ঠাকুরনগর: ২০১৯ সালে বাংলায় দেখা গিয়েছিল 'গেরুয়া উত্থান'। প্রথমবারের মতো এই রাজ্যে লোকসভা নির্বাচনে 'ডবল ফিগারে' পৌঁছায় বিজেপি। একা লড়ে বাংলার ১৮টি আসন দখল করে তারা। তৃণমূলকে বেশ কড়া টক্কর দিয়েছিল তারা। আর সেই জয়ের নেপথ্যে অন্যতম 'ফ্যাক্টর' হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল 'মতুয়া ভোট'। আর সেই মতুয়াদের গড় হল বনগাঁ। এই আসন থেকে ২০১৯ সালে মুখোমুখি হয়েছিলেন ঠাকুরবাড়ির দুই সদস্য। তবে গতবার এখানে বিজেপির টিকিটে জয়ী হয়েছিলেন শান্তুনু ঠাকুর। তবে এরপরে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে বাংলায় নিজেদের 'ম্যাজিক' ধরে রাখতে পারেনি বিজেপি। এই আবহে ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে পদ্ম শিবিরের নয়া হাতিয়ার 'সিএএ'। তবে এই হাতিয়ার 'বুমেরাং' হয়ে পদ্ম শিবিরকেই আঘাত হানতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই। তবে ঠাকুরনগরের লোকজন কী ভাবছেন? সিএএ সংশয় সত্ত্বেও কি এবারও বিজেপি জয়ী হবে বনগাঁ আসনে? (স্পেশাল স্টোরি পড়ুন: আশঙ্কায় পরিণত উল্লাস, 'ব🐼াংলাদেশের নথি দিতে পারব না', CAA নিয়ে কী বলছে ঠাকুরনগর?)
আরও পড়ুন: পাসপোর্ট বিধি ও নাগরিকত্ব আইনে সংঘাত লাগলে কোনটি প্🧔রাধান্য পাবে? যা বলল আদালত
ঠাকুরনগরে সিএএ-র প্রভাব বুঝতে ঠাকুরবাড়িতে পৌঁছে গিয়েছিল হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা। সেখানেই স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনার ফাঁকে স্বভাবতই ওঠে র♍াজনৈতিক ইস্যু। মতুয়া মহাসংঘের অফিসের বাইরেই এক বিজেপি কর্মীর সঙ্গে দেখা হয়। সুনীল খাঁ নামক সেই ব্যক্তি দাবি করেন, তিনি ৩৬ বছর ধরে বিজেপি করছেন। বাগদা ব্লকের মালিবোতা অঞ্চলের। উল্লেখ্য, এবার শান্তুনুর বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়িয়েছেন বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ বসু। বিজেপির টিকিটে ২০২১ সালের ভোটে জিতে পরে তিনি তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। আর ঘাসফুল শিবির এবার তাঁকে লোকসভা ভোটে প্রার্থী করেছে। এই আবহে বিশ্বজিৎকে নিয়ে সুনীল খাঁয়ের গলায় শোনা গেল আক্ষেপের সুর। সঙ্গে যেন আছে কিছুটা ক্ষোভ ও অভিমান। সুনীলবাবু বলেন, 'আমার অঞ্চলে ২০২১ সালে বিশ্বজিৎ দাসের জন্য একমাস খেটেছিলাম। ওকে আমার অঞ্চল থেকে লিড পাইয়ে দিয়েছিলাম তখন। আর এবার তৃণম🐻ূলের লোকেরাও ভোট দেবে বিশ্বজিৎকে। আমার বুথে ১০০ ভোটও বিশ্বজিৎ পাবে না। আগেরবার আমার বুথ থেকে ১৪০টা ভোট পেয়েছিলেন বিশ্বজিৎ। এবার পাবে না সেটা। আমি ৩৬ বছর ধরে বিজেপি পার্টি করি। তার আগে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। আমার অঞ্চলে আছে ১৩০৪ ভোট। এর মধ্যে বিশ্বজিৎ গতবার যত ভোট পেয়েছিল, তার অনেক বেশি কাটবে এবারে।'
আরও পড়ুন: সিএএ-র জন্য 'যোগ্যতা সার্টিফিকেট' দিতে পারবেন স𝄹্থানীয় পুরোহিত, জানুন বিশদে
এদিকে লোকসভা ভোটে সিএএ-র প্রভাব নিয়ে স্থানীয় এক দোকানদারের মতামত জানতে চাওয়া হিন্দুস্তান টাইমসকে তিনি বলেন, 'সবাই চলে গিয়েছেন। এখন শান্তনু আমাদের জন্য দাঁড়িয়েছেন। তবে এখানে এখন সবাই খেপে আছে। ভোটটা গেলে অনেক কিছু হতে পারে। তবে এই ভোটে শান্তুনুই জিতবেন বলে মনে হচ্ছে।' এদিকে সেখানেই কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন এক মাস্টারমশাই। স্থানীয় এক সরকারি স্কুলের হেডমাস্টার তিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই মাস্টারমশাইও সিএএ এবং ভোটের ওপর এর প্রভাব নিয়ে কথা বলেন আমাদের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'সিএএ নিয়ে সংশয় আছে সবার মনেই। তবে পূর্ববঙ্গ থেকে আসা অনেকেই স্বাভাবিক কারণেই বিজেপিপন্থী। তবে আমার কাছে সবাই ভালো। শান্তুনু ঠাকুরও ভালো, মমতাবালা ঠাকুরও ভালো। ঝামেলা🎐 যত, তাদের দু'জনের মধ্যে। তবে আমরা চাইছি না যে ঠাকুরবাড়ির মধ্যে বিভেদ হোক। আমরা ঠাকুরবাড়ির এই দু'টো ভাগের বিভেদ উস্কে দিতে চাই না। তবে সিএএ-র নেতিবাচক প্রভাব হয়ত এবারের ভোটে পড়বে না। ভোটে তো এবার এমনি শান্তুনু ঠাকুর আর মমতাবালা ঠাকুরেরই লড়াই হওয়ার কথা ছিল। আমরা সেটাই মনে করেছিলাম। তবে এখন সমীকরণ অন্য।' তবে ৪ এপ্রিল ভোটের প্রশিক্ষণ থাকা সেই মাস্টারমশাই এর বেশি আর কিছু বললেন না। তবে ঠাকুরবাড়িতে ঘুরতে আসা এক ব্যক্তি দাবি করেন, 'শান্তুনু ঠাকুর এই নিয়ে দিল্লির নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন। এই সিএএ থাকবে না। বদলে যাবে। আরও সরল হবে। আপাতত ভোটে এখানে বিজেপিই জিতবে।'
আরও পড়ুন: এনআরসি-র আগে ফিরিয়ে নেওয়া হবে সিএএ-র? জানালেন শাহ
পরে ঠাকুরবাড়ি লাগোয়া এক দোকানের মালিককে সিএএ-ভোট প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি দ্বিধা সত্ত্বেও বলেন, ভোটে জিতবেন শান্তুনু। হিন্দুস্তান টাইমস তিনি বলেন, 'এমনিতে যে যতই যা বলুক, এবারে ভোটে সিএএ-র প্রভাব কিছুটা তো থাকবেই। মানুষের নিঃশর্ত সিএএ চাই। এই নিয়ে মিটিং মিছিল হচ্ছে। শান্তুনু ঠাকরও বোঝাচ্ছে। দাবি করছে, দিল্লির নেতাদের সঙ্গে তিনি কথা বলছেন এই নিয়ে। সবই কি এত সোজা! ২০১৯ সালে শান্তুনু ঠাকুর যখন এলেন, নতুন মুখ। সবাই তাঁকে ভরে ভরে ভোট দ🌞িল। তবে এবার অনেকের ধারণা লড়াই কঠিন হতে পারে। যদি মমতাবালা ঠাকুর যদি দাঁড়াতেন, তাহলে অঙ্ক অন্য হত। তবে এখন আমার নিজের ব্যক্তিগত মতামত, বিশ্বজিৎ দাসের পক্ষে লড়াই কঠিন। ও তো আগেই বিজেপিতে ছিল। এখন দলের ওপরের মহল যেটা বুঝেছে করেছে। তবে এখন মনে হচ্ছে হয়ত বিজেপিই জিতে যেতে পারে। মমতাবালা ভোটে লড়লে অবশ্য অন্য কিছু হতে পারত।'
আরও পড়ুন: 'দেড় কোটি নয়, ৩-৬ লাখ আবেদন করবেন CAA-তে', দাব🌃ি অসমের মুখ্যমন্ত্রীর, অভিযোগ NRC নিয়ে
এদিকে ঠাকুরনগর স্টেশনের সামনেই তৃণমূলের পার্টি অফিসে বিকেলের দিকে কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করছিলেন বনগাঁ দক্ষিণের প্রাক্তন বিধায়ক সুরজিৎ কুমার বিশ্বাস। তিনি হিন্দুস্তান টাইমস বাংলাকে বলেন, 'এই সিএএ নিয়ে মানুষের মনে অনেক সংশয় রয়েছে। বিজেপি আগেরবার ভাওঁতা দিয়ে ভোট পেয়েছিল। তবে এবার মানুষ সেই ভাওঁতা ধরে ফেলেছে।' এদিকে স্থানীয় তৃণমূল নেত্রী শুক্লা বিশ্বাস বলেন, 'নিঃশর্ত নাগরিকত্ব হলে কে না চাইবে। তবে আমার বাবার সিটিজেনশিপ কার্ড আছে, আমার শ্বশুরের আছে। আমাদেরকেও দিলে ভালো। তবে যে সিএএ এসেছে, তা নিয়ে মানুষের মনে সংশয় রয়েছে।' তাঁর দাবি, সিএএ-র জন্যে বিজেপির ভোট সংখ্যা এবার কমতে পারে। তবে জয় কার হবে, এই নিয়ে স্পষ♊্ট ভাবে কোনও কিছু তিনি বলে🎉ননি।