালিত হয়। চলতি বছর ১লা আষাঢ় (ইংরেজি ১৬ জুন) জামাই ষষ্ঠী। এখানে জানুন জামাই ষষ্ঠীর নির্ঘন্টবিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে-ষষ্ঠী তিথি শুরু- ১৫ জুন, মঙ্গলবার (৩১ জ্যৈষ্ঠ) রাত ১০টা ৫৮ মিনিটে।ষষ্ঠী তিথি শেষ- ১৬ জুন, বুধবার (১ আষাঢ়) রাত ১০টা ৪৬ মিনিটে।গুপ্ত প্রেস পঞ্জিকা মতে-ষষ্ঠী তিথি শুরু- ১৫ জুন, মঙ্গলবার (৩১ জ্যৈষ্ঠ) রাত ৭টা ৩৪ মিনিট ৩৫ সেকেন্ডে।ষষ্ঠী তিথি শেষ- ১৬ জুন, বুধবার (১ আষাঢ়) রাত ৬টা ৫৬ মিনিটে ১৫ সেকেন্ড।ষষ্ঠীর পুজোয় আম পল্লব, তাল পাতার পাখা, ধান, দূর্বা, ৫-৯ ধরণের ফল, ফুল, বেলপাতা, সাদা সুতো ও হলুদ ব্যবহৃত হয়।পুজোর নিয়মষষ্ঠী পুজোর দিনে শাশুড়িরা ভোরবেলা স্নান করে শুদ্ধবস্ত্র পরে পুজোর আয়োজন করে। জল ভরতি ঘটের ওপর আম পাতা স্থাপন করেন, সঙ্গে রাখেন তালপাতার পাখা। ১০৮টি দূর্বা এক সঙ্গে বেঁধে রাখেন। এর পর করমচা-সহ ৫-৯ ধরণের ফল কেটে কাঁঠাল পাতার ওপর সাজিয়ে রাখতে হয়। হলুদে রাঙানো সুতো ফুল, বেলপাতা দিয়ে গিট বেঁধে সাজানো হয়। এর পর মা ষষ্ঠীর পুজো করা হয়। জামাই এলে তাঁকে বসিয়ে সুতো হাতে বেঁধে দেন শাশুড়ি। তালপাতার পাখার হাওয়া দিয়ে ষাট-ষাট-ষাট বলে ধান-দূর্বা দিয়ে আশীর্বাদ করেন। জামাইষষ্ঠীর অনুষ্ঠানের আচরণগুলি বিশেষ অর্থ বহন করে—ফুল, বেলপাতা দিয়ে সুতো বেঁধে দেওয়ার অর্থ, জামাইয়ের সঙ্গে মেয়ের ও পরিবারের বন্ধন যাতে অটুট থাকে ও সুখের হয়।পাখা দিয়ে হাওয়া করে জামাইয়ের সমস্ত বিপদ দূর হওয়ার কামনা করেন।তিন বার ষাট বলার মাধ্যমে জামাইয়ের দীর্ঘায়ু কামনা করেন তাঁরা।ধান সমৃদ্ধি ও বহু সন্তানের প্রতীক। আবার দূর্বা চিরসবুজ ও সতেজতার প্রতীক।এ সব কিছুই জামাইয়ের মঙ্গলের পাশাপাশি মেয়ের সুখ-শান্তির জন্য করে থাকেন শাশুড়িরা। জামাই ষষ্ঠীর কাহিনিকথিত রয়েছে, এক গৃহবধূ স্বামী গৃহে নিজে মাছ চুরি করে খেয়ে বার বার দোষ দিতেন এক কালো বেড়ালের ওপর। এর প্রতিশোধ নিতে ছোট বউয়ের বাচ্চা হলেই ওই কালো বেড়ালটি তাঁর সন্তান তুলে মা ষষ্ঠীর কাছে লুকিয়ে দিয়ে আসে। গৃহবধূ তা জানতে পেরে ষষ্ঠী দেবীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। দুই শর্তে তাঁকে ক্ষমা দান করেন ষষ্ঠী দেবী। শুক্ল ষষ্ঠীর দিনে তাঁর পুজো করার আদেশ দিন তিনি। পাশাপাশি বেড়ালকে তাঁর বাহন হিসেবে সম্মান জানানোর কথা বলেন। ষষ্ঠীদেবীর আরাধনা শুরু করেন ওই গৃহবধূ৷ দেবী তুষ্ট হলে বনেই সে নিজের সন্তানকে ফিরে পায়। এই জন্যই ষষ্ঠীদেবীর অপর নাম অরণ্যষষ্ঠী। অন্য দিকে মাছ চুরি করে খাওয়ার জন্য শ্বশুর-শাশুড়ি ওই গৃহবধূর পিতৃগৃহে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। তখন মেয়েকে দেখার জন্য ব্যাকুল মা-বাবা ষষ্ঠীপুজোর দিনে জামাইকে নিমন্ত্রণ জানান। ষষ্ঠী পুজোর দিনে স্বামীর সঙ্গে নিজের বাপের বাড়ি যান ওই মেয়েটি। তার পর থেকেই ষষ্ঠীপুজো পরিণত হয় জামাইষষ্ঠীতে।