পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনের মধ্যে যেগুলি একেবারে কার্যত নিশ্চিতভাবে তৃণমূল জিতবেই, তাদের মধ্যে অন্যতম হল উলুবেড়িয়া। এমনটাই মনে করেন অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ। ৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু অধ্য়ুষিত এই কেন্দ্রে তৃণমূলের সাজদা আহমেদ এবারও আছেন লড়াইয়ে। সামনে বিজেপির অরুণ উদয় পালচৌধুরী ও কংগ্রেসের আজহার মল্লিক। ২০ মে, পঞ্চম 🀅দফার নির্বাচনে ꩵভোটগ্রহণ হবে গ্রামীণ হাওড়ার এই কেন্দ্রে।
উলুবেড়িয়া লোকসভা কেন্দ্রটি হাওড়া জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিয়ে গঠিত। উলুবেড়িয়া উত্তর, উলুবেড়িয়া দক্ষিণ, শ্যামপুর, বাগনান, কল্যাণপুর, আমতা এবং উদয়নারায়ণপুর এই সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে বর্তমানে উলুবেড়িয়া লোকসভা কেন্দ্রটি গঠিত। এর মধ্যে উলুবেড়িয়া উত্তর কেন্দ্রটি তফশিলি জাতির জন্য সংরকဣ্ষিত। ১৯৭৭ সালে এই কেন্দ্রটি লোকসভা কেন্দ্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। হাওড়ার উলুবেড়িয়া অঞ্চলটি ১৯৭৭♌ সাল থেকেই ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী অর্থাৎ, সিপিআইএমের দখলে থাকে। ১৯৭৭ সালের নির্বাচনে জাতীয় কংগ্রেসের নির্মলেন্দু ভট্টাচার্যকে পরাজিত করেন সিপিআইএমের শ্যামাপ্রসন্ন ভট্টাচার্য। ১৯৮০ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত পরপর আটবার এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হন সিপিআইএমের নেতা এবং সারা ভারত কিষান সভার গুরুত্বপূর্ণ নেতা হান্নান মোল্লা। জাতীয় কংগ্রেসের প্রার্থীরা বারংবার পরাজিত হন হান্নান মোল্লার কাছে।
২০০৪ সালে তৃণমূলের প্রার্থী রাজীব বন্দোপাধ্যায়কে হারিয়ে শেষবারের জন্য হান্নান মোল্লা এই কেন্দ্র থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালে রাজ্য জুড়েই সিপিআইএমের ভোট শেয়ার বেশ খানিকটা কমে যায়। হাওড়ার এই কেন্দ্রটি হাত ছাড়া হয় সিপিআইএমের। হান্নান মোল্লা যেখানে ৪ লক্ষ ১৫ হাজার ৬০৫ টি ভোট পেয়েছিলেন, তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী সুলতান আহমেদ ৫ লক্ষ ১৩ হাজার ৩৮৯🅠টি ভোট পান। রাহুল চক্রবর্তী বিজেপির পক্ষ থেকে ৪২,০০০ ভোট পেয়েছিলেন। ২০১৪ সালের রাজ্যজুড়ে বিজেপির ভোট শেয়ার অনেকটা বাড়ে, তবে এই কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী সুলতান আহমেদ দু'লক্ষ এর বেশি ভোটে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজিত করেন। তাঁর মৃত্যুর পর স্ত্রী সাজদা ২০১৮-র উপনির্বাচনে তৃণমূলের টিকিটে জয়ী হন। সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনের ক্ষেত্রেও দেখতে পাওয়া যায় উলুবেড়িয়া কেন্দ্রটিতে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী সাজদা আহমেদ ২ লক্ষ ১৫ হাজারের বেশি ভোটে জয়যুক্ত হন।
এবারও সেই সাজদায় ভরসা তৃণমূলের। আগের থেকে তিনি অনেকটা সপ্রতিভ, ধীরে ধীরে রাজনীতিতে নিজের পরিচিতি গড়ে তুলছেন। তবে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়মিত উলুবেড়িয়াতে না আসার। যদিও সেই সব অভিযোগে আমল দিচ্ছেন না তিনি। অন্যদিকে রয়েছেন বিজেপির অরুণ, যিনি প্রায় ৩০ বছর ধরে প্রꦓথমে ছাত্র রাজনীতি ও পরে দলীয় রাজনীতি করেছেন। দীর্ঘদিনের পার্টিকর্মীকে জেতাতে খাটছে গেরুয়া শিবির। কিন্তু সাংগঠনিক দুর্বলতার জন্য অনেকটা পিছিয়ে বিজেপি। প্রচার করতে গিয়ে টোটো উলটে গিয়ে আহতও হয়েছেন অরুণ। স্বয়ং মোদী তাঁর হুইল চেয়ার ঠেলে দেন নির্বাচনী সভায়, যে ভিডিয়ো ভাইরালও হয়েছিল।কংগ্রেসের আজহার মল্লিক কতটা সংখ্যালঘু ভোট কাটতে পারেন, তার ওপরেই হয়তো জয়-পরাজয়ের মার্জিন ঠিক হয়ে যাবে।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের নিরিখে উলুꩲবেড়িয়া লোকসভার অন্তর্গত বিধানসভা ক্ষেত্রগুলিতে জনমত কোন দিকে ছিল, সেদিকে নজর রাখা যাক। উলুবেড়িয়া উত্তর কেন্দ্রটি থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের ডাক্তার নেতা নির্মল মাঝি ২১ হাজারের বেশি ভোটের মার্জিনে জয়ী হন। উলুবেড়িয়া দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী পুলক রায় ২৮ হাজারের বেশি ভোটে জয়ী হন। শ্যামপুর, বাগনান, 🐲আমতা প্রত্যেকটি কেন্দ্রেই রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে যথাক্রমে কালীপদ মণ্ডল, অরুনাভ সেন এবং সুকান্ত কুমার পাল জয়ী হয়ে বিধায়ক নির্বাচিত হন। উদয়নারায়ণপুর কেন্দ্রটিতে সমীর কুমার পাঁজা ১৩,৯০০-এর বেশি ভোটে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বিধানসভায় যান। বোঝাই যাচ্ছে যে ধারে ও ভারে অনেকটাই এগিয়ে সাজদা। কোনও অঘটন ঘটে কিনা, জানতে ৪ জুনের অপেক্ষা।