বিনা চিকিৎসায় বাড়িতে পড়েই মৃত্যু হল করোনা আক্রান্ত একাকী বৃদ্ধার। ঘরের দরজা ভেঙে ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করা হলেও শেষরক্ষা হয়নি। এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা দরজা ভেঙে ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করেন। হাসপাতালে নিয়ে গেলে, চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে চুঁচুড়ার ফুলপুকুরের নারকেল বাগান এলাকায়। দীর্ঘদিন ধরেই কর্মসূত্রে কলকাতায় থাকেন বৃদ্ধার ছেলে-বউমা। তাঁরাও করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভরতি রয়েছেন। করোনা তাঁদের মধ্যে এতটাই দূরত্ব বাড়িয়ে দিয়েছিল যে, মাকে শেষ দেখাও দেখতে পেলেন না—ছেলে। জানা গিয়েছে, হুগলির চুঁচুড়ার বাসিন্দা ওই বৃদ্ধার নাম আভা দত্ত। ছেলে অভিজিৎ দত্ত ও বউমা মণীষা দত্ত কর্মসূত্রে কলকাতায় থাকেন। তাঁরাও করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভরতি রয়েছেন।ওদিকে দীর্ঘদিন ধরেই বাড়িতে একাই থাকতেন বৃদ্ধা। কিছুদিন ধরেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। করোনা পরীক্ষা করতেই জানা যায় তিনি পজিটিভ। এর পরেই ঘরবন্দি হয়ে পড়েন আভাদেবী। অন্য দিকে, কলকাতায় করোনা আক্রান্ত হয়ে তাঁর ছেলে-বউমাও বন্দি হয়ে পড়েন। কোভিড বিধি মেনে দূর থেকে মাকে দেখতে আসার ইচ্ছে থাকলেও ছেলের পক্ষে কোনওভাবেই তা সম্ভব হয়নি। তবে যোগাযোগ ছিল ফোনে। নিয়মিত কথা হত তাঁদের মধ্যে। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকাল থেকে একাধিকবার মাকে ফোন করলেও তিনি ফোন তোলেননি। আত্মীয়রাও ওই বৃদ্ধাকে ফোনে পাননি। স্বাভাবিকভাবেই দুশ্চিন্তায় পড়ে যান সবাই। এরপরই বুদ্ধি করে চুঁচুড়ার এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় যোগাযোগ করেন বৃদ্ধার ছেলে। এদিন তড়িঘড়ি সংস্থার তরফে কয়েকজন পৌঁছে যান বৃদ্ধার বাড়িতে। ডাকাডাকি করলেও সাড়া মেলেনি। এদিকে দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করা ছিল। তবে জানলা দিয়ে উঁকি মেরে তাঁরা দেখতে পান, বিছানায় শুয়েই শ্বাসকষ্টে ছটফট করছেন বৃদ্ধা। সঙ্গে সঙ্গে তা জানানো হয় ছেলেক। তারপরেই দরজা ভেঙে ভিতরে ঢোকেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যরা। তবে সংস্থার সদস্যরা ঘরে ঢোকার আগেই বিছানা থেকে মেঝেতে পড়ে যান বৃদ্ধা। তার পর তড়িঘড়ি অ্যাম্বুলেন্স থেকে অক্সিজেন বের করে বৃদ্ধার মুখে লাগিয়ে দেন যুবকেরা। এরপর চুঁচুড়ার ইমামবাড়া হাসপাতালে নিয়ে গেলে, কর্তব্যরত চিকিৎসকরা আভাদেবীকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। গতকাল সকালেই আভা দেবীর ভাসুর করোনা আক্রান্ত হয়ে কলকাতার হাসপাতালে মারা যান। এই মর্মান্তিক ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে আসে গোটা এলাকায়।