ছোট পর্দায় হাতে খড়ি হলেও এখন তিনি বড় পর্দার প্রধান মুখ। 'সাতপাকে বাঁধা', 'ফাগুন বউ' থেকে শুরু করে সঞ্চালনা থেকে ওয়েব সিরিজ সবটার নিয়ে তিনি এখন বাঙালির ড্রয়িংরুমে। 'শেষ পাতা', 'কুলের আচার', 'পারিয়া'র সাফল্যের পর বিক্রম এখন♕ 'সূর্য'। পর্দার 'সূর্য'র মতোই বাস্তবেও অভিনেতা আশাবাদী। আর সেই আশায় ভর করে আজ তিনি সাফল্যের সিঁড়িতে। কিন্তু কেমন ছিল সেই পথ চলাটা? ছবির পোস্টারের প্রধান মুখ হয়ে উঠতে এতটা যে সময় লাগলো তাঁর, তা নিয়ে কী কোনও আক্ষেপ রয়েছে নায়কের? সে সব নিয়ে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার সঙ্গে খোলামেলা আড্ডায় ধরা দিলেন বিক্রম চট্টোপাধ্যায়।
'পারিয়া'র এত সাফল্যের পর 'সূর্য', আলাদা কোনও চাপ কাজ করেছিল কি?
বিক্রম: আমাদের প্রতিটা ছবি যে শুক্রবার মুক্তি পায়। সেই শুক্রবার একটা করে নতুন অধ্যায় লেখা হয়। প্রত্যেকটা ছবির পরিচালক, অভিনেতা-অভিনেত্রী সবটাই আলাদা হয়। তাই সব ছবিকেও আলাদা করে দেখা উচিত বলে আমি মনে করি। অনেক সময় ক্রিকেটাররা বলেন, যে যদি সেঞ্চুরি করার ব্যাগেজ নিয়ে তাঁরা মাঠে নামেন তাহলে তাঁরা আর খেলতেই পারবেন না। আ💞মাদের ক্ষেত্রেও বিষয়টা অনেকটা তাই। প্রতিটা কাজ আমি নতুন করে শুরু করি। কারণ আগের কাজের ব্যাগেজ নিয়ে অন্য কাজ শুরু করলে, তার প্রভাব আমার কাজের মধ্যেও পড়বে। ফলে আমি নিজেই ভালো করে পারফর্ম করতে পারব না। আর তাছাড়া 'সূর্য'র কাজ শুরু হয়েছিল 'পারিয়া' মুক্তি পাওয়া আগে। তাই 'সূর্য' 🤪করার সময় আলাদা করে এই বিষয়টা নিয়ে ভাবতে হয়নি। তবে 'পারিয়া'র গল্পটা সুন্দর, মানুষের মন ছুঁয়ে যাবে এটা আশা করেছিলাম।
ইন্ডাস্ট্রিতে এতগুলো বছর কাটানোর পর হালে বড় পর্দায় প্রধান মুখ হিসেবে দর্শকরা আপনাকে পাচ্ছেন, এই বিষয়টা আপনি কীভাবে দেখছেন?
বিক্রম: প্রত্যেকের জার্নিটা আলাদা হয়। আমার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নয়। আমার জীবনেও অনেক ওঠা পড়া এসেছে। গত দু'বছরে ছবির ক্ষেত্রে আমি নিজের একটা জায়গা তৈরি করে নিতে পেরেছি। দর্শকরা আমাকে এতটা ভালোবাসা দিয়েছেন। তাঁদের ভালোবাসা ছাড়া তো এই জায়গায় পৌঁছনো সম্ভব নয়। তাঁরা ಞআমাকে বড় পর্দায় দেখতে পছন্দ করছেন বলেই প্রযোজ﷽ক-পরিচালকরা আমাকে নিয়ে নতুন করে ভাবছেন। এটাই আমার অনেক বড় প্রাপ্তি।
আরও পড়ুন: ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে আদরের অনন্তের জন্য বিয়েতে𓆏 নিজে গয়নার ডিজাইন করলেন নীতা!
কিন্তু এতটা যে সময় লাগলো তাতে কোনও আক্ষেপ নেই?
বিক্রম: না, এটা নিয়ে আমার কোনও আক্ষেপ নেই। পরাণ জেঠুকে (পরাণ বন্দোপাধ্যায়) দেখি, উনি এত বছর পরে এসে এমন সমস্ত কাজ করছেন যেখানে উনি মুখ্য ভূমিকায় রয়েছেন। সেখানে আমি তো অনেক আগে এইসব পেলাম। ইন্ডাস্ট্রির বাইরে থেকে আসা একজন অভিনেতা হয়েও ক্যারি𝓀য়ারের শুরু থেকেই এতটা ভালোবাসা পেয়েছি, এটাই তো অনেক বড় বিষয়।
ইন্ডাস্ট্রির বাইরে থেকে আসা একজন অভিনেতার জন্য বিনোদন জগতে জায়গা করে নেওয়া কতটা কঠিন?
বিক্রম: আমাদের টলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে বর্তমানে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের বেশিরভাগই কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির বাইরে থেকে আসা মানুষ। দেব দা, জিৎ দা, অঙ্কুশ, মিমি, শুভশ্রী এঁরা তো সবাই বাইরে থেকে এসে নিজের জায়গা তৈরি করে নিয়েছেন। তাঁ🌊দের সেই সাফল্য আমাদের মত বহু মানুষকে সফল হওয়ার স্বপ্ন দেখꦕায়। স্বপ্ন পূরণের ইচ্ছে যোগায়। আমিও সেরকম ভাবেই নিজের কাজের মাধ্যমে চেষ্টা করছি একটা জায়গা তৈরি করার।
কিন্তু নায়ক হিসেবে নিজের জায়গা ধরে রাখাটা কতটা চ্যালেঞ্জিং?
বিক্রম: সেটা খুবই চ্যালেঞ্জিং। যে কোন জায়গাতে সাফল্য পাওয়া যতটা কঠিন, তার থেকেও সেই সাফল্য ধরে রাখাটা আরও বেশি কঠিন। ছবিতে কাজ করলে বা ছবির মুখ হয়ে কাজ করলে অনেকখানি অতিরিক্ত দায়িত্ব কাঁধে চাপে। সেই জায়গাটা আরও শেখার চেষ্টা করছি। একবার যখন দর্শকরা আমাদের ভালোবাসা দেন, তখন তাঁদের সেই ভালোবাসার মর্যাদা রাখাটা কিন্তু আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তাই যে সমস্ত কাজ করছি তার মান যাতে ঠিক থাকে স🧜েটা মাথায় রেখে, সততা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে নিজের কাজ করলে টিকে থাকাটা আরও একটু সহজ হয় বলে আমি মনে করি।
আরও পড়ুন: মা নীতা𒁃র ২০০ কোটির ব🉐াজুবন্ধ পরে বিয়ে করলেন অনন্ত, এর সঙ্গে রয়েছে মুঘলদের যোগ!
তাহলে 'সূর্য' কেন? কাজের ক্ষেত্রে রিমেক কেন বেছে নিলেন?
বিক্রম: একটা সময় ছিল যখন পাঁচটির মধ্যে চারটি বাংলা ছবিই হত দক্ষিণী ভাষার রিমেক। সেই সময় হলে হয়তো আমি করতাম না। তাছাড়া 'সূর্য' রিমেক নয়, অ্যাডপটেশন। এখানে চরিত্♋রায়ন অন্য ভাবে করা হয়েছে। নতুন নতুন দৃশ্য রাখা হয়েছে। দৃশ্যগত দিক থেকেও অনেক পার্থক্য রয়েছ♎ে। তাছাড়াও গল্পে বাংলার সংস্কৃতিকে তুলে ধরা হয়েছে। আর একটা বিষয় হল এই গল্পটা আশার গল্প। মানুষ তো আশা নিয়েই বেঁচে থাকে। আমি নিজেও বিশ্বাস করি আজ যাই ঘটে যাক না কেন, আগামিকাল একটা নতুন সূর্য উঠবে এবং তার আলোয় আলোকিত করবে চারিদিক। আর এই চরিত্রটা আমার কাছে তারই প্রতীক। তাই এই চরিত্রের অফার পেয়ে, আমার কাছে না বলার কোনও কারণ ছিল না।
আর তাছা🅘ড়া 'সূর্য'র প্রযোজক একজন বাঙালি, তিনি অন্য দুটি ভাষায় এই ছবি প্রযোজনা করেছিলেন। তাঁর ইচ্ছে ছিল এই গল্পের পজিটিভিটা নিজের মাতৃভাষায় মানুষদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার। সব মিলিয়ে এই কাজটা বেছে নেওয়া।
তাহলে কি আপনি স্রোতের বিপরীতে থাকতে পছন্দ করেন ?
বিক্রম: স্রোতে বিপরীতে আমি যে থাকতে পছন্দ করি তেমনটা কিন্তু নয়। কিন্তু একটা সময🎶় যখন বাংলাতে প্রচুর পরিমাণে রিমেক ছবি বানানো হত, তখন সেটা দেখতে দেখতে দর্শকদের মধ্যে বাংলা ছবির প্রতি একটা বিতৃষ্ণা তৈরি হয়েছিল। আবার এখন বাঙালি দর্শকরা বলেন, বাংলা ছবি মানেই কেবল ফেলুদা-ব্যোমকেশ আর না হলে পারিবারিক ছবি। আসলে একই রকম জিনিস যখন পর পর হয় তখন দর্শকরা আগ্রহ হারাতে শুরু করেন। তাই আমি একই রকম কাজ করে দর্শকদের খারাপ লাগা বাড়াতে চাই না, এগুলোর বাইরে গিয়ে আমি নতুন কিছু করতে চাই, যা দর্শকদের জন্যও ফ্রেশ হবে।
আপনার নতুন কী কী কাজ আসছে?
বিক্রম: স্বস্তিকা দিদির (স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়) সঙ্গে 'দুর্গাপুর জংশন' আসছে। এটা আমার পরবর্তী রিলিজ হতে চলেছে। তারপরে আসছে 'অমর সঙ্গী'। সেখানে আমি এবং সোহিনী (সোহ🅰িনী সরকার) কাজ করেছি। এটা একটা রোমান্টিক কমেডি।
আর মুম্বই নিয়ে কী বলবেন? আর মাধবন, ববি দেওলরা আপনাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন, এরপর কি তবে বলিউডে দেখতে পাবো আপনাকে?
বিক্রম: তাঁদের উদারতা যে তাঁরা আমার কাজকে এতটা সাপোর্ট করছেন। এটা আমার কাছে একটা উপরি পাওনা। কিন্তু এর সঙ্গে মুম্বইতে কাজ করার কোনও সম্পর্ক নেই। কারণ অভিনেতাদের হাতে তো কাজ দেওয়ার বিষয়টা থাকে না। আর শুধু বলিউড কেন? দক্ষিণী ছবি, মারাঠি ছবি বা যে কোনও ভাষার ছবি আমি করতে রাজি, য⛎দি তা আমার কেরিয়ারে নতুন ম𝕴াত্রা যোগ করে।
খাদানে কাজ করলেন না কেন?
বিক্রম: 'খাদান'-এর পরিচালকের সঙ্গে আমার অন্যান্য ছবি ও 'খাদান' নিয়ে কথা হয়েছিল। আমি দেবদার সঙ্গেও কথা বলেছিলাম। কিন্তু আমার নিজস্ব তো কিছু কাজের কথা আগে থেকেই পাকা ছিল, আর ওঁদের ছবিরꦺ শ্যুটিং শুরুর একটা তাড়াহুড়ো ছিল। ফলে আমি চরিত্রটার জন্য সময় বের করতে পারিনি। এছাড়াও আরও কয়েকটি কারণ ছিল। সেগুলো নিয়ে দেবদার সঙ্গে সরাসরি কথা বলি। তাতে ওঁর মনে হয় এই মুহূর্তে হয়তো এই চরিত্রটা করা আমার জন্য একটু সমস্যারই হবে। তবে আমি আশাবাদী যে নিশ্চয়ই এরপর অন্য কোনও কাজ আসবে যেখানে আমি ওঁর সঙ্গে কাজ করতে পারব।
এছাড়া একটা ছবিতে আমার যে লুক হয়, তার থেকে আর একটা ছবিতে লুকটা একটু অন্যরকম করার চেষ্টা করি। সেটার জন্য তো অনেকটা সময় দিতে হয়। তার মাঝে অন্য কোনও কাজ করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। যদি ভালো করে লক্ষ্য করেন দেখবেন 'পারিয়া'তে আমার যে লুক ছিল, আর 'সূর্য'-এ যে লুক কিন্তু তার মধ্যে কিন্তু অনেকটা পার্থক্য রয়েছে। সূর্য একটা আশার ছবি, ভালꩵোবাসার ছবি। তাই চরিত্রটার জন্য ন💛িজেকে তৈরি করতে হয়েছে।
আচ্ছা 'সূর্য'র জীবনে তো ভালোবাসার জন্য একটা ছুটে চলা আছে, আপনার জীবনে কী সেরকমটা কখন ঘটেছে?
বিক্রম: না, আমার মনে হয় না আমি কারোর জীবনে এতটাও গুরুত্বপূর্ণ, যে আমার জন্য সে এতটা করবে, বা তাঁকে আমার জন্য ছুটে বেড়াতে হবে। আর আমি ꦺচাইও না কেউ আমার জন্য এমনটা করুক। ভালো꧙বাসার জন্য ছুটে চলার মতো বিষয়গুলো অল্প বয়সেই রোমাঞ্চ জাগায়। কেউ আমার জন্য পাগল সেটাকে উপভোগ করে আনন্দ পাওয়া, বা আমি কাউকে পছন্দ করি সে হ্যাঁ বলবে কিনা, সেগুলো নিয়ে ভাবা এই বিষয়গুলো মানুষকে অল্প বয়সেই প্রভাবিত করে। কিন্তু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাবনায় অনেক বদল আসে, মন অনেক পরিণত হয়, তাই তখন আর ওই বিষয়গুলো উপভোগ্য থাকে না।
তাহলে এই সময় দাঁড়িয়ে আপনার কাছে প্রেমের সংজ্ঞাটা ঠিক কী?
বিক্রম: বন্ধুত্ব, প্রত্যেকের জীবনে একটা এমন মানুষ প্রয়োজন যে তাঁর দুঃখের দিনে, আনন্দের দিনে, কঠিন সময়ে পাশে থাকে। তার জন্য বিশেষ কিছুই তাঁকে করতে হবে না। শুধু আমার পাশে থাকলেই হবে। দিনের শেষে বাড়ি ফিরে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারব। জীবনে যতই খারাপ কিছু হোক, সে সব সময় আমার সঙ্গে থাকবে এটুকুই আমার চাওয়া। তার বাইরে কিছু না। আসলে প্রেম মানে শুধু ঘনিষ্ঠতা নয়, তা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ফিকে হয়ে যায়। কিন্তু বন্ধুত্ব সম﷽য় সঙ্গে আরও বেশি গাঢ় হয়।
আপনার জীবনে কি সে রকম কোনও বিশেষ বন্ধু রয়েছেন?
বিক্রম: না, এই মুহূর্তে সেরকম কেউ নেই। থাকলে নিশ্চয়ই🌠 সবাই জানতে পারতেন।
সামনেই তো পুজো আসছে, এবার কোথায় ঘুরতে যাচ্ছেন?
বিক্রম: কাজের ব্যস্ততা একটু রয়েছে, ফলে সেই দিকটা সবটার নাღ মিটিয়ে এক্ষুনি ঘোরার কথা খুব একটা ভাবতে পারছি না। আমি প্রত্যেক বছরই পুজোতেই বাইরে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার চেষ্টা করি, কিন্তু এই বছরটা একটু অনিশ্চিত। কারণ কাজ কীরকম কী রয়েছে তার ওপর সমস্তটা নির্ভর করছেꦑ।