হয়তো এই পৃথিবীতে তার থাকা হত না বেশিদিন। এতটাই অবহেলিত অবস্থায় পড়েছিল সে। পিঁপড়ের দল ছেঁকে ধরেছিল একরত্তি শিশুটাকে। মুখে, ঠোঁটে খুবলে নিয়েছিল। সেই শিশুকে পরম যত্নে তুলে আনা হয়েছিল জঙ্গলমহলের মানিকপাড়ার নিবেদিতা গ্রামীণ কর্মমন্দির আশ্রমে। এরপর সেখানেই শুরু হয় ওই শিশুর পরিচর্যা। এবার সেই শিশুই পাড়ি দেবে কানাডায়। কানাডার এক দম্পতি দত্তক নিতে চেয়েছে ওই কন্যাকে। প্রত্যন্ত জঙ্গলমহল থেকে সুদূর কানাডায় পাড়ি দেবে ওই অবহেলিত শিশু।যে শিশুকে একদিন নিতান্ত অবহেলায় ফেলে রেখে চলে গিয়েছিলেন বাবা মা, সেই শিশুকেই বুকে আঁকড়ে নেবেন কানাডার দম্পতি। সেখানকার প্রাচুর্যে বড় হবে ওই সন্তান। নতুন করে দেখবে এই বিশ্বকে। বয়স মাত্র দু বছর। এবার মায়ের স্নেহ পাবে ওই ছোট্ট শিশুর। নিজের মা নন তিনি। তবুও ওই অন্য মায়ের জন্য দিন গুনছে ছোট্ট শিশু।অপর একজন এক বছরের শিশুও পাড়ি দেবে কানাডায়। এভাবেই জঙ্গলমহলের ওই আশ্রম থেকে ছোট্ট শিশুদের কোলে তুলে নেন বিদেশি দম্পতিরা। এরপর সেখানে নিয়ে চলে যান তাঁরা। আরও আটজন শিশু এভাবেই ওই সংস্থা থেকে বিদেশে চলে যাবে। তার মধ্যে দুজন যাবে কানাডায়, একজন ইটালিতে আর একজন স্পেনে। সেই দেশের দম্পতিরাই দত্তক নিচ্ছেন তাদের।এখান থেকে শিশু দত্তক নেওয়া ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম রয়েছে। স্বামী-স্ত্রীর মিলিত বয়স ৯০ হলেই ০-৪ বয়সী পর্যন্ত শিশু দত্তক নেওয়া যায়। যে দম্পতির মিলিত বয়স ১০০ তারাই ৪-৮ বছর বয়সী বাচ্চা দত্তক নিতে পারবে। দম্পতি আর্থিক অবস্থাও দেখে নেওয়া হয়। সরকারি স্তরে প্রথমে আবেদন করা হয়। তারপর সবদিক খতিয়ে দেখে এই সমস্ত সন্তানকে দত্তক নেওয়ার রীতি রয়েছে।এদিকে অনেকক্ষেত্রে দত্তক নেওয়ার সময় বাচ্চার সম্পর্কে সব কিছু দেখতে চান দম্পতিরা। অনেকে আবার জঙ্গলমহলের সন্তান শুনে ফিরে যান। এমনকী তাদের বাবা মায়েরা আদিবাসী ছিলেন কি না সেটাও প্রশ্ন করা হয়। কার্যত শিশুর জাত ধর্ম নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। তবে আশ্রমে কার্যত সর্বধর্ম সমণ্বয়। সেখানে জাতপাতের বেড়া ভেঙে শিশু মানে শুধুই শিশু। তবে বিদেশ থেকে দত্তক নেওয়ার সময় জাত পাতের বিষয়টি একেবারেই দেখা হয় না। এমনকী ভিডিয়ো কলে শিশুকে দেখেও তারা নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে নেয়।