একুশের নির্বাচনে সবচেয়ে জ্বলন্ত ইস্যু হয়ে উঠেছিল শীতলকুচির গুলিচালনার ঘটনা। যাতে রাজ্য–রাজনীতি থেকে জাতীয় রাজনীতি তোলপাড় হয়ে গিয়েছিল। তারপর সিটের তত্ত্বাবধানে চলছে জোরদার তদন্ত। কারণ এই ঘটনায় কাউকে ছাড়া হবে না বলে সেদিনই কথা দিয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর থেকেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের থেকে শুরু করে পুলিশ–প্রশাসনের কর্তাদেরও পড়তে হয়েছে তদন্তের মুখে। এই পরিস্থিতিতে শীতলকুচি কাণ্ডের তদন্তে উঠে এল নয়া মোড়। সিআইডি অফিসাররা তদন্ত করতে গিয়ে দেখতে পেয়েছেন, শীতলকুচির ওই বুথের ভেতরেও রয়েছে গুলির চিহ্ন। গুলি কে চালালো? কোথা থেকে চালানো হয়েছিল? কোন আগ্নেয়াস্ত্র থেকে চালানো হয়েছিল? এইসবই এবার তদন্ত করে দেখতে চাইছে সিআইডি।সোমবার এইসব প্রশ্নের উত্তর পেতে এবার মরিয়া ফরেন্সিকের ব্যালেস্টিক টিম। শীতলকুচি কাণ্ডে এবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবেন ফরেন্সিকের ব্যালেস্টিক টিমের সদস্যরা। শীতলকুচি কাণ্ডের পর কেন্দ্রীয় বাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, বুথের বাইরে জটলা সরাতে গেলে গ্রামবাসীদের একাংশ ঘিরে ফেলে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে। তখন আত্মরক্ষার্থেই গুলি চালাতে হয় বাহিনীকে। এখানেই প্রশ্ন উঠছে, যদি বুথের বাইরেই সমস্যা হয়, তাহলে বুথের ভেতরে ব্ল্যাকবোর্ডে গুলির চিহ্ন এল কী করে? ঠিক কী ধরনের গুলি চলেছিল, তা পরীক্ষা করে দেখবেন ফরেন্সিক ব্যালেস্টিক এক্সপার্টরা।এই ফরেন্সিক ব্যালেস্টিক এক্সপার্টদের কাজ কী? সিআইডি সূত্রে খবর, ব্যালেস্টিক টিমের সদস্যরা আগ্নেয়াস্ত্রের উৎপাদন, বুলেটের আকার নিয়ে অনুশীলন করেন। বিচার করেন বিষয়বস্তু নির্ভর। তাঁরাই নমুনা সংগ্রহ করবেন। শীতলকুচিকাণ্ডে ইতিমধ্যেই সিআইডি তদন্তে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, দরজা ভেদ করে ভেতরে ঢুকে যায় গুলি। যা গিয়ে লাগে ব্ল্যাকবোর্ডের গায়ে। উল্লেখ্য, গত ১০ এপ্রিল কোচবিহারের শীতলকুচি বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ১২৬ নম্বর বুথে গুলি চালিয়েছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী৷ তার জেরে চারজনের মৃত্যু হয়েছিল, আহতও হয়েছিলেন বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী৷ আর তদন্তে ডিআইজি সিআইডি’র নেতৃত্বে বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার৷ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা যায়, তিনজনের বুলেট ইনজুরি এবং সামিউল মিঞাঁ নামে আর একজনের স্প্লিন্টার ইনজুরিতে মৃত্যু হয়েছে। সিআইএসএফ যদি গুলি চালায়, সেখানে স্প্লিন্টার কীভাবে আসবে? সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখবেন ব্যালেস্টিক এক্সপার্টরা। এই ঘটনার পর জেরা করা হয়েছে মাথাভাঙা থানার আইসি বিশ্বাশ্রয় সরকারকেও৷ আর মোবাইল অফিসার হিসেবে দায়িত্বে থাকা এসআই গোবিন্দ মণ্ডলের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর ৬ জওয়ানকে তলব করে সিআইডি। তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণের পরই শীতলকুচি কাণ্ডের তদন্তের জন্য বিশেষ দল গঠনের নির্দেশ দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিট তদন্তে নেমে ২ অফিসার–সহ কেন্দ্রীয় বাহিনীর ৬ জনকে তলব করে।