১১ বছর পর বেঁচে উঠলেন জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনায় ‘মৃত’! প্রাণ ফিরে পেতেই সিবিআইয়ের হাতে প্রতারণার অভিযোগে আটক হলেন ‘মৃত’ ও তাঁর বাবা। খাতায় কলমে ২০১০ সালেই জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন জোড়াবাগানের বাসিন্দা অমিতাভ চৌধুরী। তাঁর পরিবার ৪ লক্ষ টাকা সরকারি ক্ষতিপূরণ পেয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, পরিবারের একজন সদস্যকে চাকরিও দিয়েছিল রেল। মৃতের নথিপত্রের অডিট হতেই ফাঁস হয়ে গেল গত ১১ বছর ধরে চালিয়ে আসা প্রতারণা। জানা গিয়েছে, জ্ঞানেশ্বরী কাণ্ডের সময় জমা দেওয়া মৃত্যু শংসাপত্র থেকে শুরু করে ডিএনএ-র রিপোর্ট-সহ যাবতীয় নথিপত্রেই ভুয়ো। অর্থাৎ অমিতাভ চৌধুরী দিব্যি বেঁচে রয়েছেন, অথচ তিনি সরকারি নথিপত্রে ‘মৃত’। এভাবে দিব্যি সময় কেটে যাচ্ছিল তাঁর। অবশেষে রেলের অভিযোগের ভিত্তিতে সিবিআইয়ের হাতে ধরা পড়ে গেলেন অমিতাভ। ‘মৃত’ অমিতাভ ও তাঁর বাবা মিহিরকুমার চৌধুরীকে বাড়ি থেকেই আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিজাম প্যালেসে নিয়ে গিয়েছেন সিবিআইয়ের আধিকারিকরা। সিবিআই আধিকারিকদের ধারণা, এই ঘটনার সঙ্গে বড় ধরনের চক্র যুক্ত থাকতে পারে।কীভাবে ওই ব্যক্তির নাম জ্ঞানেশ্বরী কাণ্ডে মৃতদের তালিকায় ঢুকল, কীভাবেই বা সরকারি চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে যে পুলিশি তদন্ত হয়, তা এড়িয়ে এতবছর ধরে এই কারসাজি চালিয়ে গিয়েছেন, তা জানার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জোড়াবাগান থানা এলাকার ৫ নম্বর গঙ্গা নারায়ণ দত্ত লেনে অমিতাভের বাড়ি। রাজ্য সরকারের ইঞ্জিনিয়ার পদে কর্মরত ছিলেন। সেই চাকরিও ছেড়ে দেন। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনার পর প্রায় সাত বছর বাড়ি ফেরেননি অমিতাভ। এত বছর পর হঠাৎ বাড়ি ফেরেন তিনি। তখনই কেউ কেউ এই কারচুপির বিষয়ে জানতে পারেন। প্রতিবেশীরা মিহিরবাবুকে আত্মসমর্পণ করতেও পরামর্শ দেন। কিন্তু তা করেননি অভিযুক্ত। শুক্রবার রাতে সিবিআইয়ের একটি দল হানা দেয় অমিতাভের ফ্ল্যাটে। ঘটনাস্থল থেকে তাদের পাকড়াও করে নিয়ে যায়।২০১০ সালের ২৮ মে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। সরকারিভাবে জানানো হয়, দুর্ঘটনায় ১৪৮ জনের প্রাণ হারিয়েছেন। মৃতদের সেই তালিকায় অমিতাভ চৌধুরীরও নাম ছিল৷ যার জেরে আর্থিক ক্ষতিপূরণও পায় তাঁর পরিবার৷ সরকারের তরফে চার লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়৷ সেইসঙ্গে, অমিতাভর বোন চাকরিও পান৷সূত্রের খবর, রেল দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিচয় জানতে তাঁদের সকলেরই ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়েছিল৷ ১১ বছর আগে সেই পরীক্ষা অনুসারেই অমিতাভকে মৃত বলে স্বীকৃতি দিয়েছিল রেল৷ কিন্তু পরে ডিএনএ রিপোর্টে গরমিল নজরে আসে রেলের৷ সিবিআইয়ের দ্বারস্থ হয় দক্ষিণ-পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ৷ তাদের তরফে সিবিআইয়ের দুর্নীতি দমন শাখাকে একটি চিঠি পাঠানো হয়৷ চিঠিতে গোটা বিষয়টি আরও একবার খতিয়ে দেখার অনুরোধ করা হয়৷ সিবিআই তদন্ত শুরু করতেই ধরা পড়ে যান অমিতাভ।