ফের গর্জালেও বর্ষালেন না তিনি। দলীয় যুব নেত্রীর দুর্নীতি ফাঁস করতে ফেসবুক লাইভ করবেন বলেও পিছিয়ে গেলেন বলাগড়ের তৃণমূল বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী। পরিবর্তে একটি বিশাল ফেসবুক পোস্ট করেছেন তিনি। তাতে হুগলি জেলা পরিষদে তৃণমূলি সদস্য রুনা খাতুন ও তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেছেন মনোরঞ্জনবাবু। সঙ্গে ২ দিন সময় দিয়ে লিখেছেন, দল কোনও পদক্ষেপ না করলে আন্দোলনে নামবেন তিনি।সপ্তাহখানেক ধরে বলাগড়ের তৃণমূল বিধায়ক তথা সাহিত্যিক মনোরঞ্জন ব্যাপারীর সঙ্গে দলের যুব নেত্রী রুনা খাতুনের বাগযুদ্ধ বারবার প্রকাশ্যে এসেছে। রুনা ও তাঁর স্বামী অভিজিৎ দাসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ এনেছেন তিনি। পালটা রুনা বিধায়কের বিরুদ্ধে ফেসবুকে কুরুচিকর ভাষায় আক্রমণের অভিযোগ দায়ের করেছেন থানায়। এমনকী বলাগড় বিধানসভার অন্তর্গত জিরাটে মনোরঞ্জন ব্যাপারীর কার্যালয়ে রাতের অন্ধকারে হামলা হয়েছে। অভিযোগের আঙুল উঠেছে রুনার দিকে। এই অবস্থায় ৭ জানুয়ারি ফেসবুক লাইভ করে রুনা ও অভিজিতের দুর্নীতি ফাঁস করার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মনোরঞ্জন ব্যাপারী। বিধায়ক কী বলেন তা শুনতে মুখিয়ে ছিলেন বলাগড়ে তাঁর অনেক অনুগামী। রবিবার বেলা গড়াতে নাকের বদলে নরুণ পেলেন তাঁরা।ফেসবুক পোস্টে মনোরঞ্জন লিখেছেন, ‘যাঁর বিরুদ্ধে আমার মুখ খোলার কথা ছিল সেই বালি মাফিয়া মাটি মাফিয়া জুয়ার বোর্ড চালানো , গাঁজার পাঁচারকারী, গরু ব্যাবসায়ী (আমার কাছে ছবি তোলা আছে খামারগাছি ঘাটে গরু নিয়ে যাবার সময়ে ওই ফুলন দেবীর স্বামী- আমাদের মাননীয়া দিদি মমতা ব্যানার্জীর ছবি লাগানো গাড়ি নিয়ে গিয়ে তাদের হুমকি দিয়ে টাকা তুলছে, দল চাইলেই সে ছবি আমি পাঠিয়ে দেব) ও হরেক রকমের দুর্নীতিকারীদের সহায়ক- তাঁরা আমাকে হুমকি দিয়েছিল 'কি করে বিধায়ক কার্যালয়ে বসে" ফেসবুক লাইফ করি' দেখে নেবে! ’মনোরঞ্জনের অভিযোগ, ‘সত্যিই দেখে তাঁরা নিয়েছে। রাত বারোটার সময়ে বিধায়ক কার্যালয় ভেঙ্গে চুরে তছনছ করে দিয়েছে । সাথে এক পঞ্চায়েত সদস্যার ঘর বাড়ি সেও ভেঙ্গে দিয়েছে । বেধরক মারা হয়েছে তাঁর স্বামীকে। তাঁর পাঁচ বছরের বাচ্চাকেও রেহাই দেওয়া হয়নি । ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে শক্ত উঠোনের মাটিতে । ছুড়ে আর ছিড়ে ফেলা হয়েছে আমাদের দিদি মাননীয়া মমতা ব্যানার্জীর ছবি। ধুলোয় ফেলে পা দিয়ে মাড়ানো হয়েছে দলীয় পতাকা। এটা দলের মুখে একটা সজোর চপেটাঘাত।’বিধানসভার মানুষকে আস্বস্ত করে তিনি বলেন, ‘সেই মানুষ- সেই ভোটার সেই দিদির প্রতি অনুগত , যুবনেতা অভিষেক ব্যানার্জীর প্রতি অনুগত মানুষ, যারা আমার সঙ্গে আছেন তাদের ওই ফুলন দেবী আর তাঁর স্বামী , কিছু পোষা গুন্ডা , তাদের সামনে - সেই হিংস্র হায়নার সামনে ফেলে কিছুতেই পালাবো না। আমি লড়ছি আর আগামী দিনেও অবশ্যই লড়াই করবো।’দলকে চূড়ান্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়ে তিনি বলেন, ‘দলের দিকে তাকিয়ে দেখবো আর একটা দুটো দিন । সঠিক বিচার না পেলে তারপর দলমত নির্বিশেষে সমস্ত সাধারন মানুষকে সাথে নিয়ে শুরু করবো বলাগড় বাঁচাও, দুস্কৃতি হঠাও জনজাগরন আন্দোলন। তৈরি থাকুন!সতেরোটা অঞ্চল জুড়ে পদযাত্রা করবো। থানার সামনে , বিডিও আফিসের সামনে বিক্ষোভ হবে, হবে প্রতিকি চাক্কা জ্যাম। গ্রেপ্তার বরন । এটাই আমার সেই এস্পার ওস্পার লড়াই হবে। ’মনোরঞ্জনের হুঁশিয়ারিকে কটাক্ষ করেছে তৃণমূলেরই একাংশ। তাদের দাবি, মনোরঞ্জনই দলীয় শৃঙ্খলা ভেঙে প্রকাশ্যে নানা মন্তব্য করছেন। যার ফলে তাঁর বিরুদ্ধে দলীয় নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ জানানো হবে।