লকডাউনের রাতে চুপিসাড়ে কাজ করে চলেছেন বোলপুরের প্রাইভেট টিউটর শ্যামল মাঝি। দরিদ্র বস্তিবাসীর অজান্তে তাঁদের খাদ্য ও অত্যাবশকীয় পণ্য সরবরাহ করে চলেছেন এই শিক্ষক ও তাঁর ছাত্ররা।বোলপুর শহরতলিতে ২০০৬ সাল থেকে কোচিং সেন্টার চালান শ্যামল। প্রতি বছর তাঁর কোচিংয়ে ভরতি হন উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক স্তরের গড়ে ২৫০ পড়ুয়া। পড়ানো হয় বাংলা, ইতিহাস ও পলিটিকাল সায়েন্সের মতো বিষয়। করোনা সংক্রমণের জেরে লকডাউন জারি হলে তাদের নিয়েই সাহায্যকারী দল তৈরি করেছেন এই শিক্ষক।প্রতি রাতে যখন গোটা মহল্লা ঘুমে অচেতন, সেই সময় শ্যামল ও তাঁর ছাত্ররা বস্তির ঘরের দরজার সামনে নিঃসাড়ে রেখে আসছেন চাল, আলু, তেল, মুড়ি মায় সাবানও।বস্তির বেশিরভাগ বাসিন্দাই পেশায় জনমজুর। সরকারি ত্রাণ স্বল্পই মেলে তাঁদের। অনেকে আবার আত্মমর্যাদার কারণে ত্রাণ সংগ্রহের লাইনে দাঁড়াতে চান না। এই সমস্ত পরিবারকে সাহায্য করাই ব্রত শ্যামল ও তাঁর ছাত্রদের।মোট ১০ জন ছাত্রকে নিয়ে সাহায্যকারী দল গড়েছেন শ্যামল। ছাত্রদের উপরই ভার রয়েছে দরিদ্র পরিবারগুলিকে চিহ্নিত করার। তাঁদের পরিবারও এই কাজে সাহায্য করেন। যে যা পারেন দান করেন। ‘কেউ হয়ত কয়েক প্যাকেট মুড়িই দিলেন,’ জানান শ্যামল।এর পর রাতে বাড়ি বাড়ি ত্রাণ পৌঁছতে বের হন শিক্ষক ও ছাত্ররা। প্রত্যেক পরিবারের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ২ কেজি চাল, আলু, কিছু সবজি, নুন, তেল, মুড়ি ও একটি সাবান। এ পর্যন্ত সরবরাহ করা হয়েছে ২৫০ কেজি চাল ও ৫০ লিটার ভোজ্যতেল, জানিয়েছেন শ্যামল মাঝি।সাহায্য করার এমন অদ্ভূত সময় কেন? আসলে ঢাকঢোল পিটিয়ে দরিদ্রসেবায় প্রবল অনীহাই মূল কারণ, লাজুক হেসে জানিয়েছেন বোলপুরের ‘মাস্টারমশাই’।