বাংলার পঞ্চায়েত ভোটে বিপুল জয়ের পর এবারের একুশে জুলাই নিঃসন্দেহে একটু অন্যরকম। গোটা রাজ্য থেকেই দলে দলে তৃণমূলে কর্মী সমর্থকরা শুক্রবার শহীদ মিনারমুখী হয়েছিলেন। সকাল নটা। মঞ্চের সামনে থিকথিক করছে ভিড়। অনেকেই চাইছেন মঞ্চের কাছাকাছি জায়গা পেতে। সাদা পোশাক পরা স্বেচ্ছাসেবকদের দলও রয়েছে। প্রচুর পুলিশ চারদিকে। কিন্তু মঞ্চ থেকে কিছুটা দূরেই কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা। ছেঁড়া ছেঁড়া ভিড় এদিক ওদিক।শহীদ মিনারের পাশে যেন মেলা বসে আছে। উত্তরবঙ্গের দূর প্রান্ত থেকে যারা এসেছেন তারা বিভিন্ন জায়গায় জিরিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু এবারে লক্ষ্যণীয়ভাবে সেই চিরাচরিত ভিড় থাকলেও কোথাও যেন সাধারণ মানুষের মধ্য়ে, সাধারণ কর্মী-সমর্থকদের উৎসাহে ভাটা পড়েছে। একুশে জুলাই কে কেন্দ্র করে সেই যে আবেগ তা যেন এবার থিতিয়ে গিয়েছে অনেকটাই।হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয়েছিল তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের, পঞ্চায়েত ভোটে এই যে এত হিংসা হল এটা নিয়ে কি বলবেন?একাধিক তৃণমূল কর্মী জবাব, কোথায় হিংসা? আমাদের ওখানে তো কিছু হয়নি। একেবারে শান্তিপূর্ণ ভোট। আসলে দিদির বদনাম করার জন্য হিংসা হিংসার কথা বলা হচ্ছে। কার্যত এভাবেই হিংসার কথা ভাসিয়ে দিলেন তৃণমূল কর্মীদের অনেকেই।মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরের বাসিন্দা আশরাফ হোসেন। পেশায় প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। ব্যাগের পেছনে তৃণমূলের পতাকা বেঁধে শহীদ মিনার চত্বরে ঘুরছিলেন। পঞ্চায়েতে হিংসার কথা শুনেই তিনি বলেন, আমাদের ওদিকে এসব কিছু হয়নি। অন্যান্য জায়গায় কি হয়েছে বলতে পারব না। আমাদের একটাই চাহিদা দিদিকে প্রধানমন্ত্রী হতে হবে। ধর্মনিরপেক্ষ জোট তার পাশে দাঁড়াতে হবে। সেই সঙ্গেই তিনি বললেন, সিপিএমও ধর্মনিরপেক্ষ। জোট করতে আপত্তি কোথায়?উত্তর দিনাজপুর ইটাহারের বাসিন্দা এক্রামুল হক, আনারুল হকের দাবি, কোথাও কোন হিংসা হয়নি। পঞ্চায়েতে হিংসা আবার কোথায় হলো?কোচবিহারের মাথাভাঙ্গার বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন প্রায় তেরো বছর ধরে একুশে জুলাই অনুষ্ঠানে আসেন। জোড়া ফুলের সাজ পরনে। তিনি বলেন, দিদি প্রধানমন্ত্রী হোন এটাই চাই। পঞ্চায়েতে কোথাও কোন হিংসা হয়নি।রায়গঞ্জের বিন্দোলের বাসিন্দা এজামুল হক বলেন, আমার পাঁচ সন্তান। প্রতিবছর দিদি কমবেশি এক লাখ টাকা করে দেন বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে। আমি চাই বছরের পর বছর তৃণমূল থাকুক। হিংসার কথা যেটা বলা হচ্ছে সেটা পুরোপুরি মিথ্যে। ছোটখাটো যা হয়েছে তা বিরোধীদের চক্রান্ত।তবে এদিন একাধিক তৃণমূল কর্মী অবশ্য বলে ফেলেন, মারপিট হিংসা এগুলো আমরা চাই না। এসব না হলেই ভালো। কেউ আবার হিংসার কথা শুনে, পঞ্চায়েত ভোটে এত মানুষের মৃত্যুর কথা শুনে কিছুটা লজ্জিত। প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন তাঁরা।