ষে নিরাপদে দেশে ফিরলেন কার্শিয়াঙয়ের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী। ফিরেই নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতা শোনালেন তিনি। সম্প্রতি আফগানিস্তান থেকে বাগডোগরায় ফিরেছেন কার্শিয়াঙয়ের বাসিন্দা কিষান গুরুঙ্গ। তিনি বাগডোগরা বিমানবন্দরে নামেন। বিমানবন্দর থেকে বেরিয়েই তিনি নিজের আতঙ্কের কাহিনি শুনিয়েছেন। কিষান জানিয়েছেন, তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী। কাবুলের ইতালি দূতাবাসে নিরাপত্তা কর্মী হিসাবে কর্মরত ছিলেন তিনি। কিষান আরও জানিয়েছেন, ১৫ অগস্ট তালিবানদের কাবুল দখলের দিনে ওই দূতাবাসেই ডিউটি করছিলেন তিনি। তখনই তাঁরা জানতে পারেন যে, কাবুলের দিকে এগিয়ে আসছে তালিবান। কিন্তু ডিউটিতে থাকার কারণে দফতর ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারেননি কেউ। দফতরের আধিকারিকরা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, সন্ধ্যা পর্যন্ত সবাইকে ডিউটি করতে হবে। সন্ধ্যায আবার তিনি জানতে পারেন, তালিবানরা কাবুলে ঢুকে পড়েছে। এরপর তালিবানের হাত থেকে ইতালি দূতাবাসকে বাঁচাতে ভবনটি চারদিক থেকে ঘিরে ফেলেন তাঁরা। তারপর সেখান থেকে দূতাবাসের কর্মীদের নিরাপদে বের করিয়ে দেন। দূতাবাসের অধিকারিক-কর্মীরা নিরাপদে বেরিযে এলেও বিপাকে পড়ে যান নিরাপত্তাকর্মীরাই।কিষান বলেন, ‘তখন কী করব, কোথায় যাব, কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।’ এই ডামাডোলের মধ্যে কেউ একজন ডেনমার্ক দূতাবাসে যেতে পরামর্শ দেন তাঁদের। কিন্তু সেই সময় শুনশান রাস্তায় কোনও গাড়ি না থাকায়, কিছুতেই বের হতে পারছিলাম না আমরা।’ গুরুঙ্গ বলেন, ‘দূতাবাসের বাইরে বেরিয়ে আমরা দেখি, কোথাও কোনও পুলিশ নেই। ফাঁকা পড়ে রয়েছে পুলিশের ভ্যানে। চারিদিকে একে ৪৭ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর একটি গাড়ি আসতে দেখে, তাতেই আমরা উঠে পড়ি।’ কিষান বলেন, ‘তখনই চারদিক থেকে গুলির শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। আতঙ্ক গ্রাস করেছিল আমাদের। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা ডেনমার্ক দূতাবাসে পৌঁছাই। সেখান থেকে একটি হোটেলে গিয়ে উঠি। তবে সেই হোটেলে কোনও ঘর ফাঁকা পাওয়া যায়নি। গোটা রাত জঞ্জালের উপর কেটে যায়।’ তিনি বলেন, ‘হঠাৎই হোটেলের বাইরে এলোপাথাড়ি গুলির আওয়াজ শুনতে পাই। মানুষের চিৎকার চেঁচামেচি কানে আসতে থাকে।’ কিষান আরও বলেন, ‘ওই হোটেলে থাকার সময় দেখতে পাই যে সেখানে একসঙ্গে ১২টি মৃতদেহ ঢোকানো হচ্ছে। পরদিন ব্রিটিশ সেনার সাহায্যে হোটেল থেকে কাবুল বিমানবন্দরে পৌঁছাই। সেখানেও দু’রাত দুর্ভোগ পোহাতে হয় আমাদের। খোলা মাঠে রাত কাটাতে হয়েছে।’ কিষান বলেন, ‘ প্রতিটা মুহূর্তে আতঙ্কে কাটছিল। মাঝে একবার তালিবানরা আমাদের পথ আটকায়। পরিচয়পত্র দেখতে চায়।’ তিনি বলেন যে, ‘ভয় আমি ভুলেই গিয়েছিলাম যে ভারতীয় হওয়ার কথাটা তাদের বলতে হবে। আর একটু হলেই তালিবানি চাবুক পিঠে পড়ত আমাদের। ’ সেই সময় বিমানন্দরের বাইরের রাস্তায় প্রচন্ড যানজটের সৃষ্টি হয়। তালিবানি শাসন থেকে কোনওক্রমে বেরতে চাওয়া আফগানদের ভিড় উপচে পড়ে। ভিড় সরাতে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে থাকে তালিবানরা। তারপরও আতঙ্কের মধ্যেই দু’রাত সেই বিমানবন্দরে কাটাতে হয়। তারপর তাজাকিস্তান হয়ে দেশে ফিরলাম।’