উস্তাদ রাশিদ খানের অকাল মৃত্যুতে শোকেকাতর তাঁর গুণমুগ্ধরা। গত মঙ্গলবার দুপুরে জীবনযুদ্ধে ইতি টেনে অমৃতলোকে পাড়ি দিয়েছেন ভারতীয় ধ্রুপদী সঙ্গীতের উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি নিজে যেমন সঙ্গীতের সাধক ছিলেন, তেমনই আজীবন সঙ্গীত সাধনা শিখেয়েছেন হাজারো ছাত্রছাত্রীকে। সেই তালিকায় রয়েছেন ইন্ডিয়ান আইডলের চলতি সিজনের অন্যতম প্রতিযোগী দীপন মিত্র। আরও পড়ুন-'ভাইটা আমার চলে গেল…', একদিন রাশিদকে ভꦬাইফোঁটা দিতে শুরু করেছিলেন, স্মৃতিতে ভাসলেন হৈমন্তী শুক্লা
বাংলার ছেলে দীপনের গানে মুগ্ধ গোটা দেশ। শ্রেয়া ঘোষাল থেকে সঞ্জয় দত্ত, মহেশ ভাট থেকে করিশ্মা কাপুরের প্রশংসা কুড়িয়েছেন দীপন। প্রতিযোগিতার মাঝেই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে তাঁর। ছেলেবেলা থেকে রাশিদ খানের কাছে গান শিখছেন দীপন। রাশিদ খꦺান তাঁর, ‘গুরুজি’, তাঁর পিতৃতুল্য। বাবা হারানোর যন্ত্রণায় কাতর দীপন ইনস্টাগ্রামে হৃদয় নিংড়ে লেখেন-'গুরুজি এখনও ভাবতে পারছি না তুমি নেই… আমার আরেক বাবা আমাকে ছেড়ে যে এভাবে চলে যাবে আমি কল্পনাতেও ভাবতে পারিনি… তোমার কাছে প্রথম সেই সা টুকু বলা থেকে শুরু করে সব রাগ-বন্দিশ-ঠুমরিগুলোর কথা মনে পড়ে যায়…. যাঁর জন্য আমি গানের মাহাত্ম্য, মিউজিক কী জানতে পেরেছি, বুঝতে পেরেছি… আজকে যতটুকু গাইতে পার𝔍ছি বা মিউজিক করতে পারছি সেটা তোমার আর্শীবাদে….'।
২০০৯ সালে প্রথমবার ‘ভগবান’ রাশিদ খানের দর্শন পেয়েছিলেন দীপন। ভগবান ছাড়া এমন দরাজ গলা আরও কারুর হতে পারে না, কিশোরবেলায় বিশ্🧸বাস ছিল দীপনের। উস্তাদজি তাঁর কাছে ছিলেন রক্তমাংসের ভগবান। দীপন লিখেছেন, ‘সালটা ২০০৯… প্রথম SBMT-এ (শাকরি বেগম মেমোরিয়াল ট্রাস্ট) পা রাখা… প্রথমবার তাঁর দেখা পাওয়া… যার আওয়াজ শুনে ছোটবেলায় ভাবতাম এইরকম আওয়াজ হয় নাকি, এমন দরাজ গলা, এমন জোরালো আওয়াজ তো ভগবানেরই হতে পারে একমাত্র… তারপর যখন সামনে থেকে দেখলাম, শুনলাম,তখন বিশ্বাস হল যে না ইনি ভগবান রূপে সেই মানুষ যার এমন মধুর কন্ঠস্বর শুনে আমি পাগল হই….’।
পরিবারের আর্থিক দুরাবস্থার সময়ও দীপনকে আগলে রেখেছিলেন রাশিদ খান। তিনি লেখেন, 'আমার বাবার অ্যাক্সিডেন্টের সꦅময় তোমার পাশে দাঁড়ানো, আমাদের আর্থিক প্রবলেমেও তোমার বলে উঠা আমার বাবাকে যে দীপন কে গান ছাড়িও না, দীপনকে আমি নিজের হাতে তৈরি করব। ওকে আমি শেখাব- এর চেয়ে বেশি কিছু আমার আর কী পাওয়ার থাকতে পারে! ভগবানে🧸র কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ যে আমি এমন গুরুজিকে পেয়েছি এমন সাক্ষাৎ দেবতাকে সামনে থেকে দেখেছি…. কোনও দিন ভুলবো না তোমার দেখানো পথ… কোনও দিনও ভুলব না তোমার বাণী- ‘প্রাণ গেলেও যেন সুর না যায়…’। এই পৃথিবীতে তো তোমাকে গায়ক রূপে চেনে, কিন্তু তুমি যে কী রকম মাটির মানুষ ছিলে, সেটা তোমার সংস্পর্শে যারা এসেছে তারাই জানতে পেরেছে এবং তারা তোমার স্মৃতি কোনওদিন ভুলতে পারবে না… আজকে খুব তোমায় দেখতে ইচ্ছা করছে, কিন্তু আজ যে দেখতে পাব না এটাই তো বিশ্বাস হচ্ছে না… যেখানো আছো ভালো থেকো, আর আমার উপর সুরের বৃষ্টি করতে থেকো। শতকোটি প্রণাম তোমার চরণে…'।
রাশিদ খানের মৃত্যুতে কার্যত বাক্য়হারা দীপন। শেষে যোগ করেন, ‘আমি আমার গুরু, আমার অভিভাবক, আমার অনুপ্রেরণাকে হারালাম। তাঁর সঙ্গে আমারও একটা অংশ﷽ চলে গেল… ’।