ফেলুদার গল্পে ছবি আঁকতে গিয়ে প্রায় প্রথম থেকেই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে মাথায় রেখেছিলেন লেখক-পরিচালক সত্যজিৎ রায়। ফেলুদা ভক্তরা সকলেই সে কথা বিশ্বাস করেন তো বটেই, স্বয়ং সত্যজিৎপুত্র সন্দীপ রায়ও এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য আলোকপাত করেছেন। জানিয়েছেন, সৌমিত্রকে বসিয়ে তাঁর স্কেচ করতেন সত্যজিৎ।মজার কথা, কিশোর গোয়েন্দাকাহিনীর জনপ্রিয় নায়ক প্রদোষচন্দ্র মিত্র ওরফে ফেলুদার চরিত্রে যে তাঁকে নেওয়া হতে পারে, সে কথা কখনও ভাবেনইনি স্বয়ং সৌমিত্র। একাধিক সাক্ষাৎকারে বহু বার জানিয়েছেন, গোয়েন্দা গল্পের সঙ্গে থাকা স্কেচ দেখে তাঁর বরং সত্যজিৎ রায়ের অবয়বের কথাই প্রথমে মনে হয়েছিল। সত্যজিৎ পরিচালিক ফেলুদার প্রথম উপন্যাস ‘সোনার কেল্লা’র চলচ্চিত্রায়ণের সময় অবধারিত ভাবে নিজের প্রিয় অভিনেতাকে ডেকে পাঠান স্রষ্টা। নামভূমিকায় অভিনয় করার কথা জেনে উত্তেজিত হন সৌমিত্র। সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, ছোটদের জন্য ছবি তৈরি করার কথা জেনে তাঁর মনে হয়েছিল নিজের সন্তানদের কথা। তাদের জন্য কিছু সৃষ্টি করতে গিয়ে তিনি খুশি হয়েছিলেন। পরবর্তীকালে বিভিন্ন পত্রিকায় ও পরে বই আকারে প্রকাশিত ফেলুদার গল্পে প্রধান চরিত্রের চেহারায় অবিকল সৌমিত্রের দেহভঙ্গি ও স্বকীয়তা ফুটিয়ে তোলেন সত্যজিৎ। তাঁর শাল জড়ানোর স্টাইল, সিগারেটে টান মারার ভঙ্গি, ট্রাউজার্সের উপরে পাঞ্জাবি পড়ার অভ্যাস একে একে ধরা পড়ে অলংকরণে। এ ভাবেই জয় বাবা ফেলুনাথ ছবি মুক্তি পাওয়ার আগেই গোয়েন্দা ফেলুদা এবং তাঁর সেলুলয়েড রূপকার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় পাঠক ও দর্শকের হৃদয়ে পাকা আসন তৈরি করে নেয়।সত্যজিতের প্রয়াণের পরে রুপোলি পর্দায় ফেলুদাকে নিয়ে একাধিক ছবি নির্মাণ করেছেন সত্যজিৎ রায়ের ছেলে সন্দীপ রায়। কিন্তু বয়সজনিত কারণে সেই সব ছবিতে ফেলুর চরিত্রে দেখা যায়নি সৌমিত্রকে। তাঁর পরিবর্তে দেখা গিয়েছে সব্যসাচী চক্রবর্তী, আবির চট্টোপাধ্যায় ও একটি এখনও মুক্তি না পাওয়া ছবিতে দেখা যাবে টোটা রায়চৌধুরীকেও। কিন্তু আপামর বাঙালির মনে ফেলুদা হিসেবেই রুপোলি পর্দায় রয়ে গিয়েছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। আর বইয়ের পাতায় থাকা অলংকরণে বরাবরের মতো রয়ে গেলেন বাংলা ছবির জগতের ‘রাজা লিয়ার’।