গলা পর্যন্ত দেনা। 💃গ্রামে দিনমজুরির কাজ করে যে আয় হতো তা দিয়ে সংসার চালানো বেশ কঠিন। দেনা মিটবে কী করে? এই প্রশ্নই কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল তাঁদের। তাই তিন ভাই ভিন রাজ্যে যাচ্ছিলেন কাজের সন্ধানে। সেখানে বাড়তি উপার্জনের টাকায় ঋণ শোধের কথা ভেবেছিলেন তাঁরা। কিন্তু শুক্রবারের সেই অভিশপ্ত রাত তাঁদের স্বপ্নকেই চুরমার করে দিল। করমণ্ডল এক্সপ্রেসের কামরা থেকে উদ্ধার হয়েছে এই তিন ভাইয়ের মৃতদেহ। চারিদিকে রক্তাক্ত হয়ে পড়ে রয়েছে একাধিক দেহ। আজ, রবিবারও চলছে উদ্ধারকাজ। আর বুকফাটা কান্নায় স্বজন–হারানো বেদনা।
আজ, রবিবার বাসন্তীর ছড়ানেখালি গ্রামে এসে পৌঁছল পাঁচজনের মৃতদেহ। এঁদের মধ্যে তিন ভাই হারান গায়েন (৫১), নিশিকান্ত গায়েন (৪৩) এবং দিবাকর গায়েনের দেহ রয়েছে। আর রয়েছে বিকাশ হালদার (২৬) এবং সঞ্জয় হালদারের (ও৩৩) মৃতদেহও। বালেশ্বরে করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় একই গ্রামের এই পাঁচজনের মৃত্যু হয়। ধান রোয়ার কাজে অন্ধ্রপ্রদেশে যাচ্ছিলেন এই পরিযায়ী শ্রমিকরা। এখন ছড়ানেখালি গ্রামে স্বজনহারাদের হাহাকার মিশেছে আকাশে–বাতাসে। এই তিন সন্তানের মা শুভদ্রা গায়েন এখন স🍌্থির হয়ে পড়েছেন। বাকরুদ্ধ হয়ে চোখের জল ফেলে চলেছেন। শুক্রবার সুন্দরবন এলাকায় লোডশেডিং থাকায় জানতে পারেননি তিন ছেলের মৃত্যুর খবর। আর এখন জানতে পেরে শোকে পাথর হয়ে গিয়েছেন।
এদিকে হারান গায়েন, দিবাকর গায়েন এবং নিশিকান্ত গায়েন মারা যাওয়ায় গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাঁদের বাড়ি বাসন্তীর উত্তর মোক﷽ামবেড়িয়া গ্র♑াম পঞ্চায়েতের ছড়ানেখালি গ্রামে। মা, তিনজনের স্ত্রী, ছোট ছোট সন্তানদের এবার কী হবে, তা নিয়েই চিন্তায় তাঁদের পরিজনরা। বাড়িতে রোজগেরে বলতে যে আর কেউ রইল না! তাঁদের আত্মীয় সুস্মিতা বলে এক যুবতী এই খবর প্রথম পান। যখন তিনি মোবাইল ফোনে নানা খবর পড়𒆙ছিলেন। তাই অনেক রাতেই এই খবর তিনি তাঁর ঠাকুমা –কে দেন। তারপর স্থানীয় বিধায়ক শ্যামল মণ্ডলকে সাহায্য করতে আর্জি জানান। বিধায়কের তৎপরতায় দুই পরিবারের পাঁচজনের দেহ এল গ্রামে।
অন্ꦐযদিকে বাসন্তীর এই তিন ভাই অন্ধ্রপ্রদেশে ধান কাটার কাজ করতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু যাওয়ার পথে যে এমন পরিণতি হবে সেটা ভাবতে পারছেন না কেউ। তাঁদের মাসতুতো ভাই বাবলু নস্কর বলেন, ‘শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ শেষবারের মতো পরিবারেꦅর সঙ্গে কথা হয় তাঁদের। রাত ৯টায় সর্বনাশা খবর পাই আমরা। তারপর থেকেই সবার খাওয়া দাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’ দেহগুলি এখন বাড়ির সামনে সারিবদ্ধ ভাবে রাখা হয়েছে। চারিদিকে শুধুই কান্নার রোল। মা শুভদ্রা এখন জ্ঞান হারিয়েছেন। এই পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান স্থানীয় বিধায়ক শ্যামল মণ্ডল। মৈপীঠের ভুবনেশ্বরী পঞ্চায়েতের বিনোদপুরের বাসিন্দা দুই ভাই প্রদীপ দাস এবং তপন দাস কেরলে মিস্ত্রির কাজ করতে যাচ্ছিলেন। রেল দুর্ঘটনায় তপনবাবুর মৃত্যুর খবর এলেও, শনিবার পর্যন্ত অন্যজনের খোঁজ মেলেনি। তপনবাবুর ছ’মাস আগে বিয়ে হয়েছিল। তপনের দেহ বালেশ্বর হাসপাতালে রয়েছে।