মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তরবঙ্গ সফরের মাঝেই তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে কোটি টাকার তোলা তোলার গুরুতর অভিযোগ আনলেন বাংলাদেশে পণ্য বয়ে নিয়ে যাওয়া ট্রাক মালিকরা।বিষয়টি বুধবার মালদায় দলীয় কর্মীসভায় অংশগ্রহণকারী মুখ্যমন্ত্রীর নজরে আনার পরিকল্পনা করেছেন ট্রাক মালিকরা। তাঁদের অভিযোগ, মালদার মহদিপুর আন্তর্জাতিক জমি বন্দরে বাংলাদেশে নিয়মিত পণ্য বয়ে নিয়ে যাওয়া ট্রাকগুলির থেকে মোটা অর্থ দাবি করেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা।উল্লেখ্য, সোমবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দলীয় বৈঠকে মালদা জেলায় তৃণমূল নেতাদের সাম্প্রতিক কাজকর্মে নিজের ক্ষোভ উগরে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘আমি জানি মালদায় নিজেদের ইচ্ছে মতো দল চালাচ্ছেন নেতারা। ওঁদের শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে, নয়তো অন্য কোনও দলে যোগ দিতে হবে। আমি এই সব সহ্য করব না।’ট্রাক মালিকদের দাবি, প্রতিদিন গড়ে ৩০০ ট্রাক মালদার জমি বন্দর পেরিয়ে ভারত-বাংলাদেশ পথে যাতায়াত করে। তাঁদের অভিযোগ, স্থানীয় তৃণমূল নেতা প্রসেনজিত্ ঘোষ এবং চন্দন ঘোষ সশস্ত্র দলবলের সহায়তায় প্রত্যেক ট্রাকচালকের থেকে ২,৫০০ টাকা তোলা আদায় করেন। এর উপরে পার্কিং ফি বাবদ স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের ট্রাকপিছু ১৪০ টাকা দিতে হয় ট্রাক মালিকদের।গৌড় ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল মালেক বলেন, ‘ভারতের আর কোথাও ট্রাক চালক বা মালিকদের পার্কিং ফি বাবদ কোনও রাজনৈতিক দলকে টাকা দিতে হয় না। কিন্তু মহদিপুরের জমি বন্দরেল আমাদের গুন্ডা কর বাবদ ১৪০ টাকা ও ২,৫০০ টাকা দিতে হয় ট্রাকপিছু। এই টাকা আদায় করেন তৃণমূল নেতা প্রসেনজিত্ ঘোষ ও চন্দন ঘোষ ও তাঁদের দলবল। কোনও ট্রাকচালক প্রতিবাদ জানালে তাঁকে মারধর করা হয় অথবা ট্রাকের ব্যাটারি খুলে রাখা হয়।’তিনি বলেন, ‘আমরা এই নিয়ে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি, কিন্তু কোনও ফল হয়নি। এবার আমরা বিষয়টি তাঁর মালদা সফরের সময় খোদ মুখ্যমন্ত্রীর নজরে আনব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’আর এক ট্রাক মালিক আজিজুল ইসলাম জানান, ‘তৃণমূল সমর্থিত গুন্ডারা প্রতিদিন শুধুমাত্র পার্কিং ফি বাবদ ২-৩ লাখ টাকা তোলা আদায় করে। নিরাপত্তা দেওয়া বাবদ সংগৃহীত প্রোটেকশন মানির পরিমাণ প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা ছাপিয়ে যায়। এই পরিস্থিতিত বন্ধ না করলে ট্রাক চালকরা আর মহদিপুর জমি বন্দরের ছায়া মাড়াবেন না।’প্রসঙ্গত, অভিযুক্ত প্রসেনজিত্ ঘোষের স্ত্রী লিপিকা ঘোষ বর্মণ তৃণমূল পরিচালিত ইংলিশবাজার পঞ্চায়েত সমিতি প্রধান এবং চন্দন ঘোষের স্ত্রী কৃষ্ণা সূত্রধর ঘোষ তৃণমূল পরিচালিত মহদিপুর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান পদে রয়েছেন।এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে প্রসেনজিত্ ঘোষ বলেন, ‘এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। মুখ্যমন্ত্রীর সফরের আগে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এমন পরিকল্পনা করা হয়েছে।’তবে এই বিষয়ে চন্দন ঘোষের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।মালদা (উত্তর) কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু বলেন, ‘আন্তর্জাতিক জমি বন্দরের মাত্র ৫০০ মিটারের মধ্যে কী ভাবে পার্কিং ফি আদায় করা হতে পারে, আমার তা জানা নেই। বিষয়টি লোকসভায় উত্থাপন করব।’অন্য দিকে, মানিকচকের কংগ্রেস বিধায়ক মোত্তাকিন আলম জানিয়েছেন, ‘তৃণমূল জেলা নেতৃত্বের দ্বারাই তোলা আদায়ে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। আমার কাছে খবর আছে যে, ২-৩ লাখ টাকার বেশি প্রতি মাসে এই জমি বন্দর থেকে তোলা বাবদ আদায় হয়। মালদায় কী হচ্ছে, তা মুখ্যমন্ত্রীর জানা উচিত।’এই প্রসঙ্গে মালদায় তৃণমূল জেলা সভাপতি মৌসম বেনজির নুর বলেন, ‘অভিযোগ সত্যি প্রমাণিত হলে দল যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। প্রশাসন তার নিজের পদক্ষেপ করবে।