করোনা পরিস্থিতিতে চূড়ান্ত সেমেস্টারের পরীক্ষা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করায় জাত তুলে আক্রমণ করা হয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপিকা মেরুনা মুর্মুকে। ইতিমধ্যে এ ঘটনায় নিন্দা ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে। তিনি নিজেই জানিয়েছেন, অনেকেই পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁর। আবার অনেকেই নেটদুনিয়ায় সংগঠিতভাবে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছেন। রবিবার এই ঘটনার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন যাদবপুর ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন (JUTA) এবং অল বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন (ABUTA)।করোনা পরিস্থিতিতে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার সমর্থনে ২ সেপ্টেম্বর তিনি ফেসবুকে লেখেন, ‘কারও সারা জীবনের থেকে একটা শিক্ষাবর্ষ কখনওই বেশি মূল্যবান হতে পারে না।’ এই পোস্টকে ঘিরেই মেরুনার সাঁওতাল, আদিবাসী পরিচয় নিয়ে কটাক্ষ করেন বেথুন কলেজের বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রী। মেরুনার পোস্টে তিনি মন্তব্য করেন, ‘এ ধরনের ভাবনাচিন্তা যারা কোটা, সংরক্ষণ নিয়ে ভাবেন তাঁদের মাথা থেকেই আসতে পারে।’ একইসঙ্গে অভিযুক্ত ওই ছাত্রীর কটাক্ষ, ‘মেরুনা মুর্মু আদিবাসী হওয়ার পড়াশোনা, চাকরির ক্ষেত্রে নানা সুযোগ–সুবিধা লাভ করেছেন।’প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তনী, দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মেরুনা এই মন্তব্যের রুখে দাঁড়ান। কীভাবে তাঁর মতামত এক ছাত্রী সহজে এড়িয়ে গেল এবং আদিবাসী পদবির ওপর ভিত্তি কারও যোগ্যতা কীভাবে বিচার করা সম্ভব এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশ্ন তোলেন তিনি। কিন্তু তাঁর এই প্রতিক্রিয়ার পর বেথুন কলেজেরই ওই ছাত্রীর আরও কিছু সহপাঠী ওই অধ্যাপিকাকে আরও হেনস্থা করতে শুরু করে।যদিও সামাজিক মাধ্যমে বেথুন কলেজ স্টুডেন্টস কমিটির তরফ থেকে এক বিবৃতি প্রকাশ করে বলা হয়, এটি অত্যন্ত হতাশাজনক এবং নিন্দনীয় যে আমাদের কলেজের এক পড়ুয়া ভারতে যে এখনও পর্যন্ত জাতি, বর্ণভেদের অস্তিত্ব রয়েছে তা সম্পর্কে অবগত নন। তিনি জানেন না, জাতি, বর্ণের নামে যাঁরা বিভিন্ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত তাঁদের ক্ষেত্রে সংরক্ষণ কতটা প্রয়োজনীয়। ঘটনাটি অত্যন্ত লজ্জাজনক এবং এতে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্মানহানি হয়েছে।ওই বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, বেথুন কলেজের সমস্ত পড়ুয়ার তরফ থেকে তৃতীয় বর্ষের ওই ছাত্রীর বেপরোয়া মন্তব্যের ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছে স্টুডেন্টস কমিটি। আমরা এ অবস্থায় অধ্যাপিকা মেরুনা মুর্মু এবং এই ক্যাম্পাস, রাজ্য এবং দেশের সমস্ত দলিত সম্প্রদায়ের সংগ্রামে পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করছি।যাদবপুর ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের (JUTA) সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘মেরিনা মুর্মুর ওপর এমন ধরনের নজিরবিহীন আক্রমণ শুধু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপিকার ওপরই নয়, এটি সারা দেশের প্রতিটি শিক্ষকের ওপর আক্রমণ।’ একইরকম বিবৃতিতে নিন্দা প্রকাশ করেছে অল বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন (ABUTA)।