বাংলাদেশের ক্রিকেট এখন কোথায় দাঁড়িয়ে? এত বছর পরও বাংলাদেশ কেন ‘বড় দল' হতে পারল না? ক্রিকেটের গলদটা কোথায়? এসব নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রাক্তন অধিন༒ায়ক এ এস এম রকিবুল হাসান।
ডয়চে ভেলে : দীর্ঘসময় একজন ক্রীড়া সংগঠকের নেতৃত্বে বিসিবি চলেছে। এখন একজন প্রাক্তন ক্রিকেটার, প্রাক্তন জাಌতীয় দলের অধিনায়ক, প্রাক্তন প্রধান নির্বাচক🀅 বিসিবি প্রধান। তাঁর কাছে ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রত্যাশা কী হওয়া উচিত?
এ এস এম রকিবুল হাসান : এই প্রশ্নটা সামনে আনার জন্য ধন্যবাদ। এই প্রথমবারের মতো আমরা খুবই আশ্বস্ত, খুবই খুশি। আমরা যারা ক্রিকেটে এদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছি তারা খুবই খুশি এই কারণে যে, এই প্রথম বিসিবির দায়িত্বে এমন একজন এসেছেন, যিনি ক্রিকেটের আতুরঘর থেকে এসেছেন। তিনি অধিনায়ক ছিলেন, প্রধান নির্বাচক ছিলেন আজকে সভাপতি। স্꧋বভাবতই তার কাছে প্রত্যাশাটা একটু বেশি থাকবে। গত ২০ বছরে ঘরোয়া ক্রিকেট আর বাইরের ক্রিকেটর মধ্যে কোনো সমন্বয় দর্শকরা দেখেনি। ফলে খেলোয়াড়রাও স্কিলফুল, থট-প্রসেসিংয়ের মধ্য দিয়ে যেতে পারেননি। এখন নেতৃত্বে এমন একজন এলেন, যিনি ক্রিকেটের আঁতুরঘর থেকে এসেছেন। ফারুককে নিয়ে আমরা খুবই আশাবাদী। তিনি আমাদের ক্রিকেটটাকে একটা জায়গায় পৌঁছে দেবেন বলে আমরা আশা করছি।
বাংলাদেশ দলের সাম্প্রতিক পা♔রফরম্যান্সকে কীভাবে মূল্যায়ণ করবেন?
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে আমি হতাশ। পাকিস্তান ট্যুরটা আমাদের আশার আলো দেখিয়েছিল। সুনির্দিষ্ট করে টেস্ট ক্রিকেটে। আমরা জানি, টেস্ট ক্রিকেটই আসল ক্রিকেট। পাকিস্তানের মাটিতে তাদের বিরুꦍদ্ধে দুটো টেস্ট জেতা অত্যন্ত ইতিবাচক পরফরম্যান্স ছিল। এরপর এলো ভারতের ট্যুর। এখানে ভালো পারফরম্যান্সের আশা ছিল। প্রশ্ন উঠতে পারে,ꦚ পাকিস্তান আর ভারতের শক্তিমত্তা এক কিনা৷ আমাদের মানতেই হবে, ভারতের ক্রিকেট দলের স্ট্যান্ডার্ড আমাদের থেকে অনেক উপরে। আমাদের ঘাটতি হলো, ঘরোয়া ক্রিকেটে যে ধরনের উইকেটে খেলা হয়, বিদেশের উইকেট পুরোই ভিন্ন। এটা কোনো অজুহাত নয়। আমাদের ক্রিকেট দলকে কিন্তু বোর্ড অর্থনৈতিকভাবে এবং অন্যান্য কাজে ব্যাপকভাবে সাপোর্ট করে। আফগানিস্তান, আয়ারল্যান্ড বা নেপালের ক্রিকেটাররা কী ধরনের পারফরম্যান্স করছে, অথচ আমাদের ক্রিকেটারদের চেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা তো তারা পান না। আমাদের পেশাদার মানসিকতা নিয়ে এগোতে হবে।
পাকিস্তান বাদ দিলে ধারাবাহিকভাবেই বাংলাদেশ খুব একটা ভালো করছিল না। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টিতে এত বাজে পারফরম্যান্স কেন? যেখানে আফগানিস্তান অনেক অল্প সময়ে একটা শক্ত অব♍স্থায় গিয়েছে, সেখানে বাংলাদেশ এখনো কেন ধুঁকছে?
এবারের বিশ্বকাপে আমি সাক্ষী। নিজের টাকায় আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গেছি, ক্যারিবীয় এলাকায় গেছি। খুব কাছ থেকে খেলাগুলো দেখেছি। ভালো কিছু অনুভুতি নিয়ে দেশে ফেরার আশা ছিল, কিন্তু হতাশা নিয়েই ফিরতে হয়েছে। একটা ম্যাচ ভালো করেছে তো পরেরগুলো খারাপ। একটা কথা আমাদের মনে রাখতে হবে, টি-টোয়েন্টি হলো পাওয়ারের খেলা। এখানেও কিন্তু স্কিলের প্রয়োজন। ভারত বলেন বা পাকিস্তান বলেন, পাকিস্তানের বাবর আযম কি ৬ ফুট ৫ ইঞ্চি লম্বা? তারা কি খুব স্বাস্থ্যবান? তা তো নয়। তাহলে তারা ৪-৬ মারতে পারলে আমরা পারবো না কেন? তারা ম্যাচটাকে লম্বা করতে পারলে আমরা পারছি না কেন? যে ধরনের ক্রিকেটের কথাই🌌 বলেন না কেন, এটা টেকনিক। আমরা একটা লিমিটেশনের মধ্যে পড়ে গেছি। আমরা আসলে পাওয়ার ক্রিকেট খেলতে পারি না। কিভাবে ম্যাচটাকে সাজাতে হয় সেটা এখনো আমরা শিখিনি।
বাংলাদেশ কেন ‘বড় দﷺল' হতে পারছে না? ট্যালেন্ট, অবকাঠামো, প্রশিক্ষণ, ডোমেস্টিক ক্রিকেট- সমস্যাটা আসলে কোথায়?
টেস্ট আমরা ভালো খেলবো, ৫০ ওভার তা-ও আমরা ভালোই খেলবো। কিন্তু 🐠টি-টোয়েন্টিতে আমরা ধুঁকছি। কেন ধুঁকছি, কারণ, পাওয়াটা আমরা নিতে পারছি না। আগে আমাদের ফা✤স্ট বোলারের দৈন্য ছিল। এখন কিন্তু নাহিদ, তাসকিন, সাকলায়েন, মাহমুদসহ বেশ কয়েকজন ফাস্ট বোলার আছে, যারা ১৪০ কিলোমিটারের উপরে বল করছে। শুধু বোলার হলেই তো হবে না, ব্যাটসম্যানদের তো রান তুলতে হবে। সেখানে গিয়ে ব্যাটসম্যানরা শক্তিমত্তা প্রয়োগ করতে পারছেন না। এখানে প্ল্যানিং নেই। অর্থনৈতিকভাবে আমরা অনেকদিন ধরে ভালো অবস্থায় আছি। প্লেয়ারদের যথেষ্ট দেখভাল করা হয়। তারপরও কেন আমরা এগোচ্ছি না? ওই সেই কথা, প্লেয়ারদের আমরা শানিত করতে পারছি না।
ছেলেদের তুলনায় নারী ক্রিকেটাররা ধারাবাহিকভাবে একটা জায়গা ধরে রেখেছে।🌌 নারী ক্💯রিকেটের উন্নয়নে বিসিবি কতটা উদ্যোগী?
নারী ক্রিকেটারদের ব্যাপারে বিসিবি কিন্তু উদ্যোগী আছে। নারীদের ব্যাপারে একটা পৃথক ডিপার্টমেন্ট আছে। সেখানে একজন পরিচালক আছ𒐪েন। তাদের বিদেশি কোচ আছে। পুরো সেটআপ আছে। এদের পারফরম্যান্সটা মোটামুটি ধারাবাহিক। কিন্তু বিশ্ব ক্রিকেটের মানদণ্ডে এই পারফরম্যান্সটা কতটা ধারাবাহিক? অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের তুলনায় আমাদের অবস্থান কোথায়? আজকেই তো নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল খেলছে। ওদের দেশে কিন্তু মেয়েদের নিয়েও লিগ হচ্ছে। ওদের মেয়েরা অনেক বেশি শক্তিশালী। নারী ক্রিকেটে মাঠও কিন্তু ছোট। তারপরও আমাদের মেয়েরা ৬ মারতে পারে না। ইন্ডিয়ান মেয়েরাও পারে না। কিন্তু অষ্টেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড বা ওয়েস্ট ইন্ডিজের মেয়েরা কিন্তু সমানে ৬ মারছে। এমনকি শ্রীলংকার মেয়েদের দু'একজন কিন্তু ৬ মারতে পারে। আমাদের মেয়েরাও তো ধারাবাহিকভাবে খেলছে। আমি বলবো, ক্রিকেট নট জাস্ট এ গেম, এটা লিটারেচার, এটা সায়েন্স। এই সমস্ত কিছুকে একটা হাঁড়ির মধ্যে রাখতে হবে। ত𒀰ার সঙ্গে ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স, নলেজসহ সবকিছু মিলিয়ে যদি এগোতে পারি, তাহলে কিন্তু ভবিষ্যৎ ভালো দেখি।
বিপিএল শুরু হ🔜য়েছে বেশ অনেকগুলো সিজন হয়ে গেল। বিপি🦩এলের মান এখনো কেন অন্যান্য দেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোর মতো হচ্ছে না?
অনꦡ্যান্য লিগের মানের না হওয়ার কারণ অর্থনৈতিক। আপনি হয়ত কোনো ক্রিকেটারকে এক লাখ ডলার অফার করলেন, কিন্তু সে আসবে না। বিশ্বের অন্য কোথাও হয়ত আরেকটা লিগ চলছে। তাকে হয়ত দেড় লাখ ডলার অফার করেছে। তাহলে ওই প্লেয়ার কেন এখানে আসবে? বিপিএলটাকে ওই জায়গায় নিতে হলে ঘরোয়া ক্রিকেট থেকেও ভালো প্লেয়ার আসতে হবে। একসময় তো রমরমা ছিল। ইন্ডিয়ার আইপিএলের পরই তো বিপিএলের অবস্থান ছিল। এখন তো সবাই আমাদের ছাড়িয়ে গেছে। আরেকটা কারণ আমরা ভালো কন্ডিশন তৈরি করতে পারি না। এখানে মানুষ ৪-৬ দেখতে আসে। ভালো রানের পিচ তৈরি করতে হবে। সেটা আমরা করছি না। ভেনুও কমে গেছে। মোটাদাগে
প্রফেশনাল ম্যানেজমেন্ট প্রয়োজন। ব✨োর্ডকে সবকিছুতে পেশাদারিত্ব দেখাতে হবে। ফারুকের সামনে এটাই বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা তাকে📖 সাপোর্ট করবো। আমরা তার পাশে আছি।
ক্রিকেট নিয়ে আমাদের লক্ষ্যটা কী হওয়া উচিত?
নন ক্𝄹রিকেটিং কান্ট্রিতে যখন আফগানিস্তানের নামটা বলা হয়, তখন তারা কী ভাবে? ওইখানে যাওয়া যাবে না। ওখানে গোলাগুলি হয়, মেয়েরা ঘর থেকে বের হতে পারে না, তারা লেখাপড়া করে না। অথচ দেখেন ক্রিকেট আফগানিস্তানকে কোথায় নিয়ে গেছে। এখন কিন্তু ওয়ার্ল্ড স্পোর্টস সিনারিওতে ক্রিকেট অনেকদূর এগিয়েছে। অনেকগুলো ইউরোপীয় দেশ এখন ক্রিকেট খেলে🦩। এবার বিশ্বকাপে ২০টা দেশ খেলেছে। অ্যামেরিকা ক্রিকেট খেলবে, আমরা ভেবেছি, ভাবিনি। তারা ক্রিকেটটাকে নিয়েছে একটা কমার্শিয়াল গেম হিসেবে। অনেক স্পন্সররা এখন ক্রিকেটে আসছে।
দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করলেন কোচ হাতুরুসিংহ♊ে। তা♍র সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
প্রত্যেকটা কোচের একটা নিজস্ব প্ল্যান থাকে। আমি মনে করি, তিনি ভালো করেননি। একজন কোচের কিন্তু অনেক কাজ থাকে। মূল কাজটা হলো ম্যান ম্যানেজমেন্ট। প্লেয়ারদের হাসি-খুশি-রাখা, কনফিডেন্স বাড়ানো, ড্রেসিংরুমের পরিবেশটা সুন্দর রাখাসহ এই জায়গাগুলোতে তিনি ফেল করেছেন। টিমটার মধ্যে ত🦩িনি সমন্ব𒊎য় করতে পারেননি। তিনি প্রথমবার কিছু না বলেই চলে গেছেন। আমি যদি বোর্ডের দায়িত্বে থাকতাম, তাহলে দ্বিতীয়বার তাকে আনতাম না। এবার যখন তাকে আনা হয়েছে, তখন তিনি মনে করেছেন আমাদের তার কাছে ঠেকা। শুরুতেই তিনি মাশরাফি, মাহমুদুল্লাহ, তামিম, মুশফিককে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করলেন। এই সব প্লেয়ার তো একদিনে তৈরি হয় না। এরা আমাদের আইকন। কিন্তু হাতুরুসিংহে এমন একটা টিম রাখতে চেয়েছে, যাদের উপর তিনি ছড়ি ঘোরাতে পারবেন। সবসময় তার কথা শুনবে। সিনিয়র প্লেয়াররা বেশি থাকলে তো তারা বিশেষ কিছু সুবিধা ভোগ করে, যা বিশ্বের সব দেশেই করে। এটা তিনি পছন্দ করতেন না।
শাকিব আল হাসানের বিদায়ী টেস্ট নিয়ে আপনার মত কী?
আমি তো বলি সবসময় শাকিব অন্য গ্রহের ক্রিকেটার। অলরাউন্ডারের লিস্ট করলে সব সময় সে এক নম্বরে থাকবে। তার ব্যক্তিগত জীবনের অনেক কিছুই তাকে লাইনচ্যুত করেছে। অ্যাকটিভ ক্রিকেটার হিসেবে সে এমপি হয়েছে। এটা উচিত না। একটা খেলোয়ার তো সেবক। দেশকে সেবা করবে সে খেলার মধ্য দি༒য়ে। আর রাজনীতিবিদরা রাজনীতি করবেন।
জাতীয়ไ দলের ক্রিকেটারদের খেলার সময় রাজনী🤡তিতে যুক্ত হবার বিষয়টিকে কীভাবে দেখেন?
ওআমি তো মনে করি, এটা পুরোপুরি বন্ধ করা উচিত। কেউ যদি রাজনীতিতে যুক্ত হতে চান, তাহলে তাঁকে ক্রিকেট ছেড়ে যেতে হবে। না হলে তাকে ক্রিকেট থেকে বাদ দিতে হবে। শাকিব, তামিমকে হ্যান্ডেল করতে পারেনি ওই সময়কার বোর্ড। এখন প্লেয়াররা এটা পারবে না। কারণ, এখন যিনি প্রেসিডেন্ট তিনি কিন্তু ক্রিকেটের আঁতুড়ঘর থেকে আসা। ফলে তাকে নিয়ে খেলাটা এত সহজ হবে না। এটা আমি বিশ্বাস করি।