‘কষ্ট-আনন্দ যেন অবিচ্ছিন্ন সাথি, আমাদের মর্ম আমাদের জীবনাতীত শিল্প…’। রাশিদ খানের মৃত্যুশোক এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি বাঙালি। এর মাঝেই ফের মৃত্যুসংবাদ সাহিত্যজগত থেকে। চলে গেলেন কবি দেবারতি মিত্র। নিজ❀ের ব🦋াড়িতেই এদিন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কবি। বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। পরিবারসূত্রে খবর, দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানান সমস্যায় ভুগছিলেন দেবারতি মিত্র। খ্যাতনামা কবি মণীন্দ্র গুপ্তের সহধর্মিনী দেবারতি, স্বামীর মৃত্যু হয়েছে আগেই। এবার চলে গেলেন দেবারতি।
আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম নক্ষত্র দেবারতি মিত্র। বালিকাবেলা থেকেই তাঁর কবিতা লেখা শুরু। ১৯৪৬ সালে কলকাতায় জন্ম হয়েছিল কবির। বাবা অজিতকুমার মিত্র এবং মা গীতা মিত্র। তাঁর প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকায়। সালটা ১৯৬৭। কখনও কলেজের গণ্ডি পার করেননি। আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রথমে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ যোগমায়া কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন দেবারতি এবং পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেক💯ে বাংলা ভাষা-সাহিত্য নিয়ে স্নাতকোত্তর পাশ করেন।
কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকে রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দের লেখনির পা🉐শাপাশি কিটস ও এলিয়টের কবিতার সঙ্গেও নীবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তাঁর। তিনি তার কবিতায় ক্ষেত্র বিশেষে প্রাণবন্ত রূপকের ব্যবহার করেছেন যা পাঠক মহলে প্রসংশিত হয়েছে। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অন্ধস্কুলে ঘন্টা বাজে’ প্রকাশিত হয় ১৯৭৪ সালে। তাঁর কাব্যভাষা নজর কেড়েছিল বাংলা সাহিত্যের গুণগ্রাহীদের। নারী মনের সূক্ষ্ম অনুভূতি ফুটে উঠত তাঁর লেখনিতে।
তিনি আটটি কবিতা সংকলন প্রকাশ করেছেন। কাব্যগ্রন্থগুলিতে তার নিজস্ব ভাষা ও দৃষ্টিভঙ্গিতে, বিষয় ও ܫশৈলি আধুনিক বাংলা সাহিত্যে এক স্বতন্ত্র স্থান অর্জন করেছে। তাঁর লেখা কাব্যগ্রন্থগুলির অন্যতম- ‘আমার পুতুল, ‘যুবকের স্নান’, ‘ভূতেরা ও খুকি’, ‘তুন্নুর কম্পিউটার’ এবং ‘থঙহোয়া ফুল সাদা’। লাইমলাইট এ♈ড়িয়ে চলতেই পছন্দ করতেন দেবারতি মিত্র।
নিভৃত সাধনাতেই বাংলা সাহিত্যে এক অনন্য জগত সৃষ্টি করেছেন দেবারতি মিত্র। পেয়েছেন অজস্র সম্মানও। যার মধ্যে রয়েছে ‘কৃত্তিবাস পুরস্কার’, ‘আনন্দ পুরস্কার’ ও ‘রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার’। ২০১৮ সালে স্বামী মণীন্দ্র গুপ্তের প্রয়াণের পর নিঃসঙ্গ জীবন কাটছিল দেবারতি দেবীর। স্বামীর জন্য তাঁর কলম চলেছে বারবার। নিজের ভাবনায় ভর 💫করে লিখেছেন, ‘অন্তরের চেয়েও গোপন একটা দেশ. আমরা স্বামী-স্ত্র꧋ী আবিষ্কার করেছি। স্বপ্নও তার কাছে আশ্চর্য’। সেই দেশের খোঁজেই বোধহয় এদিন রওনা দিলেন দেবারতি মিত্র।