আপাত স্থিতিশীল থাকলেও বর্ষীয়ান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কিডনি পরিস্থিতি ভালো নেই। শনিবার রাতে এমনই জানা গিয়েছে হাসপাতাল সূত্রে। শনিবার রাতে বেলভিউ হাসপাতালে অভিনেতার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক দলের প্রধান অরিন্দম কর জানান, ‘ওজন হ্রাস ও কিছু অ্যান্টিবায়োটিকের প্রভাবে ওঁর কিডনি যথাযথ কাজ করছে না। এই কারণে ওঁকে অল্টারনেটেড ডায়ালিসিস পদ্ধতির অধীনে রাখা হয়েছে। কিডনি ঠিকঠাক কাজ করাতে হলে ওঁর শরীর থেকে অতিরিক্ত তরল বের করতে হবে ও কিডনি ব্যবস্থার উন্নতি সাধন করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার জন্য আমরা প্লাজমাফেরেসিস ও ট্র্যাকিওস্টমি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যা তাঁর পরিবারও সম্মতি দিয়েছে।’কোভিড পজিটিভ হওয়ার পরে গত ৬ অক্টোবর বেলভিউ হাসপাতালে ভরতি করা হয় অশীতিপর অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে। ১৪ অক্টোবর তিনি কোভিড নেগেটিভ পরীক্ষিত হলেও তাঁর স্নায়ুতন্ত্র কোভিড এনসেফ্যালোপ্যাথিতে আক্রান্ত হয়। এর জেরে গত দুই সপ্তাহ ধরে সৌমিত্রবাবুর শারীরিক পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে। বর্তমানে তিনি আচ্ছন্ন অবস্থায় রয়েছেন। তবে কয়েক বার তিনি চোখ খোলার চেষ্টা করেছেন।গতরাতে চিকিৎসক অরিন্দম কর জানিয়েছেন, ‘প্লাজমাফেরেসিস ওঁর পক্ষে নেওয়া সম্ভব ও নিরাপদ হবে কি না, তা খতিয়ে দেখছেন আমাদের নেফ্রোলজিস্ট ও হেমাটোলজিস্টরা। সোমবার আমরা এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। ওই দিনই সম্ভবত তাঁর ট্র্যাকিওস্টমি করা হবে যদি আগামী ২৪-৩৬ ঘণ্টা রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়া ও প্লেটলেটের সংখ্যা স্থিতিশীল থাকে।’প্লাজমাফেরেসিস প্রক্রিয়ায় রক্তকোষ থেকে প্লাজমা বিচ্ছিন্ন করা হয় যে কোনও দুই উদ্দেশে। প্লাজমার পরিবর্তে রক্তে স্যালাইন বা অ্যালবুমিন যোগ করা হয় এবং প্রক্রিয়াকরণের পরে তা ফের শরীরে প্রবেশ করানো হয়। ট্র্যাকিওস্টমি প্রক্রিয়ায় গলায় ছোট প্রবেশপথ তৈরি করে তার মাধ্যমে রোগীর শ্বাসনালীতে টিউব ঢোকানো হয়।চিকিৎসক অরিন্দম কর জানিয়েছেন, ‘ওঁর স্নায়ুতন্ত্রের অবস্থার উন্নতিও ঘটেনি, আবার অবনতিও হয়নি। তবে ফুসফুস উন্নতি করেছে। তিনি এখনও ভেন্টিলেশন সাপোর্টে রয়েছেন। লিভার মোটামুটি সক্রিয় রয়েছে। রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়ারও উন্নতি হয়েছে। তাঁর হিমোগ্রোবিন কাউন্ট স্থিতিশীল রয়েছে এবং বর্তমানে প্লেটলেটের সংখ্যা একলাখের বেশি রয়েছে।’গত দুই দিন সৌমিত্রবাবুর জ্বর আসেনি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তাঁর সংক্রমণের চিকিৎসাচালু রয়েছে। কালচার রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পরে শনিবার থেকে তাঁকে আর অ্যানটিবায়োটিক দেওয়া হচ্ছে না বলেও জানা গিয়েছে। গত ২ নভেম্বর সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শরীরে অভ্যন্তরীণ রক্তপাত রুখতে সফল ভাস্কুলার সার্জারি করা হয়।বর্ষীয়ান অভিনেতার সামগ্রিক সুস্থতার লক্ষ্যে চিকিৎসকরা প্রাথমিক ভাবে তাঁর পছন্দের সংগীত ও সাহিত্যপাঠ শোনার ব্যবস্থা করেন। দুই সপ্তাহ আগে তিনি মেয়ে পৌলমী বসুর সঙ্গে শেষ বার কথা বলেছিলেন।